দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ১১ জেলার বন্যার ক্ষত এখনো শুকায়নি। বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষ এখনো ঘুরে দাঁড়ানোর সুযোগ পায়নি। সেখানে এখনো চলছে ত্রাণ তৎপরতা। এরই মধ্যে উত্তরাঞ্চলে বন্যার পদধবনির কথা শোনা যাচ্ছে। বিষয়টি খুবই দু:খজনক ও মর্মান্তিক বলে মনে করি। এটা মরার উপর খাড়ার ঘায়ের সামিল। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এই মর্মে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, গত কয়েক দিনের টানা প্রবল বর্ষণে বেড়েছে দেশের নদ-নদীর পানি। অতিরিক্ত পানির কারণে খুলে দেওয়া হয়েছে তিস্তা ব্যারেজের ৪৪টি জলকপাট। একই কারণে ভারতের গজলডোবা ব্যারেজও খুলে দিয়েছে ভারত। ফলে উত্তরাঞ্চলের নদ-নদীর পানি হু হু করে বাড়ছে। দ্রুতই নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। সরকারের বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র জানিয়েছে, কয়েক দিন ধরে তিস্তা নদীর পানি বাড়ছে। পানি আরও দ্রুত বাড়তে পারে। এতে নীলফামারী, লালমনিরহাট, কুড়িগ্রাম ও রংপুরের নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে। এর মাঝে শুক্রবার দুই দফায় গজলডোবা বাঁধ দিয়ে প্রায় ১১ হাজার কিউমেক পানি ছেড়েছে ভারত। এই বিপুল পরিমাণ পানি ছেড়ে দেওয়ার বিষয়ে আগে থেকে কিছুই জানায়নি দেশটি। তিস্তা বাঁচাও, নদী বাঁচাও সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অধ্যক্ষ নজরুল ইসলাম হাক্কানি বলেছেন, অসময়ে বন্যা ও ভাঙনে প্রতি বছর এক লাখ কোটি টাকার সম্পদ তিস্তার গর্ভে চলে যায়। এই সমস্যার স্থায়ী সমাধানের জন্য নদী খনন, সংরক্ষণ ও তিস্তা মহাপরিকল্পনার বাস্তবায়ন করা ছাড়া বিকল্প নাই। আমাদের দেশে নদী রক্ষায় উদ্যোগের কথা দীর্ঘদিন যাবত নানা পরিকল্পনার কথা শোনা গেলেও বাস্তবায়ন তেমন হচ্ছে বলে অবস্থা দৃষ্টে মনে হয় না। এই অবস্থা কোনোভাবেই মেনে নেয়া যায় না। নদী রক্ষায় জোরালো উদ্যোগ নেয়া জরুরি বলে মনে করি। মনে রাখতে হবে নদী বাঁচলে দেশ বাঁচবে।
পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) বন্যার পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ বার্তায় বলা হয়েছে, ভারি বর্ষণের কারণে লালমনিরহাট, নীলফামারী, রংপুর ও কুড়িগ্রামের চরাঞ্চল ছাড়াও কিছু নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হতে পারে।
এছাড়া পদ্মা নদীর কুষ্টিয়া অংশে হঠাৎ করেই পানি বেড়ে সীমান্তবর্তী দৌলতপুর উপজেলার প্রায় ৪০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। তিস্তা নদীর অববাহিকা, নীলফামারী, কুড়িগ্রাম, রংপুর, গাইবান্ধা, লালমনিরহাট- এই পাঁচ জেলার নিম্নাঞ্চল ও চরাঞ্চল প্লাবিত হওয়ার ঝুঁকিতে আছে। পদ্মা ও মহানন্দা নদীর পানি বেড়ে চাঁপাইনবাবগঞ্জ সদর ও শিবগঞ্জ উপজেলার কয়েকটি ইউনিয়নের নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়েছে।
আংশিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে প্রায় দুই হাজার হেক্টর জমির ফসল। পানিবন্দি হয়েছে প্রায় ৮৫০ পরিবার। পানিবন্দি এসব মানুষের মধ্যে ত্রাণ বিতরণের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। আমরা মনে করি, উত্তরাঞ্চলে বন্যা কবলিত এলাকায় পানিবন্দি মানুষের পাশে দাঁড়াতে হবে। তাদের জন্যে ত্রাণের ব্যবস্থা করতে হবে। আর সরকারকেই বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের সেবায় এগিয়ে আসতে হবে সবার আগে। এরজন্যে প্রয়োজন আগাম প্রস্তুতি। সরকার সেই লক্ষ্যে জোরালো উদ্যোগ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।
আমরা জানি, বাংলাদেশ হচ্ছে প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। খরা, বন্যা, জলোচ্ছ্বাসসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের সঙ্গে আমাদেরকে প্রতিনিয়ত লড়াই করে বেঁচে থাকতে হয়। আর এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবেলায় আগাম প্রস্তুতি থাকলে মানুষের জানমালের নিরাপত্তা দেয়া যেমন সম্ভব, তেমনি দুর্ভোগ ও ক্ষয়ক্ষতি কমিয়ে আনা যায়। তাই উত্তরাঞ্চলে বন্যার যে পদধবনি শোনা যাচ্ছে তা মোকাবেলায় এখনি নিতে হবে প্রস্ততি। সরকারের পাশাপাশি বেসরকারিভাবেও ত্রাণ তৎপরতা চালানোর উদ্যোগ নিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগ নেয়া হবে সেটাই আমাদের দাবি ও প্রত্যাশা।
ভোরের আকাশ/মি
মন্তব্য