-->
শিরোনাম

বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব

(পূর্ব প্রকাশের পর)

রাশেদুল হক রঞ্জন
বাংলাদেশে সমাজতান্ত্রিক গণতান্ত্রিক আদর্শের বিকাশ এবং এর প্রভাব

৭. গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে প্রযুক্তির ব্যবহার

প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণের অন্তর্ভুক্তি : জনসাধারণের প্রযুক্তিগতভাবে পরামর্শ প্রদান এবং প্রযুক্তি-সক্ষম অংশগ্রহণের লক্ষ্যে আইনি ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা। সরকারি সেবাসমূহ প্রদান ও গ্রহনের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা এবং জনসম্পৃক্ততা বৃদ্ধিতে প্রযুক্তির ব্যবহার নিশ্চিত করা।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ

প্রযুক্তিগত শাসন আইন : ভোটিং, জনমত গ্রহণ এবং জনসম্পৃক্ততার জন্য প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল platform সমূহের বাস্তবায়ন এবং ব্যবহারের জন্য আইনি নির্দেশিকা প্রণয়ন করা। সরকারি সেবায় প্রযুক্তির ব্যবহার উৎসাহিত করা যাতে শাসনব্যবস্থা আরও স্বচ্ছ এবং সকলের জন্য সহজলভ্য হয়।

তথ্য সুরক্ষা আইন : গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণে প্রযুক্তির ব্যবহারকে উৎসাহিত করার সময় নাগরিকদের তথ্যের গোপনীয়তা রক্ষার জন্য ব্যাপক তথ্য সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা। নিশ্চিত করতে হবে যে, শাসন ব্যবস্থায় প্রযুক্তিগত উদ্যোগসমূহ বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে নাগরিকদের ব্যক্তিগত তথ্য সুরক্ষা ও সম্মান বজায় থাকে।

নীতিগত উদ্যোগসমূহ

ই-শাসন নীতিসমূহ : শাসনব্যবস্থায় প্রযুক্তির সঠিক ব্যবহার পৃষ্ঠপোষণের জন্য নীতি প্রণয়ন করা, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অনলাইন পরামর্শমূলক platform সমূহ, ডিজিটাল ভোটিং ব্যবস্থা এবং প্রযুক্তিগত সম্পৃক্ততায় ব্যবহৃত অন্যান্য সরঞ্জামসমূহের সমন্বিত ব্যবহার। এই ব্যবস্থার উদ্দেশ্য প্রযুক্তিগত ব্যবহারের মাধ্যমে সরকারী কার্যক্রমে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা এবং সরকারী সেবাসমূহের সহজলভ্যতা বৃদ্ধি করা।

সরকারি শাসনকার্যে প্রযুক্তিগত বা ডিজিটাল platform সমূহের ব্যবহার : সরকারি শাসনকার্যে নাগরিক সম্পৃক্ততা বাড়ানোর জন্য ডিজিটাল platform গড়ে তোলা এবং বাস্তবায়ন করা। এতে অন্তর্ভুক্ত থাকবে অনলাইন ভোটিং সিস্টেম, ডিজিটাল টাউন হল এবং জনপরামর্শমূলক platform সমূহ যা নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে।

নাগরিক পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া : সরকারি কর্মকাণ্ডের উপর নাগরিআদের পর্যবেক্ষণ প্রক্রিয়া প্রতিষ্ঠা করা, যেমন জনসাধারণের অডিট কমিটি এবং স্বচ্ছতার platform। সরকারী কার্যক্রম পর্যবেক্ষণ এবং মূল্যায়নে জনগণের সম্পৃক্ততা উৎসাহিত করা।

৮. মানবাধিকার এবং মৌলিক স্বাধীনতা

অনুচ্ছেদ ৩২ [জীবন ও ব্যক্তি স্বাধীনতার অধিকার]: ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা বৃদ্ধি : অনুচ্ছেদ ৩২ সংশোধন করে ব্যক্তিগত স্বাধীনতার সুরক্ষা বাড়ানো। সমস্ত আইনকে আন্তর্জাতিক মানবাধিকার মানের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার মাধ্যমে নাগরিকদের স্বাধীনতা এবং স্বাধিকার রক্ষা নিশ্চিত করা।

সংখ্যালঘু অধিকার সুরক্ষা : অনুচ্ছেদ ২৩ক/১৯ -এ সংশোধনী অন্তর্ভুক্ত করে জাতিগত, ধর্মীয় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার রক্ষার ব্যবস্থা করা। সরকারে এবং সকল ধরনের সরকারি কার্যক্রমে সকলের সমান সুযোগ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করা, যাতে সকলের অন্তর্ভুক্তি এবং সকল ধরনের জাতিগত, ধর্মীয়, সাংস্কৃতিক ও অন্যান্য বৈচিত্র্য প্রাধান্য পায়।

আইনগত পরিবর্তনসমূহ

সংখ্যালঘু অধিকার সুরক্ষা আইন : জাতিগত, ধর্মীয় এবং অন্যান্য সংখ্যালঘুদের অধিকার সুরক্ষায় নির্দিষ্ট আইন প্রণয়ন করা। এসব আইন বৈষম্য রোধে সকলের সমান সুযোগ ও প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করার প্রক্রিয়া অন্তর্ভুক্ত করা।

মানবাধিকার আইন : আন্তর্জাতিক মানদণ্ডের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ বিস্তৃত মানবাধিকার আইন প্রণয়ন করা। এই আইনগুলো বিস্তৃত পরিসরে অন্তর্ভুক্ত করা যাতে সকলের নাগরিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক অধিকারের সুরক্ষা এবং প্রয়োগ নিশ্চিত হয়।

পরিশেষে : পরিশেষে বলা যায়, উপরে উল্লিখিত সংবিধানিক এবং আইনগত সংস্কারগুলি বাংলাদেশের আইন কাঠামোকে একটি উদার গণতন্ত্র এবং গণতান্ত্রিক সমাজতান্ত্রিক নীতির ভিত্তিতে গঠিত সমাজের সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ করার জন্য অপরিহার্য। এই সংস্কারগুলির লক্ষ্য একটি শাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলা, যা অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্বচ্ছ, জবাবদিহিতামূলক এবং সামাজিক সমতার উপর প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই পরিবর্তনগুলি বাস্তবায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশ এমন একটি ভবিষ্যতের দিকে অগ্রসর হতে পারে, যেখানে সরকার সত্যিকার অর্থে জনগণের ইচ্ছার প্রতিনিধিত্ব করে এবং সকল নাগরিকের জন্য ন্যায়বিচার, সমতা এবং স্বাধীনতা নিশ্চিত করে। এই সংস্কারগুলি বাস্তবায়নের জন্য সমাজের সকল ক্ষেত্র থেকে সমর্থনপ্রাপ্ত এবং সকলের দ্বারা প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি স্থায়ী এবং বিস্তৃত পদ্ধতি গ্রহণ করা প্রয়োজন, যার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত রয়েছে এই সকল সংবিধান সংশোধন, আইন প্রণয়ন এবং নীতিগত উদ্যোগসমূহ।

প্রতিষ্ঠানিক গণতন্ত্র, গণমাধ্যমের স্বাধীনতা, শিক্ষাগত সংস্কার, অর্থনৈতিক সমতা, দুর্নীতির বিরুদ্ধে লড়াই, ধর্মনিরপেক্ষতা, প্রযুক্তিগত অংশগ্রহণ এবং মানবাধিকারের ক্ষেত্রগুলি পদ্ধতিগতভাবে মোকাবিলা করার মাধ্যমে বাংলাদেশ সত্যিকারের গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থা প্রতিষ্ঠার জন্য বিদ্যমান বাধাগুলি অতিক্রম করতে পারে। উল্লিখিত এই সামগ্রিক পদ্ধতি নিশ্চিত করে যে শাসন ব্যবস্থা কেবল জনগণের ইচ্ছাকে প্রতিফলিত করে না, বরং গণতন্ত্র, সমতা এবং ন্যায়বিচারের মৌলিক নীতিগুলোকেও রক্ষা করে।

(শেষ পর্ব)

লেকক: সাব-এডিটর, ভোরের আকাশ

Phone: +88-01918180309 (WhatsApp)

Email: [email protected]

LinkedIn: https://www.linkedin.com/in/rashedul-haque-ronjon

ভোরের আকাশ/ সু

মন্তব্য

Beta version