-->

সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির বাস্তবায়ন হোক

নিজস্ব প্রতিবেদক
সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবির বাস্তবায়ন হোক

স্বতস্ত্র পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের দাবিতে আন্দোলন অব্যাহত রেখেছে রাজধানীর সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা। এই দাবি বাস্তবায়নের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় রূপান্তর কমিশন গঠন করার দাবি জানিয়ে আসছেন শিক্ষার্থীরা। এই কমিশন গঠন না করা পর্যন্ত তারা আন্দোলন চালিয়ে যাবে বলে ঘোষণা দিয়েছে। এজন্য তারা তিনদিন সময় নির্ধারণ করে আল্টিমেটাম দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যে দাবি মেনে না নেওয়া হলে কঠোর আন্দোলনের হুঁশিয়ারি দিয়েছে শিক্ষার্থীরা। আমরা মনে করি, শিক্ষার্থীদের এই দাবি যুক্তসংগত। মনে রাখতে হবে, শিক্ষা জাতির মেরুদণ্ড। এই শিক্ষা ব্যবস্থার উন্নয়ন না হলে জাতি যে পিছিয়ে পড়বে সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের এই দাবি বাস্তবায়ন হলে শিক্ষা ব্যবস্থা আরেক ধাপ এগিয়ে যাবে বলে আমরা মনে করি।

আমরা জানি, ২০১৭ সালের ফেব্রুয়ারিতে ঢাকার ৭টি সরকারি কলেজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হয়। কলেজগুলো হচ্ছে: ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ, সরকারি শহীদ সোহরাওয়ার্দী কলেজ, কবি নজরুল সরকারি কলেজ, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ, সরকারি বাংলা কলেজ ও সরকারি তিতুমীর কলেজ। এর আগে এসব কলেজ জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ভুক্ত ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত ছিল হঠকারী ও জবরদস্তিমূলক। যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন তাদের শিক্ষার্থীদের শিক্ষা ও প্রশাসনিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে চালাতে পারছে না, সেখানে তাদের ওপর বাড়তি চাপ সৃষ্টি ছিল অন্যায্য ও অনাকাক্সিক্ষত। এ ছাড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের এই সিদ্ধান্তের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন ছিল। উল্লিখিত সাত কলেজের বাইরেও তো অনেক ভালো মানের কলেজ আছে। প্রকৃতপক্ষে এই সাত কলেজকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত করার পেছনে একটা দুরভিসন্ধি ছিল। সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার আগ্রহে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন সাবেক উপাচার্য এ সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের সুনাম ক্ষুণ্ন করতে। উচ্চপর্যায়ের সিদ্ধান্তের কারণে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সাত কলেজের দায়িত্ব নিলেও তারা যথাসময়ে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষা ও প্রশাসনিক কাজসম্পন্ন করতে পারেনি। এর বিরুদ্ধে দফায় দফায় আন্দোলন ও রাজপথে সংঘর্ষ হয়েছে। সময়মতো পরীক্ষার দাবিতে আন্দোলন করতে গিয়ে পুলিশের গুলিতে তিতুমীর কলেজের এক শিক্ষার্থী চিরতরে দৃষ্টিশক্তি হারিয়েছেন।

আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে শিক্ষা ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসরে লক্ষ্যে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে সভাপতি করে একটি কমিটি গঠন করা হয়েছে। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধিভুক্ত সাতটি সরকারি কলেজের শিক্ষা ও প্রশাসনিক সমস্যা নিরসনে কমিটি গঠনের খবরটি ইতিবাচক। আমরা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানাই। সংশ্লিষ্ট কলেজের শিক্ষার্থীরা দীর্ঘদিন আন্দোলন করলেও বিগত আওয়ামী লীগ সরকার কোনো পদক্ষেপ নেয়নি। কমিটির কার্যপরিধিতে বলা হয়েছে, এই কমিটি সাত কলেজের একাডেমিক ও প্রশাসনিক সমস্যা চিহ্নিত করে সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় সুপারিশ প্রণয়ন করবে। ছয় সপ্তাহের মধ্যে তা করতে বলা হয়েছে। সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা প্রথমে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত হওয়ায় সন্তোষ প্রকাশ করেছিলেন এই ভেবে যে তাদের শিক্ষার মান বাড়বে। বাস্তবে ফল হয়েছে উল্টো। জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীন কলেজগুলোর পরীক্ষা ও ফল প্রকাশ যথাসময়ে হলেও সাত কলেজের পরীক্ষা আটকে যায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রয়োজনীয় সংখ্যক লোকবল না থাকায়। এ প্রেক্ষাপটে সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা আর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধিভুক্ত থাকতে আগ্রহী নন। তারা আলাদা একটি পূর্ণাঙ্গ স্বায়ত্তশাসিত পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি করছেন।

শিক্ষার্থীরা সরকারের উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। একই সঙ্গে কমিটিতে তাদের প্রতিনিধি রাখার দাবি জানিয়েছেন। আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা কমিটির কার্যপরিধি নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন। তারা বলেছেন, কমিটির কার্যপরিধিতে সংস্কারের কথা থাকলেও তাদের দাবি পূর্ণাঙ্গ বিশ্ববিদ্যালয়।

আমরা আশা করব, সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নিয়ে একটি স্বতন্ত্র বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার উদ্যোগ নিবে সরকার। এছাড়াও কমিটির সদস্যরা কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়ার আগে শিক্ষার্থীদের সঙ্গেও কথা বলবেন। কমিটি বা সরকারের এমন কিছু করা ঠিক হবে না, যাতে শিক্ষার্থীদের আবার আন্দোলনে নামতে হয়। তারা যে সিদ্ধান্তই নিন না কেন, সেটা শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে করাই সমীচীন হবে। এনিয়ে সুপরিকল্পিত উদ্যোগ নিয়ে সাত কলেজের শিক্ষার্থীদের মুখে হাসি ফোটাবে সরকার সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version