রাজনৈতিক দলেন কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে যে নতুন করে সহিংসতার জন্ম দিয়েছে সেকথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গত কয়েকদিনে জাতীয় পার্টির কার্যালয় ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা তারই ইঙ্গিত বহন করে বলে আমরা মনে করি। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে খুলনায় জাপা কার্যালয়ে আগুন শিরোনামে প্রকাশিত খবরটি তারই দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। গতকাল খুলনায় জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলা ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের ঘটনা ঘটেছে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার রাজধানী ঢাকার কাকরাইল এলাকায় জাতীয় পার্টির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নি সংযোগের মতো দুঃখজনক ঘটনা ঘটেছে। এরপর থেকে এই ক্ষতিগ্রস্ত জাপা কার্যালয়টি নিরাপত্তা বেষ্টনী জোরদার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা। ওইদিন সন্ধ্যায় ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্রশ্রমিক জনতার ব্যানারে একটি মিছিল নিয়ে কাকরাইলের জাপা কার্যালয়ের সামনে গেলে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করার ঘটনা থেকেই এই অসন্তোষের জন্ম হয়েছে বলে প্রকাশিত খবরটিতে দাবি করা হয়েছে। এটা খুবই দুঃখজনক বিষয় বলে আমরা মনে করি। আমরা আশা করেছিলাম, জুলাই-আগস্টের ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে রাজনীতিতে সহিংসতা ও জবরদস্তির সংস্কৃতির অবসান ঘটবে এবং যেকোনো রাজনৈতিক দল ও সংগঠন নির্বিঘ্নে কর্মসূচি পালন করতে পারবে। কিন্তু জাতীয় পার্টির প্রতিবাদ কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে আবার সহিংসতা ফিরে আসাটা অত্যন্ত উদ্বেগজনক। গত বৃহস্পতিবার জাতীয় পার্টির কার্যালয়ে হামলার ঘটনা নিয়ে পরস্পরবিরোধী বক্তব্য এসেছে। জাতীয় পার্টির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, শুক্রবারের কর্মসূচি সফল করতে দলের নেতাকর্মীরা দলীয় কার্যালয়ে এসেছিলেন। এরই মধ্যে একদল লোক মিছিল নিয়ে এসে সেখানে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করেন। অন্যদিকে ‘ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতার পক্ষ থেকে বলা হয়, তাদের শান্তিপূর্ণ মিছিলে জাতীয় পার্টির কার্যালয় থেকে হামলা চালানো হয়।
দলীয় কার্যালয়ে হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনার প্রতিবাদে গত শনিবার আহূত জাতীয় পার্টির সমাবেশকে কেন্দ্র করে আরেক দফা উত্তেজনা হয়। ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতার ব্যানারে সেই সমাবেশ প্রতিহত করার ঘোষণা দেওয়া হয়। শুক্রবার জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান জি এম কাদের সংবাদ সম্মেলন করে দাবি করেন, তারা ফ্যাসিবাদের দোসর ছিলেন না; বরং স্বৈরাচারী সরকারের আমলে তারাও নিগ্রহের শিকার হয়েছেন। যেকোনো মূল্যে শনিবার ঢাকায় সমাবেশ করার ঘোষণা দেন তিনি। এরপর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা নামের সংগঠনটি একই স্থানে একই সময়ে কর্মসূচি পালনের ঘোষণা দিলে উত্তেজনাকর পরিস্থিতি তৈরি হয়। এ অবস্থায় ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের পক্ষ থেকে গতকাল রাজধানীর কাকরাইলসহ আশপাশের এলাকায় সভা-সমাবেশ, মিছিল, শোভাযাত্রা ও বিক্ষোভ নিষিদ্ধ করলে দুই পক্ষই কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করে। এর মাধ্যমে উভয় পক্ষ রাজনৈতিক সহনশীলতার পরিচয় দিয়েছে। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন গত জুলাই মাসে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলন করে, যা পরে এক দফা দাবিতে রূপ নেয় এবং আওয়ামী লীগ সরকারের পতন ঘটায়। সেই সময়ে কিন্তু ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র, শ্রমিক, জনতা নামে পৃথক কোনো সংগঠনের তৎপরতা দেখা যায়নি। এ দুই সংগঠনের মধ্যে সম্পর্ক কী, তা-ও আমরা জানি না।
আমরা মনে করি, কোনো রাজনৈতিক দলকে তাদের কর্মসূচি পালন করতে দেওয়া হচ্ছে গণতান্ত্রিক অধিকার। আর তা প্রতিহত করা বা বাধা দেওয়ার ঘোষণা দেওয়া দুঃখজনক ছাড়া আর কিছু নয়। এটা গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ বিনষ্টের সামিল। এ ধরনের ঘটনায় বক্তৃতা-বিবৃতি আইনশৃঙ্খলা তথা জননিরাপত্তার জন্য খুবই উদ্বেগজনক। গণতান্ত্রিক সমাজে যার যার অবস্থান থেকে কর্মসূচি পালন করবে, এটাই প্রকৃত গণতন্ত্রের বৈশিষ্ট ও সংস্কৃতি হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি। প্রত্যেকটি রাজনৈতিক দলকে তাদের কর্মসূচি পালনে স্বাধীনতা দিতে হবে। এটাই হচ্ছে গণতন্ত্রের উদাহরণ ও দৃষ্টান্ত। আমাদের রাজনৈতিকদলগুলো সেই দৃষ্টান্ত বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশে প্রকৃত গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠা করবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য