ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয় ও ট্রেন লাইনচ্যুতির ঘটনা নতুন কোনো সমস্যা বলে আমরা মনে করি না। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রায়ই ঘটছে ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনা। এতে যাত্রী হতাহতের মতো দুঃখজনক ঘটনারও জন্ম দিচ্ছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। এ ছাড়া ট্রেনের সিডিউল বিপর্যয়ের ঘটনাও ঘটছে প্রায়ই। গত শনিবার থেকে কমলাপুর রেলওয়ে স্টেশন থেকে প্রায়ই এ ধরনের সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে যাত্রীরা ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন বলে গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে একটি ছবি ছাপা হয়েছে। এতে যাত্রীদের দুর্ভোগের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। ছবিতে দেখা যায় ট্রেনের অপেক্ষায় যাত্রীরা ঘুমিয়ে অলস সময় পার করছেন। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক বলে আমরা মনে করি। ট্রেনে এ ধরনের সিডিউল বিপর্যয়ে যাত্রী হয়রানি ও দুর্ভোগ কাম্য হতে পারে না। অথচ গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর কমলাপুর রেলস্টেশনে পঞ্চগড় এক্সপ্রেসের তিনটি বগি লাইনচ্যুত হওয়ার পর তা উদ্ধার করা হয়েছে। তবে দেখা দিয়েছে ভয়াবহ সূচি বিপর্যয়। গতকাল ঢাকা-সিলেট রুটে আন্তঃনগর জয়ন্তিকা এক্সপ্রেস, ঢাকা-তকাকান্দি রুটে চলাচলকারী অগ্নিবীণা এক্সপ্রেস, তুরাগ কমিউটার ট্রেনের যাত্রা বাতিল করা হয়। এদিন সকাল থেকেই সব ধরনের ট্রেনের শিডিউলে বিপর্যয় ঘটেছে। প্রতিদিন কমলাপুর স্টেশন হয়ে ১৮২টি ট্রেন চলাচল করে। অধিকাংশ ট্রেন শুধু একটি রেক দিয়ে চালানো হয়। ফলে একটি ট্রেন সময়মতো না ছাড়লে পরের ট্রেনটিও দেরিতে যায়। ট্রেনের ভয়াবহ শিডিউল বিপর্যয়ে কমলাপুর রেলস্টেশনে ভোগান্তিতে পড়েছেন যাত্রীরা। প্রতিটি ট্রেন ছাড়ছে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে। যাত্রী ভোগান্তি চরমে পৌঁছেছে। স্টেশনে এসেও ট্রেনে উঠতে না পেরে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন যাত্রীরা। অনেকের অভিযোগ আছে স্টেশনের ব্যবস্থাপনা নিয়েও। এ ছাড়া নানা সংস্কারের ভিড়ে রেললাইন অবহেলিত থাকায় ক্ষোভ জানান যাত্রীরা। এতে সিগন্যাল ব্যবস্থার ক্ষতি হওয়ায় ট্রেনের শিডিউল বিপর্যয় এখনো কাটেনি। শিডিউল বিপর্যয়ের কারণে প্রতিটি ট্রেনই কমলাপুর থেকে তিন থেকে সাড়ে তিন ঘণ্টা দেরিতে ছেড়ে যাচ্ছে। সূচি স্বাভাবিক করার চেষ্টা চলছে বলে জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। তারা বলছেন, এখনও ম্যানুয়েল সিগন্যাল দিয়ে চলছে ট্রেন। সিগন্যাল সমস্যা ঠিক করতে কাজ চলছে। এদিকে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বগি লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনায় তদন্ত কমিটি গঠন করেছে। একই দিনে দু’টি ট্রেনের লাইনচ্যুতির ঘটনা তদন্তে বিভাগীয় রেলওয়ে ব্যবস্থাপক (রেল) মোহাম্মদ মহিউদ্দিন আরিফকে প্রধান করে তদন্ত কমিটি গঠন করেছে রেলওয়ে। কমিটির রিপোর্ট সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ছাড়া যাত্রীদের টিকিটের রিফান্ড যথাসময়ে দেওয়া হবে বলেও জানানো হয়।
মোহায়মিনুল নামের রংপুরের এক যাত্রী বলেন, দীর্ঘ সময় ধরে স্টেশনে বসে আছি। ট্রেন কখন ছাড়বে তাও জানি না। আরেক যাত্রী সামিয়া আক্তার বলেন, সকাল সাড়ে ৮টা থেকে স্টেশনে বসে আছি। দুপুর হলেও ট্রেন ছাড়েনি। বাচ্চা নিয়ে স্টেশনে বসে থাকা কষ্টের। শিহাব নামের আরেক যাত্রী বলেন, ছোট বোনের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ঢাকায় এসেছি। সকাল ৯টা থেকে অপেক্ষা করছি। দুপুর ২টা বাজে, এখনো ট্রেন ছাড়েনি। ঢাকা রেলওয়ে স্টেশনের ম্যানেজার মোহাম্মদ মাসুদ সারওয়ার বলেন, স্বয়ংক্রিয় যে অপারেশন ব্যবস্থা ছিল তা ১২টায় পুনঃস্থাপন হয়েছে। এখন থেকে যে ট্রেনগুলো চলছে সেগুলো স্বয়ংক্রিয় সিগন্যাল ব্যবস্থায় ছেড়ে যাচ্ছে। ম্যানুয়ালি অপারেশন করায় ট্রেন বিলম্ব হয়েছে। যার কারণে যাত্রীদের ভোগান্তি হয়েছে।
আমরা মনে করি, ট্রেন ভ্রমণ হচ্ছে নিরাপদ ও আরামের। নিরাপদে দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার জন্যে যাত্রীরা ট্রেনে ভ্রমণ করে থাকেন। কাজেই এই ট্রেনে সিডিউল বিপর্যয়ের কারণে এবং ট্রেন ভ্রমণে টিকিট সংগ্রহে হয়রানি ও দুর্ভোগের শিকার হবেন যাত্রীরা তা কাম্য হতে পারে না। এই বিষয়টি রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে নজর দিতে হবে। যাত্রী সেবার মান বাড়াতে হবে। ট্রেনে ভ্রমণ হোক আরামের ও স্বস্তির। সরকার সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ নেবে, সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য