-->
শিরোনাম
৫৩তম শাহাদতবার্ষিকী আজ

অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর

আহমাদ ইশতিয়াক
অকাতরে প্রাণ বিলিয়ে দেন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর

আজ ২৮শে অক্টোবর বীরশ্রেষ্ঠ শহীদ সিপাহী হামিদুর রহমানের ৫৩তম শাহাদতবার্ষিকী। মুক্তিযুদ্ধে বীরোচিত ভূমিকার জন্য সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় সম্মাননা বীরশ্রেষ্ঠ খেতাবে ভূষিত হন এই বীর মুক্তিযোদ্ধা। ১৯৭১ সালের ২৮ অক্টোবর মৌলভীবাজারের শ্রীমঙ্গলের ধলইয়ে অসম সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করে শহীদ হন বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমান। এদিন ভোর ৪টার দিকে লেফটেন্যান্ট আব্দুল কাইয়ুম চৌধুরী এবং লেফটেন্যান্ট নুরের নেতৃত্বে মুক্তিবাহিনীর ১২৫ জনের একটি দল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর দুর্ভেদ্য ধলই ঘাঁটির ওপর প্রচণ্ড আক্রমণ চালায়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা সেদিন হানাদার বাহিনীকে পরাস্ত করে সীমান্ত ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। এই যুদ্ধে হাওলাদার মকবুল হোসেন ও সিপাহী আব্দুর রহমান অসামান্য বীরত্ব প্রদর্শন করেন।

হামিদুর রহমান ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার খোরদা খালিশপুর গ্রামে ১৯৫৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম আক্কাস আলী মণ্ডল এবং মায়ের নাম কায়মুন্নেসা। হামিদুর রহমান ১৯৭১ সালের ২ ফেব্রুয়ারি ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টে যোগ দেন। রেজিমেন্টের চট্টগ্রাম সেনানিবাস কেন্দ্রে তাকে নিয়োগ দেওয়া হয়। ২৫ মার্চ রাতে পাকবাহিনীর আক্রমণের মুখে তিনি সেনানিবাস ত্যাগ করে গ্রামের বাড়ি চলে আসেন এবং মুক্তিবাহিনীতে যোগ দেন। মাত্র ১৮ বছর বয়সে শহীদ হওয়া সিপাহী হামিদুর রহমান দেশের ৭ জন বীরশ্রেষ্ঠ পদকপ্রাপ্ত শহীদ মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে সর্বকনিষ্ঠ। ১৯৭১ সালের অক্টোবর মাসের শেষদিকে কমলগঞ্জের ধলই সীমান্ত এলাকায় প্রচণ্ড যুদ্ধ চলছিল। হামিদুর রহমান প্রথম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সি কোম্পানির হয়ে ধলই সীমান্তের ফাঁড়ি দখল করার অভিযানে অংশ নেন। সব প্রস্তুতি নিয়ে ২৮শে অক্টোবর ভোররাতে লেফটেন্যান্ট কাইয়ুমের নেতৃত্বে একটি দল পাক সেনাদের ওপর চতুর্দিক থেকে সাঁড়াশি আক্রমণ চালায়। ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের ১২৫ জন মুক্তিযোদ্ধা যুদ্ধে অংশ নেয় সেই অভিযানে। ব্যাপক গোলাবর্ষণে পাক সেনাদের ক্যাম্পে আগুন ধরে যায়। সামনে দুই প্লাটুন ও পেছনে এক প্লাটুন সৈন্য অবস্থান নিয়ে অগ্রসর হতে থাকে শত্রু অভিমুখে। শত্রু অবস্থানের কাছাকাছি এলে একটি মাইন বিস্ফোরিত হয়। গ্রেনেড ছোড়ার দায়িত্ব দেওয়া হয় হামিদুর রহমানকে। তিনি পাহাড়ি খালের মধ্য দিয়ে বুকে হেঁটে গ্রেনেড নিয়ে আক্রমণ শুরু করেন। দুটি গ্রেনেড সফলভাবে মেশিনগান পোস্টে আঘাত হানে, কিন্তু তার পরপরই হামিদুর রহমান গুলিবিদ্ধ হন। এই সুযোগে ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের মুক্তিযোদ্ধারা বিপুল উদ্যমে এগিয়ে যান এবং শত্রু পাকিস্তান সেনাবাহিনীকে পরাস্ত করে সীমান্ত ফাঁড়িটি দখল করতে সমর্থ হন। কিন্তু হামিদুর রহমান বিজয়ের স্বাদ আস্বাদন করতে পারেননি, ফাঁড়ি দখলের পরে মুক্তিযোদ্ধারা শহীদ হামিদুর রহমানের মৃতদেহ উদ্ধার করেন। হামিদুর রহমানের মৃতদেহ সীমান্তের অল্প দূরে ভারতীয় ভূখণ্ডে ত্রিপুরা রাজ্যের হাতিমেরছড়া গ্রামের স্থানীয় এক পরিবারের পারিবারিক গোরস্থানে দাফন করা হয়। ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের পর ধলই সীমান্ত ফাঁড়িতে বিজিবির (তৎকালীন বিডিআর) পক্ষে স্থানীয়ভাবে একটি নামফলক স্বরূপ স্মৃতিস্তম্ভ স্থাপন করা হয় বিজিবির সীমান্ত ফাঁড়ির সামনে। ২০০৫ সালে তৎকালীন বিএনপি সরকারের অর্থ ও পরিকল্পনামন্ত্রী মরহুম এম সাইফুর রহমান ধলই সীমান্ত এলাকায় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমানের স্মৃতিসৌধের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন এবং ধলই চা-বাগানের জমি অধিগ্রহণ করে একটি স্মৃতিসৌধ নির্মাণ করেন। সেই অনুযায়ী ২০০৭ সালের ১০ই ডিসেম্বর বাংলাদেশ রাইফেলসের একটি দল ত্রিপুরা সীমান্তে হামিদুর রহমানের দেহাবশেষ গ্রহণ করেন এবং যথাযোগ্য মর্যাদার সঙ্গে কুমিল্লার বিবিরহাট সীমান্ত দিয়ে শহীদের দেহাবশেষ বাংলাদেশে নিয়ে আসা হয়। ১১ই ডিসেম্বর রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় বীরশ্রেষ্ঠ হামিদুর রহমানকে ঢাকার বুদ্ধিজীবী কবরস্থানে সমাহিত করা হয়।

দেশের মুক্তির জন্য জীবনদানকারী এই বীরের গল্প নতুন প্রজন্ম জানতে পারছে কমলগঞ্জের ধলই চা-বাগানে প্রতিষ্ঠিত বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান জাদুঘরের মাধ্যমে। বিএনপি সরকার আমলে ধলই সীমান্তে ঘটনাস্থল এলাকায় চিরসবুজ চা-বাগানের মাঝে স্থাপন করা হয় বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান স্মৃতিসৌধ। বর্তমান সরকার এ স্মৃতিসৌধ এলাকায় মুক্তিযুদ্ধের তথ্য ও চিত্র সমন্বয়ে গড়ে তুলেছে বীরশ্রেষ্ঠ সিপাহী হামিদুর রহমান জাদুঘর।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version