আমাদের প্রধান খাদ্যশস্য চালের দাম যে দিন দিন বেড়ে নিম্নআয়ের মানুষের চরম দুর্ভোগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। চালের নেই কোনো রকম সংকট। তা সত্ত্বেও বেড়েই চলেছে চালের দাম। আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বেড়েছে এ অজুহাতে ৫০ কেজির প্রতিবস্তা চালে ১০০ থেকে ৩০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। গত দেড় মাসে খুচরা পর্যায়ে প্রতিকেজি চালের দাম ৪ থেকে ৭ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। বলাচলে গরিব অসহায় মানুষ চালের দাম বাড়ার কারণে অর্ধাহারে অনাহারে মানবেতর জীবনযাপন করছে। এই চালের দাম নিয়ন্ত্রণে নেয়া হচ্ছে না কোনো জোরালো উদ্যোগ। চালের উৎপাদন বাড়লেও চালের দাম কমছে না। বাজার সিন্ডিকেট এই চালের দাম নিয়ন্ত্রণেও বার বার ব্যর্থতার পরিচয় দিয়ে আসছে। খুচরা বাজারে জাত ও মানভেদে প্রতিকেজি দেশি বাসমতি ৯০ থেকে ৯৫ টাকা, মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭৫ টাকা, নাজিরশাইল চাল ৭০ থেকে ৮০ টাকা, মাঝারি মানের বিআর ২৮, ২৯ নম্বর চাল ৫৮ থেকে ৬০ টাকা, মোটা স্বর্ণা ৫৭ টাকা ও হাইব্রিড মোটা ৫৪ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ দুসপ্তাহ আগেও এসব চাল ৫ টাকা থেকে ১০ টাকা কমে কেনা যেত। চালের দাম বাড়লেও তা মনিটরিং করে কমানোর লক্ষ্যে সরকারের পক্ষ থেকে কোনো পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে বলে অবস্থা দৃষ্টে মনে হচ্ছে না। এতে করেই ব্যবসায়ীরা ইচ্ছে মতো চালের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছেন বলে ক্রেতাদের অভিযোগ উঠেছে।
গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, ধানের ফলন বাড়ায় প্রথমবারের মতো এক অর্থবছরে চার কোটি টনের বেশি চাল মজুত করেছে বাংলাদেশ। কৃষকরা ধীরে ধীরে উচ্চ ফলনশীল ও হাইব্রিড জাতের ধান চাষের ওপর জোর দেয়ায় চাল আমদানির প্রয়োজনীয়তা শূন্যের কোঠায় নেমে এসেছে। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর (বিবিএস) হিসাব অনুসারে, ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কৃষকরা চার কোটি ছয় লাখ টন চাল পেয়েছেন। আগের অর্থবছরের তুলনায় যা চার দশমিক এক শতাংশ বেশি। শুষ্ক মৌসুমে বোরো ধানের আগে আগের শীতে কাটা আমন ধানে সবচেয়ে বেশি ফলন হয়েছে। বোরো দেশের প্রধান ফসল। গত মে থেকে জুনে বোরো আবাদ থেকে কৃষকরা পেয়েছেন প্রায় দুই কোটি ১০ লাখ টন ধান। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি গুদামে চালের মজুত ছিল ১৩ লাখ ৭ হাজার ২৫৭ টন। মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালের ১ জুলাই থেকে ২৫ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সরকারি-বেসরকারি পর্যায়ে বিদেশ থেকে আদৌ চাল আমদানি করতে হয়নি।
দেশে বন্যায় আমন উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত সরবরাহের কোনো সংকট না থাকলেও বাজারে চালের দাম বাড়ছে। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে কেজিপ্রতি চালের দাম ৪-৮ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে বলে পাইকারি ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন। ভোক্তা অধিকার সংগঠন বলছে, বাজারে সরকারের নজরদারি কম থাকায় ব্যবসায়ীরা সুযোগ নিচ্ছেন।
রাজধানীর কারওয়ান বাজারের কিচেন মার্কেটের চাল ব্যবসায়ী জসিম উদ্দিন বলেন, সাম্প্রতিক বন্যার সময় ত্রাণ দেয়ায় মাঝারি মানের চালের দাম বাড়ে। এরপর আর কমেনি। মিলাররা চালের দাম বাড়ানোর চেষ্টায় আছেন। পরিস্থিতি বুঝে তারা দাম বাড়িয়ে দেন। চালের দাম বাড়ার বিষয়ে পাইকারি ব্যবসায়ীরা বলছেন, দেশের কয়েকটি জেলায় ত্রাণের জন্য চাল কেনা বেড়ে যাওয়ায় মাঝারি মানের চালের চাহিদা অনেক বেড়ে গিয়েছিল। এ কারণে ওই ধরনের চালের দাম অনেকটাই বেড়েছে। সেই প্রবণতা অনুসরণ করে অন্যান্য চালের দামও বেড়েছে।
চালের দাম বাড়ার বিষয়ে ভোক্তা অধিকার সংগঠন কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব) সহ-সভাপতি এস এম নাজের হোসাইন বলেছেন, ব্যবসায়ীরা এখন ইচ্ছা মতো চালের দাম বাড়াচ্ছেন। কারণ, সরকার পরিবর্তন হলেও সিদ্ধান্ত নেয়ার কর্তাব্যক্তিরা অনেকে এখনো বহাল আছেন। এ কারণে ব্যবসায়ীরাও কাউকে ভয় পাচ্ছেন না।
আমরা জানি, দেশে বছরে মোট চালের চাহিদা রয়েছে ৩ কোটি ৭০ লাখ টনের বেশি। কিন্তু বন্যার কারণে এ বছরে লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে চালের উৎপাদন ৩ শতাংশ কমতে পারে। এ অর্থবছরে চালের উৎপাদন ৩ কোটি ৬৮ লাখ টন হতে পারে। ধান হয়েছে ১ কোটি ১৫ লাখ হেক্টর জমিতে, যা গত বছরের চেয়ে সাড়ে ৩ শতাংশ কম। অক্টোবর মাস পর্যন্ত চালের বাজারে অস্থিরতা থাকতে পারে। তবে নভেম্বরে আমন কাটা শুরু হলে চালের দাম কমতে পারে বলে মনে করছেন ব্যবসায়ীরা।
আমরা মনে করি, চালের দাম নিযন্ত্রণে জোরালো উদ্যোগ নিবে সরকার। এলক্ষ্যে বাজার মনিটরিং জোরদার করতে হবে। দোষীদের বিরুদ্ধে নিতে হবে পরিকল্পিত উদ্যোগ। সরকার সে লক্ষ্যে পরিকল্পিত উদ্যোগ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য