-->

নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর হোক দুর্গাপূজা

সম্পাদকীয়
নির্বিঘ্ন ও উৎসবমুখর হোক দুর্গাপূজা

আগামীকাল ৯ অক্টোবর থেকে ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে শুরু হচ্ছে হিন্দু সম্প্রদায়ের শারদীয় দুর্গোৎসব এবং চলবে ১৩ অক্টোবর পর্যন্ত। এবার সারাদেশে ৩২ হাজার ৬৬৬টি পূজামণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে। এই শারদীয় দুর্গোৎস নিয়ে নানা শঙ্কার কথা শোনা যাওয়ার প্রেক্ষাপটে সরকারের পক্ষ থেকে নেয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বুধবার মাঠ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর জন্য একগুচ্ছ নির্দেশনা জারি করেছে, যাতে আসন্ন দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কী কী পদক্ষেপ নেয়া হবে, তা জানানো হয়েছে। এতে সংশ্লিষ্ট পূজা উদযাপন কমিটিগুলোকে পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক পাহারার জন্য প্রয়োজনীয় সংখ্যক স্বেচ্ছাসেবক ও পাহারাদার নিয়োগ, প্রতিটি পূজামণ্ডপে সার্বক্ষণিক সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপনের উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। পূজা উদ্যাপন উপলক্ষে পর্যাপ্তসংখ্যক পুলিশ সদস্য, বিজিবি, আনসার-ভিডিপি, র‌্যাব এবং অন্যান্য বাহিনীর সদস্য মোতায়েন নিশ্চিত করার কথাও বলা হয়েছে। এবার পূজামণ্ডপগুলোতে ২ লাখ ১২ হাজার ১৯২ জন আনসার সদস্য মোতায়েন করা হবে বলে আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষাবাহিনীর মহাপরিচালক মেজন জেনারেল আবদুল মোতালেব সাজ্জাদ মাহমুদ। এছাড়াও সেনাবাহিনী মোতায়েন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল ওয়াকার উজ-জামান। তিনি বলেছেন, অন্তর্বর্তী সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী বাংলাদেশ সেনাবাহিনী আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে হিন্দুধর্মাবল্বীদের শারদীয় দুর্গোৎসব উদযাপনে যথাযথ ব্যবস্থাগ্রহণ করেছে। অন্তর্বর্তী সরকার আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজায় আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে পুলিশ, র‌্যাব, আনসার ও গ্রাম প্রতিরক্ষা বাহিনীর (ভিডিপি) সদস্যদের টহল জোরদার এবং গোয়েন্দা নজরদারি বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছে। এটা সময়োপযোগী সিদ্ধান্ত বলে মনে করি। আমরা আছি, নির্ভয়ে পূজামণ্ডপে যাবেন। এতে করে সরকার পরিবর্তনে হিন্দু ধর্মাবল্বীদের মধ্যে যে আতঙ্ক ও উৎকণ্ঠা ছিল তা কেটে গিয়ে সাহস সঞ্চার হয়েছে। দুর্গাপূজা নির্বিঘ্নে উৎসবমুখরভাবে উদযাপন করতে পারবে বলে আশা জেগেছে। দুর্গাপূজা হোক উৎসবমুখর আমরাও সেটাই প্রত্যাশা করি।

স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল (অব.) মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী আশা প্রকাশ করেছেন যে এবারের দুর্গোৎসব হবে সবচেয়ে ভালো ও নির্বিঘ্ন পরিবেশে। সনাতন ধর্মের মানুষসহ সর্বস্তরের জনগণেরও প্রত্যাশা তাই। এ ক্ষেত্রে প্রশাসনের পাশাপাশি শিক্ষার্থী, রাজনৈতিক দল, সামাজিক সংগঠনের নেতাকর্মীদেরও সক্রিয় সহযোগিতা জরুরি।

শারদীয় দুর্গোৎসব হিন্দু সম্প্রদায়ের বৃহত্তম ধর্মীয় উৎসব। এই উৎসব যাতে নির্বিঘ্নে ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে উদ্যাপিত হয়, সে বিষয়ে সবাইকে নিজ নিজ অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করতে হবে। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ব্যবহার করে কেউ যাতে অপতথ্য ছড়িয়ে সামাজিক সম্প্রীতি বিনষ্ট করতে না পারে, সেদিকে নজর রাখতে হবে। অতীতে এ রকম অপতথ্য ছড়িয়ে নানা অঘটন ঘটানো হয়েছে। ২০২২ সালে দুর্গাপূজার সময় কুমিল্লায় সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা ও সহিংসতা ঘটানো ঘটেছিল। যারা এই অপরাধ ঘটিয়ে ছিলেন, আজও তাদের বিচারের আওতায় আনা যায়নি। এটা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে এটাই প্রথম শারদীয় দুর্গোৎসব। ফলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের এ বিষয়ে অধিকতর সজাগ ও সতর্ক থাকতে হবে। বাংলাদেশ যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির দেশ, সেটা শুধু কথায় নয়, কাজেও প্রমাণ করতে হবে। ষাড়শ শতাব্দীর শেষ ভাগে রাজা কংস নারায়ণ সাড়ে আট লাখ টাকা ব্যয়ে আধুনিক শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রবর্তন করলেন। উৎসবটি হয়েছিল বারনই নদের পূর্ব তীরে রামরামা গ্রামের দুর্গামন্দিরে। আজও বাঙালির সার্বজনীন দুর্গোৎসবে সেই পদ্ধতিই অনুসৃত হচ্ছে।

আমরা মনে করি, ধর্ম হোক যার যার উৎসব হোক সবার। তাই শারদীয় দুর্গোৎসব উৎসবমুখরভাবে পালিত হবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি। সরকারের পক্ষ থেকে সেই ব্যবস্থ করায় হিন্দু সম্প্রদায় খুশি। আমরা চাই হিন্দু সম্প্রদায় তাদের ধর্মীয় উৎসব দুর্গাপূজা অতীতে যেভাবে উৎসব মুখরভাবে পালন করেছে এবার অনুরূপভাবে পালন করবে। এজন্য সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। সরকার সে লক্ষ্যে সব ধরনের নিরাপত্তা নিশিচত করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version