-->

অবৈধ সম্পদের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

নিজস্ব প্রতিবেদক
অবৈধ সম্পদের মালিকদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিন

দুর্নীতির মাধ্যমে আমাদের দেশে অবৈধ সম্পদের মালিকের সংখ্যা যে দিন-দিন বাড়ছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। বিগত সরকারের আমলে সাবেক আমলা ও মন্ত্রী ছাড়াও সরকারি অফিসের পিয়ন পর্যন্ত অবৈধভাবে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে বলে গণমাধ্যমে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে তেমনি একটি খবরের শিরোনাম হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের টানা ৪ মেয়াদে শুধু মন্ত্রী, প্রতিমন্ত্রী,ও সংসদ সদস্যরাই বিপুল পরিমাণ অর্থসম্পদের মালিক হয়েছেন তা নয়, তাদের সচিব, পিএস, ও সহকারীরাও কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছেন অবৈধভাবে টাকা উপার্জনের মাধ্যমে। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিয়ন জাহাঙ্গীর আলম হয়েছেন ৪শ কোটি টাকার মালিক একথা অমরা সবাই জানি। ঘুষ দুর্নীতি, টেন্ডারবাজি, কমিশন ও চাকরিতে পদোন্নতি ও বদলি করে দেয়ার তদবির করে তারা এই অবৈধ সম্পদের মালিক হয়েছেন। গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর দুর্নীতিদমন কমিশন সাবেক ক্ষমতাসীনদের দুর্নীতির বিরুদ্ধে তদন্ত শুরু করেছে। এতে করে এপর্যন্ত ২৫ জন সংসদ সদস্য ও মন্ত্রীর দুর্নীতির সন্ধান পেয়েছে দুর্নীতিদমন কমিশন। আমরা মনে করি, দুর্নীতির মাধ্যমে যারা এই অঢেল সম্পদের মালিক হয়েছেন তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করবে বর্তমান সরকার। এটা করা সম্ভব হলেই কেচো খুঁড়তে সাপ বেরিয়ে আসবে বলে আমরা মনে করি।

এক বেসরকারি পরিসংখ্যানে উল্লেখ করা হয়েছে যে, বর্তমানে দেশে ৫ হাজার কোটি টাকার বেশি সম্পদের মালিক আছেন ২১ জন। দেশে ১০ কোটি টাকার বেশি সম্পদ আছে এমন ব্যক্তির সংখ্যা ৩০ হাজারের বেশি। আর কোটিপতির সংখ্যা লাখ লাখ । করোনা মহামারির মধ্যেও দেশে ধনী ব্যক্তির সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ৪৩ শতাংশ। এ অবস্থায় ‘ক্রেডিট সুইস’ যখন বলে, ৫৫ থেকে ১০৭ কোটি টাকার সম্পদের মালিক বাংলাদেশে ১ হাজার ১২৫ জন, এদের প্রত্যেকের সর্বনিম্ন সম্পদ ৫৪ কোটি টাকা থেকে ১০৭ কোটি টাকা বলে জানা গেছে।

শুধু তাই নয়, যাদের কাছে সুশাসন ও ন্যায় বিচার প্রত্যাশা করে দেশ ও জাতি সেই বিচার বিভাগের অর্ধশতাধিক কর্মকর্তার অবিশ্বাস্য সম্পদের তথ্যপ্রমাণ পেয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। তাদের অনেকেই অবৈধ উপায়ে শত শত কোটি টাকার মালিক হয়েছেন। কেউ কেউ আবার হাজার কোটি টাকার মালিক। অনেকের আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে দেশে ও বিদেশে। কানাডার বেগমপাড়ায় বাড়ি কিনেছেন বেশ কয়েকজন। শত শত বিঘা জামির মালিকানা অর্জন করেছেন কয়েকজন।

দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) গোয়েন্দা শাখার গোপন অনুসন্ধানে বিচার বিভাগের ৫১ জনের দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। তাদের নামে-বেনামে জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদের তথ্যও রয়েছে দুদকের কাছে। দুদক সূত্র জানায়, শিগগির তাদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অনুসন্ধান শুরু হবে। এই অনুসন্ধানে ওই সব কর্মকর্তার বিরুদ্ধে নামে-বেনামে আরও সম্পদ পাওয়া যাবে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। এর পর তথ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে তাদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থাগ্রহণ করা হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, বিচার বিভাগ দলীয়করণের কারণেই এই খাতে দুর্নীতির সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। দুর্নীতিবাজরা দলীয় আনুগত্যের কারণে নির্ভার ছিলেন। তারাই বিচার বিভাগকে মহা দুর্নীতিগ্রস্ত করেছেন।

গণ-অভ্যুত্থানে ক্ষমতা হারানো আওয়ামী সরকারের ৭০ মন্ত্রী, এমপি, আমলা আর সুবিধাভোগী ভিআইপি ব্যবসায়ী এখন দুর্নীতি দমন কমিশন-দুদকের জালে। অনিয়ম, দুর্নীতি আর স্বেচ্ছাচারিতায় বিপুল ধন-সম্পদ এবং প্রভাব-প্রতিপত্তির অভিযোগে এরই মধ্যে অনেকেই জেল-জরিমানার মুখে থাকলেও তাদের রেহাই নেই দুদকের খড়্গ থেকেও। যে শীর্ষ ৭০ প্রভাবশালীকে এখন ধরা হচ্ছে, তাদের মধ্যে ৬৪ জনই সাবেক মন্ত্রী-এমপি। বাকি ছয়জনের মধ্যে তিনজন আলোচিত-সমালোচিত ব্যবসায়ী, তিনজন ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা ও আমলা রয়েছেন। দুদক সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।

আমরা চাই দুর্নীতিমুক্ত বাংলাদেশ ও সম্পদের সুসম বণ্টন। এই দুর্নীতিবাজদের চিহ্নিত করে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থ করতে হবে। বন্ধ করতে হবে দুর্নীতি ও দুঃশাসন। মনে রাখতে হবে, উন্নয়নের প্রধান অন্তরায় হচ্ছে দুর্নীতি। এই দুর্নীতির লাগাম টেনে ধরতে হবে। বর্তমান সরকারের কাছে দেশের জনগণ সেটা দেখতে চায়। বাংলাদেশ হোক দুর্নীতিমুক্ত সেই প্রত্যাশাই আমাদের।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version