কেউ যদি বলেন- এই মুহূর্তে দেশের সব চেয়ে বড় সংকট কী? এক বাক্যে সবাই বলবেন দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি। বাজারে একশ টাকা কেজির নীচে কোনো সবজি নেই। মরিচরে কেজি ৫০০ টাকার বেশি। চালের দামও বেড়েছে। এখানেই শেষ নয়; মাছ-মাংসের দামও বেড়েছে। মধ্য ও নিম্ন আয়ের মানুষের নাভিশ্বাস ওঠেছে। কয়েক দিন আগে দৈনিক ভোরের আকাশ-এ ‘ক্রেতার চোখে জল’ শিরোনামে একটি সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। এতে মানুষের দুর্ভোগের চিত্র ফুটে ওঠেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়েছে। এতে খায়রুল আলম নামে এক ক্রেতা পণ্যের ঊর্ধ্ব মূল্যের কথা বলতে গিয়ে কেঁদে ফেলেছেন। তিনি বলেন, আমরা কীভাবে বাঁচব। জিনিসপত্রের এতো দাম- কিছুই কেনার সামর্থ নেই। খায়রুল আলমের মতো আরও অনেকের অবস্থা একই রকম। কিন্তু তারা হয়তো বলতে পারছেন না। আবার অনেকের কথা আমরা শুনতেও পাচ্ছি না। গতকাল ভোরের আকাশ-এ ‘গরিব কী খেয়ে বাঁচবে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। এখানেও মানুষের দুর্ভোগের কথা বলা হয়েছে। অন্য সংবাদ মাধ্যমেও পণ্য মূল্যের ঊর্ধ্বগতির কথা বলা হচ্ছে। সরকারও বিষয়টি অনুধাবন করতে পেরেছে বলেই মনে হয়। কেননা, সরকার ফের ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছে। গতকাল মঙ্গলবার দুপুরে ডিম উৎপাদক এবং সরবরাহকারীদের সঙ্গে বৈঠক শেষে ভোক্তা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক মোহাম্মদ আলীম আখতার খান বলেছেন, আজ বুধবার থেকে উৎপাদক পর্যায়ে প্রতিটি ডিমের দাম ১০ টাকা ৯১ পয়সা, পাইকারিতে ১১ টাকা ১ পয়সা এবং খুচরায় ১১ টাকা ৮৭ পয়সা নির্ধারণ করা হয়েছে। সে হিসেবে ভোক্তা পর্যায়ে প্রতিডজন কিনতে খরচ হবে ১৪২ টাকা ৪৪ পয়সা। এদিকে ডিমের নির্ধারিত দাম বাস্তবায়ন করতে বাজারে নিয়মিত অভিযান পরিচালনা করছে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন সংস্থা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। সে কারণে তেজগাঁও আড়তের ব্যবসায়ীরা ডিম বিক্রি বন্ধ করে দিয়েছেন। এর মধ্যদিয়ে তারা সরকারকে বেকায়দায় ফেলার চেষ্টা করছেন বলেই ধরে নিতে হবে। কারণ ব্যবসার নামে মানুষের পকেট কাটা অনেকের স্বভাবে পরিণত হয়েছে। আর আগেও সরকার ডিমের দাম নির্ধারণ করে দিয়েছিল। কিন্তু সেই দামে ডিম বিক্রি হয়নি। বরং দাম বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা। বাজার নিয়ন্ত্রণ করতে সরকার ভারত থেকে ডিম আমদানির অনুমতি দিয়েছে। কিন্তু এর প্রভাব বাজারে নেই। রাজধানীর কয়েকটি বাজারে গতকালও ফার্মের মুরগির লাল ও সাদা ডিম ডজনপ্রতি ১৮০ টাকা দরে বিক্রি হয়। এ ছাড়া পাড়ামহল্লায় ডিমের দাম ডজনপ্রতি ১৯০ টাকা পর্যন্ত ওঠেছে। এর আগে পণ্যের দাম বাড়ার জন্য পরিবহনে চাঁদাবাজি ও সিন্ডিকেটকে দায়ী করা হয়েছে। কিন্তু এখন কারা চাঁদাবাজি করছে? সরকার কেন তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছে না? সরকার কেন সিন্ডিকেট ভাঙতে পারছে না? সরকারকে অবশ্যই সিন্ডিকেট ভাঙতে হবে। পণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণ করতেই হবে। অন্যথায় জনবিস্ফোরণ ঘটতে পারে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য