দিনকয়েক আগে আমার এক বন্ধুর সঙ্গে কথা হচ্ছিল। বর্তমানে তিনি আমাদের পার্শ্ববর্তী একটি দেশে গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে কর্মরত আছেন। রাতে নির্দিষ্ট একটি সময়ে নিয়মিতই কথা হয় তার সঙ্গে। হঠাৎ সপ্তাহদুয়েক আগে তাকে ফোনে পাচ্ছিলাম না। খানিকটা দুশ্চিন্তা নিয়েই পরদিনও তাকে ফোন দিলাম এবং কথা হলো। তিনি জানালেন, অসুস্থ ছিলেন বেশ কয়েকদিন। আর ওই কারণে কারো ফোনই ধরতে পারেননি ওই সময়ে। এজন্য খানিকটা দুঃখও প্রকাশ করলেন। যাই হোক, আমি তার কাছে জানতে চাইলাম চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে যেতে হয়েছিল কিনা? তিনি জানালেন, হ্যাঁ।
স্বাস্থ্য, চিকিৎসা ও চিকিৎসাব্যবস্থা এবং যোগাযোগ নিয়ে আমার আগ্রহ সম্পর্কে তার জানা ছিল। আমার প্রশ্নের সুরে কিছুটা আঁচ করে স্বগোতক্তি করে বলেন, ‘ভাই, এজন্যই বাংলাদেশের মানুষ চিকিৎসার জন্য এদেশে পাড়ি জমায়।’ আমি জানতে চাইলাম, ‘বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলবেন?’ তিনি তার অভিজ্ঞতার ঝাঁপি খোলেন। আজকের লেখাটি মূলত হাসপাতালে আমার বন্ধুর অভিজ্ঞতা ও আমাদের কথাবার্তার আলোকেই।
শুরুতেই তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের হাসপাতালগুলোতে রোগীর কথা শোনার জন্য কেউ নেই। রোগীর কথা কেউ শোনে না। রোগীর কথা ডাক্তার শোনে না। নার্সরা শোনে না। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষও শোনে না। পয়সা নিয়েও তারা কথা শোনে না।’ ইংরেজি সাহিত্যের সাবেক শিক্ষার্থী আমার বন্ধু আরও বলেন, ‘অথচ বিষয়টি কী জানেন? হাসপাতালে রোগীরা গল্প বলতে আসেন। টাকা দিয়ে গল্প বলতে চান। গল্প বলেই আরাম পান।’ এই গল্পের বিষয়টিতে বেশ কৌতূহলি হয়ে আমি জানতে চাইলাম, বিষয়টি একটু বুঝিয়ে বলবেন? তিনি তখন বলেন, ‘ধরুন চিকিৎসার প্রয়োজনে আমি বাংলাদেশের কোনো সরকারি কিংবা বেসরকারি হাসপাতালে গেলাম। আমি জানি না কোন ডাক্তার দেখাব; কোথায় দেখাব। আর এজন্য আমাকে খুঁজতে হবে হাসপাতালের তথ্যকেন্দ্র। বেশিরভাগ হাসপাতালে এরকম তথ্যকেন্দ্র নেই। আর থাকলেও সেখানকার লোকজন খুবই বিরক্ত হয়ে, গোমড়া মুখে তথ্য দেন। ভাবখানা এমন যেন কোনো কিছু জানতে চেয়ে আপনি অপরাধ করে ফেলেছেন। আবার চিকিৎসা নিয়ে বের হয়ে আসার সময় কেউ জানতে চাইবে না এখানে চিকিৎসাসেবা নিতে গিয়ে আপনার অভিজ্ঞতা কেমন হলো।’
আমি জানতে চাইলাম, ভিন দেশে এ বিষয়ে আপনার অভিজ্ঞতার কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘হাসপাতালের মূল ফটক থেকে শুরু করে ডাক্তারের চেম্বার পর্যন্ত বিভিন্ন পর্যায়ে দায়িত্বপ্রাপ্ত লোকজন আমার সমস্যার কথা জানতে চেয়েছে। তাদের কণ্ঠে ছিল শ্রদ্ধা ও আন্তরিকতা। আচরণে ছিল ধৈর্য্য। মনোভাবে ছিল আমার বিপদে হাত বাড়িয়ে দেওয়া আকাক্সক্ষা। প্রয়োজনে আমার পাশে থাকা ইচ্ছা। আবেগে আমার কষ্টের সমব্যাথী হওয়া চেষ্টা। তাদের আচরণেই আমি আরাম বোধ করেছি। সুস্থ হয়েছি ডাক্তারের দেওয়া ওষুধে এবং ওপরওয়ালার কৃপায়।’
বন্ধুর রোগ ও আরোগ্যের কথা যখন শুনছি, এর ফাঁকেই কিছু প্রশ্ন ছুড়ে দিলেন তিনি, ‘প্রতিবছর বাংলাশে থেকে লক্ষাধিক মানুষ পার্শ্ববর্তী দেশের চিকিৎসা নিতে কেন আসে জানেন? মাঝে-মধ্যেই খবরে দেখি আমাদের হাসপাতালগুলোতে রোগীর লোকজন ভাঙচুর করেছে; অভিযোগ তুলেছে ভুল চিকিৎসার; এবং আঘাত করেছে ডাক্তার ও নার্সদের। কেন জানেন?’ আমার কাছে তাৎক্ষণিক কোনো উত্তর ছিল না। আমার জবাবের অপেক্ষা না করেই তিনি বলেন, ‘এর মূল কারণ হলো কেউই রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে, অন্তর দিয়ে, আবেগ দিয়ে শোনে না।’
বিভিন্ন পরিসংখ্যানে দেখা যাচ্ছে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ভারতে চিকিৎসা নিতে যাওয়া ৪৫-৫০ ভাগ রোগীই বাংলাদেশি। অপর এক পরিসংখ্যান অনুযায়ী এদেশ থেকে কেবল চিকিৎসা নিতেই প্রতিবছর প্রায় দেড় লাখ থেকে আড়াই লাখ মানুষ ভারতে যায়। অন্যদিকে বাংলাদেশে স্বাস্থ্য ক্ষেত্রে কর্মস্থলে সহিংসতাবিষয়ক গবেষণাগুলোর দিকে চোখ বুলালে দেখা যায়, ডাক্তার ও নার্সসহ অন্যান্য স্বাস্থ্যসেবা কর্মীরা কর্মজীবনের কোনো কোনো পর্যায়ো রোগী ও আত্মীয়-স্বজনদের কাছ থেকে মৌখিক, শারীরিক ও মানসিক সহিংসতার শিকার হয়েছেন। মৌখিক সহিংসতাগুলোর মধ্যে রয়েছে হুমকি-ধমকি, ভয় দেখানো, হয়রানি ও গালিগালাজ। অন্যদিকে শারীরিক সহিংসতার মধ্যে রয়েছে ধাক্কা দেওয়া, ঠেলাঠেলি করা, মারধোর, টেবিল-চেয়ার-জানালা ও অন্যকিছু ভাঙচুর করা এবং রোগীর মৃত্যুর সময় জনতার সহিংসতা।
একটু গভীরভাবে তলিয়ে দেখলে দেখা যাবে যে, এসব সহিংসতার মূলে রয়েছে রোগী ও তার স্বজনদের কথা শোনার ব্যবস্থা হাসপাতালে না থাকা। স্বাস্থ্যসেবাকর্মী ও রোগীর মাঝে কার্যকর যোগাযোগ ঘাটতি। চিকিৎসা ও আরোগ্যের প্রশ্নে রোগী ও স্বাস্থসেবাকর্মীদের মাঝে ভুল বোঝাবুঝির কারণেই মূলত এই সহিংসতার শুরু হয়। হাসপাতালের জরুরি বিভাগ, রাতের শিফটেও জাটিল কোনো রোগের চিকিৎসা চলাকালীন এই সহিসংতার ঘটনাগুলো ঘটে। অথচ কেবল কার্যকর যোগাযোগ, আন্তরিক সেবা প্রদান ও রোগীর প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে চিকিৎসাসেবা প্রদানের মাধ্যমেই এসব ঘটনা এড়ানো সম্ভব। কেননা গবেষণায় দেখা গেছে রোগী ও তার স্বজনদের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ করতে পারলে তাদের দুশ্চিন্তা, রাগ ও ক্ষোভের মাত্রা কমে। জীবনের কঠিন মুহূর্তকে মোকাবেলার আত্মবিশ্বাস বাড়ে। রোগীও ডাক্তার প্রদত্ত চিকিৎসা পরিকল্পনা মেনে চলে অক্ষরে অক্ষরে। শুধু তাই নয়, রোগীর কথা একটু মনোযোগ দিয়ে শুনলেই ডাক্তার জানতে পারেন রোগের অন্তর্নিহিত কারণসমূহ। অন্য এক গবেষণায় দেখা যাচ্ছে, যেসব ফিজিওথেরাপিস্ট রোগীর কথা মনোযোগ দিয়ে শোনেন তাদের রোগী দ্রুত ব্যথা মুক্ত হচ্ছেন। শুধু তাই নয়, কেবল রোগীর কথা আন্তরিকভাবে শোনার কারণেই প্রত্যাশার তুলনায় বেশ কয়েকদিন আগেই ঠান্ডা ও জ্বরের মতো রোগ থেকে আরোগ্য লাভ করেন বলে গবেষণায় দেখা গেছে।
কাজেই হাসপাতালগুলোর উচিত এমন কর্মকর্তা নিয়োগ করা যার কাজ হবে রোগীর কথা শোনা। হাসপাতাল ও সেবা সম্পর্কে রোগীর মতামত ও অভিজ্ঞতা সংগ্রহ করা। এই বিভাগটি পরিচালিত হতে পারে একজন চিফ লিসেনিং অফিসার তথা প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তার অধীনে। এই কর্মকর্তা মূলত যোগাযোগবিদ্যা, মনোবিদ্যা, স্বাস্থ্যবিদ্যা ও জনস্বাস্থ্য বিষয়ে দক্ষ হবেন। এই প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তা এমন এক ব্যবস্থা গড়ে তুলবেন ও তা বাস্তবায়ন করবেন যেখানে একাধিক কর্মকর্তা রোগীর কথা শোনার কাজে নিয়োজিত থাকবেন। আর সেক্ষেত্রে জরিপ, সাক্ষাৎকার, ফোকাস গ্রুপ আলোচনাসহ নানা পদ্ধতি ব্যবহার করা যেতে পারে। প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তা এসব তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রোগীর সন্তুষ্টি, অসন্তুষ্টি, ক্ষোভ ও প্রত্যাশার প্রবণতা নির্ণয় করবেন। খুঁজে বের করবেন হাসপাতালের উন্নতির জায়গাগুলো। নির্ধারণ করবেন সম্ভব্য অগ্রাধিকার ও চ্যালেঞ্জের জায়গাগুলো। তারপর রোগীর এই ফলাবর্তনগুলো হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা-কর্মচারী, প্রশাসক, ব্যবস্থাপক, ডাক্তার, নার্সসহ সংশ্লিষ্ট সবার সঙ্গে নিয়মিত বিনিময় করবেন। এতে করে সম্ভব হবে সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ ও কাক্সিক্ষত পরিবর্তন নিশ্চিত করা।
প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তা মূলত হাসপাতালের বিভিন্ন পর্যায়ে রোগীর পক্ষে কথা বলবেন। ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে তুলে ধরবেন রোগীর চাহিদা, ভালো-মন্দ, রাগ, ক্ষোভ, প্রত্যাশার কথাগুলো। শুধু তাই নয়, তিনি হাসপাতালে উন্মুক্ত যোগাযোগের সংস্কৃতি গড়ে তুলবেন। এই সংস্কৃতি হাসপাতালে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতে জোরাল ভূমিকা রাখবে। ইউরোপের বিভিন্ন হাসপাতালে পরিচালিত বিভিন্ন বিভিন্ন গবেষণা বলছে প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তা নিয়োগের ফলে সেবা সম্পর্কে রোগীর সন্তুষ্টির মাত্রা বেড়েছে; স্বাস্থ্যসেবার গুণগত মান বৃদ্ধি পেয়েছে; স্বাস্থ্যসেবা কর্মীদের কর্ম ও জীবন সন্তুষ্টি বেড়েছে; হাসপাতাল পারিচালনায় অর্থ ও কর্মী বাহিনীকে অধিকরতার কার্যকরভাবে কাজে লাগানো সম্ভব হয়েছে; হাসপাতালে চিকিৎসাসেবা ও কর্মীদের প্রতি রোগীদের আস্থা বেড়েছে এবং সামগ্রিকভাবে হাসপাতালের সুনাম বেড়েছে। এসব সম্ভব হয়েছে কারণ সক্রিয়ভাবে রোগীর কথা শোনার কারণে বিভিন্ন সমস্যার তাৎক্ষণিক সমাধান; ক্লিনিক্যাল প্রক্রিয়ার উন্নতি; হাসপাতালে উন্মুক্ত ও স্বচ্ছ যোগাযোগের সংস্কৃতি চর্চা।
এই প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তার অধীনে পরিচালিত বিভাগটির প্রাথমিক কাজগুলোর মধ্যে থাকতে পারে রোগীর কথা শোনা; ডাক্তার-নার্সসহ সকল কর্মীবাহিনীর কথা শোনা; সেবার মান উন্নত করা। রোগীর কথা শোনার ক্ষেত্রে তারা হাসপাতালে আসা প্রত্যেক রোগীর আশঙ্কা, ভয় ও প্রত্যাশার কথা শুনবেন। তদারকি করতে পারেন রোগীর সন্তুষ্টির জরিপসমূহ; বিভিন্ন সামাজিক মিডিয়ায় রোগী ও তার স্বজনদের প্রতিক্রিয়া ও ফলাবর্তন; রোগীর মৌখিক ও লিখিত অভিযোগ কিংবা প্রশংসার কথা। অন্যদিকে হাসপাতালে কর্মরত কর্মীবাহিনীর কথা শোনার প্রশ্নে হাসপাতালের অভ্যন্তরে একটি ফিডব্যাক চ্যানেল স্থাপন করা; বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে কার্যকর যোগাযোগ নিশ্চিত করা; ভিন্ন ধরনের সংঘাত নিরসনে সহায়তা করা জরুরি। এছাড়া হাসপাতালে সেবার গুণগত মানোন্নয়নের প্রশ্নে যা করতে পারেন তা হলো রোগীদের ভিন্ন অভিযোগের প্যাটার্ন অনুসরণ করা; হাসপাতালে রোগীর সন্তুষ্টির মাত্রা কমাতে পারে এমন ভিন্ন কাঠামোগত বিষয় খুঁজে বের করা। অন্যদিকে এই বিভাগের মৌলিক কাজগুলো হতে পারে রোগীর যেকোনো প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সাড়া দেওয়া; দীর্ঘমেয়াদি বিভিন্ন কর্মকাণ্ড পরিচালনা করা। রোগীর প্রয়োজনে তাৎক্ষণিক সাড়া প্রদানের প্রশ্নে দিন-রাত ২৪ ঘণ্টা হটলাইন সেবা থাকতে পারে; কর্মীবাহিনী রোগীর সঙ্গে কথা বলতে পারেন এবং সেবা পেতে সহায়তা করতে পারেন; হঠাৎ উদ্ভূত জরুরি অবস্থা মোকাবিলা করতে সহায়তা করতে পারেন। অন্যদিকে দীর্ঘমেয়াদি কর্মকাণ্ডের মধ্যে থাকতে পারে রোগীর সন্তুষ্টি বৃদ্ধিতে প্রয়োজনীয় উদ্যোগ গ্রহণ; কর্মীবাহিনীর কল্যাণমূলক উদ্যোগ গ্রহণ; ডাক্তার-নার্সসহ সবার সাংস্কৃতিক ও যোগাযোগ দক্ষতার বাড়ানোর উদ্যোগ গ্রহণ এবং সমাজের সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলার উদ্যোগ গ্রহণ।
এই প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তার অফিসের কাঠামোটি হতে পারে ঠিক এরকম : ফ্রন্টলাইন শ্রোতা কর্মীবাহিনী, বিশ্লেষণ দল ও বাস্তবায়ন দল। এই ফ্রন্টলাইন শ্রোতা বাহিনী মূলত রোগী ও হাসপাতালে চিকিৎসা ব্যবস্থার মাঝে সমন্বয় বা সংযোগ স্থাপনকারীর ভূমিকা পালন করবেন। তারা অন্যান্য কর্মকর্তা ও সেবাকর্মীদের প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানে দক্ষ হবেন। পুরো হাসপাতালে সামগ্রিক যোগযোগ ব্যবস্থার সমন্বয় সাধন করবেন। রোগী, রোগীর আত্মীয়-স্বজন ও অন্যান্য সামাজিক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে মধ্যস্ততাকারীর ভূমিকা পালন করবেন। দক্ষ হবেন জরুরি অবস্থা মোকাবিলায়। অন্যদিকে বিশ্লেষণী দল সংগৃহীত বিভিন্ন তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করবেন এবং সেবার মানোন্নয়নে দক্ষ হবেন। এই দলটি মূলত পেশাদার গবেষক ও প্রবণতা বিশ্লেষক। অন্যদিকে বাস্তবায়ন দলে থাকবেন প্রকল্প ব্যবস্থাপক, পরিবর্তন ব্যবস্থাপনা বিশেষজ্ঞ, প্রশিক্ষণ সমন্বয়ক, হাসপাতালে বিভিন্ন বিভাগের সঙ্গে সংযোগস্থাপনকারী ও ফলো-আপ বিশেষজ্ঞ।
এখন প্রশ্ন হলো এই বিভাগের সাফল্য-ব্যর্থতা কীভাবে মাপা হবে? ওই প্রশ্নে আমার পরামর্শ হলো এজন্য কিছু সূচক নির্ধারণ করতে হবে। যেমন কর্মদক্ষতা মাপার জন্য যে সূচকগুলো থাকতে পারে তা হলো কত সময়ের মধ্যে রোগীর প্রয়োজনে সাড়া প্রদান করছেন; রোগীর ও স্বজনের সঙ্গে হাসপাতালে সেবাকর্মীদের সংঘাত নিরসন ও রোগীর সন্তুষ্টির হার; বিভিন্ন কর্মসূচি বাস্তবায়নে সফলতার হার; কর্মীবাহিনীর সম্পৃক্ততার স্তর; হাসপাতালের সেবায় রোগীর সন্তুষ্টির স্কোর; যোগাযোগের কার্যকারিতা, সাংস্কৃতিক দক্ষতার স্তর এবং ডাক্তার-নার্সসহ সবার পেশাগত সন্তুষ্টির স্কোর ইত্যাদি।
যাইহোক, ওপরের আলোচনা থেকে আমাদের সামনে একটি বিষয় স্পষ্ট। আর তা হলো গুণগত মানসম্মত সেবা প্রদান, রোগীর সন্তুষ্টি, রোগীর আস্থা অর্জন ও সমাজে সুনাম অর্জনে রোগী ও স্বজনদের কথা শোনার বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে হাসপাতালে প্রধান শ্রোতা কর্মকর্তার ধারণাটি একেবারেই নতুন। বিশ্বমানের চিকিৎসাব্যবস্থা গড়ে তোলার প্রশ্নে এই ধারণার বাস্তবায়ন খুবই জরুরি। আর সেক্ষেত্রে হাসপাতালগুলোকে যোগাযোগের একটি আদর্শ মানদণ্ড প্রতিষ্ঠা করতে হবে। এই মানদণ্ডের অধীনে প্রণয়ন করতে হবে সক্রিয় শ্রবণ প্রোটোকল, সুস্পষ্ট নথিবদ্ধ প্রক্রিয়া, স্বচ্ছ প্রতিবেদন প্রক্রিয়া; এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক যোগাযোগ পদ্ধতি। অর্থনৈতিক বিনিয়োগের সামর্থ্য থাকলে হাসপাতালগুলো এক্ষেত্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা-চালিত বিশ্লেষণ পদ্ধতি, মোবাইল ফলাবর্তন প্ল্যাটফর্ম, রিয়েল-টাইম সাড়া প্রদান ব্যবস্থা; প্রেডিক্টিভ অ্যানালাইটিকস ও ভার্চুয়াল সাপোর্ট সার্ভিস চালু করতে পারে। আর তাহলে আমরা পাব একটি মানবিক, রোগীকেন্দ্রিক ও বিশ্বমানের হাসপাতালভিত্তিক চিকিৎসা ব্যবস্থা। সেবার প্রশ্নে রোগীদের রাগ ও ক্ষোভের মাত্রা কমবে। হাসপাতালে কর্মরত ডাক্তার নার্স ও অন্যান্য কর্মীদের পেশাগত সন্তুষ্টি বাড়বে। মানুষের আস্থা বাড়বে দেশের চিকিৎসক ও চিকিৎসাব্যবস্থার প্রতি। চিকিৎসার প্রশ্নে দেশের বাইরে যাওয়ার প্রবণতা কমবে। সাশ্রয় হবে দেশের অর্থ। সবচেয়ে বড় কথা সেবাদানের প্রশ্নে হাসপাতালকে শুনতে হবে রোগীর কথা, রোগীর পরিবারের কথা, ডাক্তার, নার্সসহ অন্যান্য কর্মীবাহিনীর কথা এবং সমাজের কথা। তাহলেই আমাদের হাসপাতালগুলো হয়ে উঠবে মানবিক প্রতিষ্ঠান।
লেখক: কলামিস্ট
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য