দেশের রাজস্ব আদায়ে ঘাটতি দেখা দিলে রাজকোষে যে নগদ অর্থের সংকট দেখা দিবে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। আমাদের দেশে সেই সংকটই দেখা দিয়েছে। ফলে জাতীয় অর্থনীতিতে দুশ্চিন্তা বাড়ছে বই কমছে না। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এ মর্মে একটি খবর প্রকাশিত হয়েছে । এতে বলা হয়েছে, চাহিদা অনুযায়ী রাজস্ব আদায় না হওয়ায় ঘাটতির ব্যবধান ক্রমেই বাড়ছে। চলতি অর্থবছরের প্রথম প্রান্তিকে রাজস্ব আদায় লক্ষ্যমাত্রা থেকে ২৫ হাজার ৫৯৭ কোটি টাকা কম হয়েছে, যা গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ৪ হাজার ৫৮৫ কোটি টাকা কম। চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম প্রান্তিকে জুলাই মাসে রাজস্ব আদায় হয়েছে ২০ হাজার ২৬৯ কোটি টাকা, আগস্টে ২১ হাজার ৬০০ কোটি টাকা এবং সেপ্টেম্বরে ২৯ হাজার কোটি টাকা। এনবিআরের তথ্যে আরও দেখা গেছে, আমদানি শুল্ক এবং মূল্যসংযোজন কর (ভ্যাট) আদায় গত বছরের একই সময়ের তুলনায় লেনদেনে যথাক্রমে-৭ শতাংশ এবং ১০ শতাংশ কমে গেছে। তবে একই সময়ে আয়কর আদায় আমদানি শুল্ক এবং ভ্যাটের চেয়ে ভালো হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, চলতি অর্থবছরের (২০২৪-২৫) প্রথম দুই মাসে আমদানি দায় পরিশোধ (এলসি নিষ্পত্তি) গত বছরের একই সময়ের তুলনায় ১৩ শতাংশের বেশি কমে গেছে। এর কারণ হিসেবে দেখা গেছে গত জুলাই ও আগস্টের ছাত্র-জনতার আন্দোলনের প্রভাব পড়েছে রাজস্ব আদায়ে। জুলাই মাসের শুরু থেকে আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত দেশজুড়ে ছাত্র-জনতার আন্দোলন হয়। তখন প্রায় সবকিছু বন্ধ ছিল বললেই চলে। সাধারণ ছুটির পাশাপাশি কারফিউও ছিল বেশ কয়েক দিন। এসবের প্রভাব পড়েছে শুল্ক-কর আদায়ে। আগস্ট মাসের প্রথম সপ্তাহে সরকার পরিবর্তনের পরও আবার ব্যবসা বাণিজ্যের ক্ষেত্রে অনিশ্চয়তা দেখা দেয়। যে কারণে কাক্সিক্ষত হারে রাজস্ব আদায় করা যায়নি বলে জানান এনবিআরের শুল্ক ও কর বিভাগের কর্মকর্তারা। আমরা মনে করি, রাজস্ব আদায়ে এই ঘাটতি খুবই দুঃখজনক বিষয়। এই অবস্থা কোনোভাবেই চলতে দেয়া যায় না। রাজস্ব খাতকে জোরদার করতে হবে। তবেই এই ঘাটতি পূরণ করা সম্ভব বলে আমরা মনে করি।
আমরা জানি, চলতি অর্থবছরের জন্য ৭ লাখ ৯৬ হাজার ৯০০ কোটি টাকার বাজেটে ব্যয় পরিকল্পনা করছে অর্থ বিভাগ। এতে আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয় ৫ লাখ ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা। এটি চলতি অর্থবছরের চেয়ে ৪৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা বেশি। এর মধ্যে কর খাত থেকে ৪ লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং কর ব্যতীত আয় ধরা হয় ৫০ হাজার কোটি টাকা। কর আদায়ের মধ্যে এনবিআর নিয়ন্ত্রিত থেকে ৪ লাখ ৭৬ হাজার ৫০০ কোটি টাকা এবং এনবিআরবহির্ভূত খাত থেকে আদায় করার কথা রয়েছে ২০ হাজার কোটি টাকা। অর্থ বিভাগের বাজেট নথি বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, বিগত কয়েক বছর রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হয়নি। ওই সময় অর্থনীতির স্বাভাবিক পরিস্থিতি ছিল। কিন্তু বর্তমানে একটি বিশেষ সময়ের মধ্য দিয়ে পার হচ্ছে দেশের অর্থনীতি। ঊর্ধ্বমুখীভাব বিরাজ করছে মূল্যস্ফীতির হারে। ব্যবসা বাণিজ্য খুব ভালো হচ্ছে না। ফলে রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন হচ্ছে না।
আমরা মনে করি, দেশের রাজস্ব আদায়ে এই দুরবস্থা অচিরেই কাটিয়ে উঠতে হবে। দেশের অর্থনীতির চাকা ঘুরাতে এবং অর্থনীতির দুরবস্থা নিরসন করতে রাজস্ব আদায়ের লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে হবে। এছাড়া বিকল্প কোনো পথ আছে বলে আমাদের জানা নেই। সেই লক্ষ্যে সফলতা অর্জনে সরকারকে রাজস্ব আদায় কার্যক্রম জোরদার করতে হবে। এ ক্ষেত্রে অবহেলা করলে চলবে না। সরকার সেই লক্ষ্যে উদ্যোগ নিবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য