আমাদের রাজধানী ঢাকা যে নানা কারণে ঝুঁকিপূর্ণ সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। দিন-দিনই এই ঝুঁকির পরিমাণ বেড়েই চলেছে। ফলে জীবণের ঝুঁকি নিয়ে এই নগরবাসী বসবাস করছে। অথচ সরকারের পক্ষ থেকে এই নগরীকে বাসযোগ্য নগরী হিসেবে গড়ে তোলার উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে না বলেই অবস্থা দৃষ্টে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। এই পরিস্থিতিতে বিশ্বের প্রধান শহরগুলোর মধ্যে বাসযোগ্যতার বিচারে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার অবস্থান তলানিতে নেমে এসেছে বলে অভিজ্ঞমহল জানিয়েছেন। শুধু তাই নয় পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিক দিয়েও সারা পৃৃথিবীর নিকৃষ্টতম শহরগুলোর একটি ঢাকা। যত্রতত্র ফেলা হচ্ছে ময়লা আবর্জনা। নিয়মিত পরিষ্কার না করার কারণে পরিবেশ দূষণ হচ্ছে। এতে করে ছড়াচ্ছে নানা রোগবালাই। এই নগরীর হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে রোগীদের ভিড়। এছাড়াও রয়েছে যানজট এবং সর্বাধিক বায়ুদূষণ। আর এই দুটি কারণেই বড় অবদান রাখছে অতি পুরনো যানবাহন। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক গবেষণায়ও ঢাকার যানজটের পরিধি, মানুষের জীবনযাত্রায় তার প্রভাব, যানজটে প্রতিদিন কত কর্মঘণ্টা ক্ষতি হচ্ছে, অর্থনৈতিক ক্ষতির পরিমাণ কতÑ এমনই আরো অনেক তথ্য উঠে এসেছে। কিন্তু যানজট না কমে দিন দিন বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন গবেষণা থেকে জানা যায়, ঢাকার রাস্তায় গাড়ি চলার গড় গতি নেমে এসেছে ৪.৮ কিলোমিটারে, যা মানুষের হাঁটার গড় গতির কাছাকাছি। আর বায়ুদূষণজনিত কারণে দেশে প্রতিবছর লক্ষাধিক মানুষের মৃত্যু হয়। তার পরও অতি পুরনো যানবাহনের চলাচল বন্ধের কোনো উদ্যোগ নেই। ঢাকাসহ সারা দেশে ২০ ও ২৫ বছরের পুরনো ৭৩ হাজার ৫৭টি পণ্য পরিবহন ও গণপরিবহনের গাড়ি চলাচল করছে। সরকারের মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালার খসড়া অনুযায়ীও এসব গাড়ি সড়কে চলাচলের অনুপযোগী। পরিবহন বিশেষজ্ঞদের মতে, অধিক পুরনো মোটরযান রাস্তায় চলাচল করতে দেয়া নানা দিক থেকেই ক্ষতিকর। এগুলো জ্বালানি সাশ্রয়ী নয়। হাইড্রোকার্বন নির্গত হয় অনেক বেশি। এসব যানবাহনের কালো ধোঁয়ার পরিবেশ দূষণের মাত্রা অনেক বেশি। গতি কম। রাস্তায় প্রায়ই নষ্ট হয়ে যায়।
এসব পুরনো গাড়ি তাই যানজটের অন্যতম কারণ। পাশাপাশি এসব গাড়ির দুর্ঘটনায় পড়ার হারও অনেক বেশি। তার পরও বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষ (বিআরটিএ) মেয়াদোত্তীর্ণ এসব গাড়িকে ফিটনেস সার্টিফিকেট, রুট পারমিট দিয়ে যাচ্ছে। সরকারের মোটরযান স্ক্র্যাপ নীতিমালার খসড়া অনুযায়ী, বাস ও মিনিবাসের চলাচলের মেয়াদ নির্ধারণ করা হয় ২০ বছর এবং পণ্য পরিবহনে ব্যবহৃত গাড়ির আয়ুষ্কাল নির্ধারণ করা হয় ২৫ বছর। কিন্তু সরকারের সে নীতিমালা চূড়ান্ত হয়নি। আবার একটি গাড়ির ইকোনমিক লাইফ বা আয়ুষ্কাল কত দিন হবে, সেটিও বিআরটিএ এখন পর্যন্ত নির্ধারণ করতে পারেনি। ফলে রাস্তায় ২৫ বছরের বেশি পুরনো গাড়ির চলাচলও বন্ধ হচ্ছে না। মোটরযান প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত একটি গাড়ির ইকোনমিক লাইফ নির্ধারণ করে ১০ থেকে ১৫ বছর। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে আমরা সেটিকে ২০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত করতে পারি। তার চেয়ে বেশি সময় কোনো গণপরিবহন রাস্তায় চলতে দেয়া অনুচিত। শুধু তাই নয়, ভূমিকম্পের ভয়াবহ ঝুঁকিতে রয়েছে ঢাকা। যেকোনো সময় ভূমিকম্পের আঘাতে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হতে পারে ঢাকা এমন আশঙ্কাও কম নয়। আমরা আশা করি, সরকার শিগগিরই এসব সমস্যা সমাধানে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে। ঝুুঁকিমুক্ত করবে ঢাকাকে।
আমরা রাজধানী ঢাকাকে আর অবহেলিত নগরী হিসেবে দেখতে চাই না। এই নগরী হবে তিলোত্তমা ও বসবাসের উপযোগী। এই নগরবাসীকে উৎকণ্ঠা ও আতঙ্কমুক্ত করতে হবে। সরকারকে সেই লক্ষ্যে নিতে হবে পরিকল্পিত উদ্যোগ। সেটাই বর্তমান সরকারের কাছে আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য