-->
শিরোনাম

হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ১২৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

নিজস্ব প্রতিবেদক
হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ১২৯তম জন্মবার্ষিকী আজ

অবিভক্ত বাংলার তৎকালীন মুখ্যমন্ত্রী ও পাকিস্তানের সাবেক প্রধানমন্ত্রী হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর ১২৯তম জন্মবার্ষিকী আজ। ১৮৯২ সালের ৮ সেপ্টেম্বর ভারতের পশ্চিমবঙ্গের মেদিনীপুর জেলায় তিনি জন্মগ্রহণ করেন।

সোহরাওয়ার্দীর পিতা স্যার জাহিদ সোহরাওয়ার্দী ছিলেন কলকাতা হাইকোর্টের বিচারক। অনেকটা পারিবারিক ঐতিহ্য মেনেই তিনি আইন পড়তে যান ইংল্যান্ডে। অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আইনশাস্ত্রে ডিগ্রি লাভ করেন এবং আইনজীবী হিসাবে কিছুদিন কাজও করেন ব্রিটেনে। ১৯২০ সালে ভারতে ফিরে রাজনীতিতে যুক্ত হন। মুসলিম লীগকে শক্ত ভিতের ওপর দাঁড় করানোয় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন তিনি।এছাড়া, উপমহাদেশের প্রতিভাবান এই রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব ও সংগঠক হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী গণতন্ত্র ও মানুষের অধিকার আদায়ের সংগ্রামে অবিস্মরণীয় ভূমিকা পালন করে গেছেন। সাংবিধানিক শাসনে বিশ্বাসী ও বাস্তববাদী রাজনীতিবিদ হিসেবেও তিনি এ দেশের গণসংগ্রামের ইতিহাসে সুপরিচিত।

হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দী ৮ সেপ্টেম্বর ১৮৯২ সালে কোলকাতার এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে জন্মগ্রহণ করেন। শেখ শাহাবউদ্দীন সোহ্রাওয়ার্দী ছিলেন হোসেন শহীদ সোহ্রাওয়ার্দীর প্রতিতামহ, একজন খ্যাতিমান সাধক পুরুষ।

এই পরিবারের নিবাস ছিল বর্তমান ইরাকের বাগদাদে। সেখানে অর্থাৎ বাগদাদের মাটিতে এই মহান সাধকের সুরক্ষিত মাজার তার সুখ্যাতির পরিচয় বহন করছে। বাগদাদে ছিল সোহ্রাওয়ার্দী পরিবারের আদি নিবাস। মোগল শামনামলের শেষের দিকে সোহ্রাওয়ার্দী পরিবারের প্রতিষ্ঠা বাংলাদেশের মেদিনীপুর জেলায় বিশাল ভূ-সম্পত্তির মালিকানা লাভ করেন এবং স্থানীয়ভাবে বসবাস করতে থাকেন। কোলকাতায় ব্রিটিশ শাসন প্রতিষ্ঠা লাভের পর সোহ্রাওয়ার্দী পরিবারের অন্যতম বাসস্থান হয় কোলকাতা। সোহ্রাওয়ার্দী বংশের প্রতিষ্ঠাতা জনাব জিয়াউদ্দীন আবুল নজিব, আবদুল কাহির ইবনে আবদুল্লাহ খলিফা আবু বকরের বংশধর ছিলেন। পাক-ভারতের মুসলিম সংস্কৃতির পুরোধা হিসেবে এই পরিবারের সুনাম ছিল প্রচুর। শহীদ সোহরাওয়ার্দীর দাদা হোসেন তৎকালীন ভারতের একজন খ্যাতিমান আইনজীবী ছিলেন। তার নানা হযরত মাওলানা ওবায়দুল্লাহ আলওয়ার্দী ছিলেন পারসি সাহিত্যে এমএ ও ভাষাতত্ত্বের একজন সুপণ্ডিত। আরবি ভাষায়ও তার অসাধারণ পাণ্ডিত্য ছিল। এই পাণ্ডিত্যের স্বীকৃতিস্বরূপ তিনি ফোর্ট উইলিয়াম থেকে প্রশংসাপত্র লাভ করেছিলেন। তার পিতা স্যার জাহিদ সোহ্রাওয়ার্দী। তিনি কোলকাতা হাইকোর্টের একজন সুপরিচিত বিচারপতি ছিলেন ।

সোহরাওয়ার্দী তার গৌরবোজ্জ্বল রাজনৈতিক জীবনে বিভিন্ন সময় নানা গুরুত্বপূর্ণ পদে অধিষ্ঠিত ছিলেন। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছেÑ ১৯২৪ সালে কলকাতা করপোরেশনের ডেপুটি মেয়র, ১৯৩৭ সালের নির্বাচনোত্তর ফজলুল হক কোয়ালিশন মন্ত্রিসভার শ্রম ও বাণিজ্যমন্ত্রী, ১৯৪৩-৪৫ সালে খাজা নাজিমুদ্দিনের মন্ত্রিসভায় বেসামরিক সরবরাহ মন্ত্রী, ১৯৪৬-৪৭ সালে অবিভক্ত বাংলার মুখ্যমন্ত্রী, পাকিস্তান আমলে ১৯৫৪-৫৫ সালে মোহাম্মদ আলীর মন্ত্রিসভার আইনমন্ত্রী এবং ১৯৫৬-৫৭ সালে ১৩ মাস পাকিস্তানের প্রধানমন্ত্রী হিসেবে দায়িত্ব পালন।

১৯০৬ সালে প্রতিষ্ঠিত মুসলিম লীগকে বাংলায় সুপ্রতিষ্ঠা এবং এর অগ্রযাত্রায় সোহরাওয়ার্দীর ভূমিকা ছিল অসামান্য। ১৯৪৯ সালের ২৩ জুন তৎকালীন পাকিস্তানের প্রথম ও প্রধানবিরোধী দল আওয়ামী মুসলিম লীগ (পরবর্তীকালে আওয়ামী লীগ) প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রেও তার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল। পরে গণতন্ত্রকামী বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠন এবং ১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত পাকিস্তানের প্রথম প্রাদেশিক পরিষদের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের ঐতিহাসিক বিজয়ের পেছনেও তার গুরুত্বপূর্ণ অবদান ছিল।

পাকিস্তানের ১৯৫৬ সালের সংবিধান প্রণয়নেও সোহরাওয়ার্দী তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। পাকিস্তানে গণতন্ত্র পুনর্প্রতিষ্ঠার জন্য ন্যাশনাল ডেমোক্র্যাটিক ফ্রন্ট (এনডিএফ) গঠন করে তিনি ১৯৬২-৬৩ সালে আইয়ুববিরোধী সম্মিলিত জোটের আন্দোলনে মুখ্য ভূমিকা পালন করেন। ১৯৬৩ সালের ৫ ডিসেম্বর এই মহান নেতা ইন্তেকাল করেন।

দিনটি উপলক্ষে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী স্মৃতি পরিষদসহ বেশ কয়েকটি সংগঠন আজ সকালে রাজধানীর দোয়েল চত্বরের তিন নেতার মাজারে সোহরাওয়ার্দীর কবরে পুষ্পমাল্য অর্পণ, কবর জিয়ারত, ফাতিহা পাঠ, দোয়া মাহফিল ও আলোচনা সভার আয়োজন করেছে।

 

ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version