-->
শিরোনাম

নতুন পথচলা: শিক্ষাখাতের জন্য কিছু জরুরি প্রস্তাবনা

আবুবকর হানিপ
নতুন পথচলা: শিক্ষাখাতের জন্য কিছু জরুরি প্রস্তাবনা

আমাদের প্রিয় বাংলাদেশের তারুণ্যের চেতনা, তারুণ্যের শক্তি আজ বিশ্বের সকলের সামনে উন্মোচিত। তারুণ্যই যে এনে দিতে পারে কাঙ্ক্ষিত পরিবর্তন তাতে আর সন্দেহমাত্র নেই। এক নতুন বাংলাদেশে নতুন প্রেক্ষাপট আমাদের সামনে উন্মুক্ত করেছে নতুন চলার পথ। আমরা আর পেছনে ফিরে তাকাতে চাই না। আমরা ওই পথে হেঁটে যেতে চাই বহুদূর। যে পথ বৈষম্যহীনতার, যে পথ অধিকারের, আর সর্বোপরি যে পথ সঠিক। এ পথ রচনাই ছিল আমাদের সাম্প্রতিক ছাত্র আন্দোলনের মূল লক্ষ্য। একটি পক্ষপাতমূলক ব্যবস্থার সংস্কার চেয়েই তাদের ওই আন্দোলনের সূত্রপাত। আর তাতে তাদের প্রধানতম দাবিই ছিল মেধার সর্বোচ্চ ও সঠিক মূল্যায়ন।

মেধার সঠিক বিকাশ, সঠিক ব্যবহার এবং সঠিক পথে পরিচালনা করার অদম্য আগ্রহ তাদের যুদ্ধে নামিয়েছে। তারা ওই যুদ্ধ জয় করে নিয়েছে। এখন আমাদের কাজই হচ্ছে শিক্ষার্থীদের ওই পথ বাতলে দেওয়া যা তাদের এই অর্জনকে সত্যিকারের অর্থেই ফলপ্রসূ করে তুলবে। যার যেখানে যতটুকু সুযোগ রয়েছে শিক্ষার্থীদের এই চাওয়াকে পূরণ করার পথে ভূমিকা রেখে চলা। সেটা করতে হবে নিঃস্বার্থভাবেই। আর সেটাই এই নিবন্ধের প্রতিপাদ্য।

আমরা যখন শিক্ষার কথা বলি— চোখের সামনে হয়তো ভেসে ওঠে মক্তব কিংবা স্কুলে শিক্ষার্থীরা ঢুলে ঢুলে নামতা শিখছে কিংবা পড়া মুখস্ত করছে। সেটা আমাদের মতো জেনারেশন এক্স-দের স্মৃতি। কিন্তু মিলিয়েনিয়ালস কিংবা যারা আজকের জেনারেশন-জুমারস সংক্ষেপে জেন-জি তারা শিক্ষার এই ধরণটিকে হয়তো চেনেই না। আর চেনার প্রয়োজনও নেই। তারা শিখে নেবে তাদের মতো করে। কিন্তু আমাদের যেটা করতে হবে তা হচ্ছে, তাদের জন্য, তাদের মতো শিক্ষাপদ্ধতিই সামনে এনে দিতে হবে। সেখানে সনাতনি ধারায় পাঠ শেষ করে শিক্ষার্থীরা কাজের জন্য ধর্ণা দিতে দিতে শুকতলি খোয়াবে না। বরং আমরা এমন এক শিক্ষা ব্যবস্থার কথা বলব যেখানে তারা শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকেই তৈরি হয়ে বের হবে। প্রস্তুত থাকবে কাজের জন্য। প্রস্তুত থাকবে সরাসরি অর্থনীতিতে অবদান রাখার জন্য।বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে শিক্ষাব্যবস্থা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ রয়েছে। তবে এই নিবন্ধে আমার আলোচনা বিশ্ববিদ্যালয়— তথা উচ্চ শিক্ষা পর্যায়ে সীমিত রাখব।

এজন্য আমরা এমন একটি শিক্ষাব্যবস্থার কথা বলছি যার রয়েছে ট্রিপল মিশন— ডিগ্রি, স্কিল অ্যান্ড ক্যারিয়ার। মানে হচ্ছে শিক্ষার্থীরা এমন এক শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে যাবে, যেখানে তাদের ডিগ্রি অর্জন তো হবেই, পাশাপাশি তৈরি হবে কিছু দক্ষতা। আর সর্বোপরি সে প্রস্তুত হবে একটি ভালো ক্যারিয়ার গঠনের জন্যও। আবারও বলি সনাতনি শিক্ষাব্যবস্থা একজন শিক্ষার্থীকে কাজের বাজারে কেবল ঠেলেই দিতে পারে, তৈরি করে দিতে পারে না। যা তাদের যথেষ্টই ভোগায়। তারা কাজের বাজারে ফ্রেশার হয়ে ঢোকে। আর দীর্ঘ প্রচেষ্টায় নিজেদের তৈরি করে কাজের জন্য উপযোগী করে তুলতে। ফলে সময় পার হয়ে যায় অনেকটা। অনেকেই সফল হয়। আবার অনেকেই স্রেফ হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়ে। নয়তো বেছে নেয় সাদামাটা জীবনের পথ। ফলে সমাজে মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্তের সংখ্যা যেমন বাড়ে, তেমনি বাড়তে থাকে হতাশাগ্রস্ত যুবসমাজ। আমরা ওই সমস্যারই সমাধান খুঁজে নিতে চাই শিক্ষাব্যবস্থার মধ্য দিয়ে। যে প্রচেষ্টার অংশ হিসেবে আমরা যুক্তরাষ্ট্রে এরই মধ্যে একটি বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা করছি। ওয়াশিংটন ইউনিভার্সিটি অব সায়েন্স অ্যান্ড টেকনোলজি। ট্রিপল মিশন— ডিগ্রি, স্কিল ও ক্যারিয়ার এই তিনটি ধারণাকে সামনে রেখেই যার পথ চলা।ধারণাটি অতি প্রাসঙ্গিক এবং সাম্প্রতিক। আর এর তিনটি মিশনই আলাদাভাবে বিশদ ব্যাখ্যার দাবি রাখে।

প্রথমেই আসা যাক ডিগ্রির কথায়। প্রচলিতভাবে, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো যে ডিগ্রি দিয়ে আসছে, ডিগ্রি সেটাই। তাতে শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের সুযোগটাই শুধু থাকে। শিক্ষাক্রমের অন্তর্ভুক্ত কিছু বই পাঠ আর শিক্ষকের লেকচারভিত্তিক জ্ঞানার্জনই এর মূল কাঠামো। গবেষণাগারে কিংবা পরীক্ষাগারে প্রাপ্ত ব্যবহারিক দক্ষতা অর্জনের সুযোগ কিছুটা থাকলেও তা অনেক ক্ষেত্রেই বাস্তবভিত্তিক কিংবা সময়োপযোগী হয় না। শিক্ষা শেষে শিক্ষার্থীরা একটি ডিগ্রি নিয়ে ঘরে ফেরে। এই ডিগ্রি অত্যন্ত প্রয়োজনীয়। তাতে সন্দেহমাত্র নেই। কিন্তু তা কি আমাদের শিক্ষার্থীদের যথেষ্টভাবে তৈরি করতে পারছে তাদের ভবিষ্যতের পথ চলার জন্য? নিশ্চয়ই নয়। সেখানেই গলদ। আমরা মনে করি, শিক্ষাক্রম কিংবা পাঠ্যক্রমেই আনতে হবে পরিবর্তন। তাত্ত্বিক ধারণার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের পাঠদানের অংশ করে নিতে হবে শিল্প ও শিল্পভিত্তিক জ্ঞানকেও। ফলে পাঠক্রমটি অবশ্যই শিল্পভিত্তিক হতে হবে এবং শিল্পের চাহিদার ওপর ভিত্তি করে নিয়মিত বিরতিতে এটি হালনাগাদ করা এবং প্রয়োজনে ঢেলে সাজানো উচিত। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে শিল্পে যে পরিবর্তন আসে, ওই পরিবর্তনের সঙ্গে তাল মিলিয়ে পাঠ্যক্রমের আপডেট করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

একটি ডিগ্রি অর্জনে একটি বড় সময় যেমন চলে যায়, তেমনি এতে খরচও হয় একটি বড় অংকের অর্থ। কিন্তু এই যে অর্থের বিনিয়োগ, তার যথার্থ রিটার্ন আসছে কি না— সেটাই এখন দেখার বিষয়। কিন্তু আগেই বলেছি, এ ধরনের সনাতনি শিক্ষাব্যবস্থা শিক্ষার্থীদের ডিগ্রি দেয় ঠিকই কিন্তু তাদের কর্মজগতের জন্য তৈরি করে না। পরিবর্তিত পরিস্থিতি এবং দীর্ঘসময় পরিক্রমায় এখন এটা স্পষ্ট যে কাজ পেতে হলে প্রয়োজন দক্ষতা। যা এমন শিক্ষার্থীদের থাকে না। বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে কর্মজীবন এবং শিল্প-ভিত্তিক দক্ষতার

 

 ভোরের আকাশ/মি

মন্তব্য

Beta version