-->
জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস

নতুন সূর্যোদয়ের নতুন ইতিহাস

নিজস্ব প্রতিবেদক
নতুন সূর্যোদয়ের নতুন ইতিহাস

আজ ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস। ১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বরের সিপাহি-জনতার বিপ্লবের মধ্য দিয়ে জিয়াউর রহমানের জীবনে নতুন অধ্যায়ের সূচনা হয়। সরকার-পরিবর্তনের মধ্য দিয়ে নতুন পরিস্থিতিতে এ বছর আড়ম্বরে দিবসটিকে উদযাপনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে বিএনপি। কর্মসূচির মধ্যে রয়েছে সাবেক রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান বীর উত্তমের কবরে পুষ্পস্তবক অর্পণ ও ফাতেহা পাঠ, ৮ নভেম্বর শুক্রবার রাজধানীতে বর্ণাঢ্য র‌্যালি, জাতীয়তাবাদী সামাজিক সাংস্কৃতিক সংস্থা-জাসাসের উদ্যোগে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় জাতীয় শহীদ মিনারে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান। আমরা বিশ্বাস করি, এই দিবসটি যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে দিবসের তাৎপর্য ও গুরুত্ব তুলে ধরা হবে।

১৯৭৫ সালের ৩ নভেম্বর ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীদের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণের নামে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে একটি অভ্যুত্থান সংঘটিত হয়। এই অভ্যুত্থানের সূচনা পর্বেই জিয়াউর রহমানকে বন্দি করা হয় এবং সেনাবাহিনী প্রধানের পদ থেকে সরিয়ে দেওয়া হয়। তার স্থলে ব্রিগেডিয়ার খালেদ মোশাররফকে মেজর জেনারেল পদোন্নতি দিয়ে সেনাবাহিনী প্রধান নিযুক্ত করা হয়। ৩ নভেম্বর থেকে ৬ নভেম্বর মধ্য রাত পর্যন্ত দেশে একটা আতঙ্কজনক ও শ্বাসরুদ্ধকর অবস্থা বিরাজ করে। ৩ নভেম্বরের অভ্যুত্থান সেনাবাহিনীর কর্মকর্তাদের একটি ক্ষুদ্র অংশের দ্বারা সংঘটিত হওয়ায় এবং প্রায় সঙ্গে সঙ্গে এর একটি রাজনৈতিক পরিচয় দাঁড়িয়ে যাওয়ায় সেনাবাহিনীর বৃহদাংশের বিশেষ করে সিপাহিদের মধ্যে ব্যাপক বিক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া দেখা যায়। এই প্রতিক্রিয়ার পেছনে আরও একটা বড় কারণ ছিল জিয়াউর রহমানকে সরিয়ে দেওয়া এবং আটক করা। জিয়াউর রহমান সেনাবাহিনীর সর্বমহলে বিশেষত সিপাহিদের কাছে ছিলেন খুবই প্রিয়। তারা অভ্যুত্থানের বিরুদ্ধে পাল্টা ব্যবস্থা গ্রহণ ও জিয়াউর রহমানকে মুক্ত করার পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। ৬ নভেম্বর মধ্যরাতে নারায়ে তকবির আল্লাহু আকবর ও বাংলাদেশ জিন্দাবাদ ধ্বনির মধ্য দিয়ে সংঘটিত হয় এক অনন্য সাধারণ বিপ্লবÑ যা ইতিহাসে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবস হিসেবে স্থান লাভ করেছে। বিপ্লবীরা প্রথমে জিয়াউর রহমানকে বন্দিদশা থেকে মুক্ত করে এবং তাকে কাঁধে নিয়ে উল্লাসের মধ্য দিয়ে পূর্বপদে বরণ করে নেয়। বিশ্বের কোনো সেনানায়ককে অফিসার ও সিপাহিরা এভাবে পদে ও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করেছেনÑ এমন নজির বিরল।পরে ৭ নভেম্বর জাতির উদ্দেশে রেডিওতে প্রদত্ত ভাষণে জিয়াউর রহমান বলেন, আমি মেজর জেনারেল জিয়া বলছি। বর্তমান পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জনগণ, সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী আর পুলিশ, বিডিআর, আনসার এবং অন্যদের অনুরোধে আমাকে সাময়িকভাবে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশের ডেপুটি চিফ মার্শাল ’ল অ্যাডমিনিস্ট্রেটর ও সেনাবাহিনী প্রধান হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করতে বলা হয়েছে। এ দায়িত্ব ইনশাল্লাহ আমি সুষ্ঠুভাবে পালন করতে যথাসাধ্য চেষ্টা করবো। আপনারা সকলে শান্তিপূর্ণভাবে যথাস্থানে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করুন। দেশের সর্বস্থানে, অফিস-আদালত, ব্যাংক-বিমা, স্থলবন্দর, বিমানবন্দর, নৌবন্দর, যানবাহন ও কলকারখানাগুলো পূর্ণভাবে চালু থাকবে। জিয়াউর রহমানের রাষ্ট্র পরিচালনা ব্যবস্থায় এভাবেই অভিষেক ঘটে। ১৯৭৭ সালের ২১ এপ্রিল প্রেসিডেন্ট সায়েমের স্থলে তিনি প্রেসিডেন্টের দায়িত্ব গ্রহণ করেন। ২২ এপ্রিল রেডিও, টিভি ভাষণে তিনি বলেন, ‘১৯৭৫ সালের ৭ নভেম্বর বিভিন্ন সময়ে দেশ ও জাতি আমার ওপর বিভিন্ন দায়িত্ব ন্যস্ত করেছে। আমি আমার সাধ্যমত সে দায়িত্ব পালনে সচেষ্ট হয়েছি এবং আমাদের সমস্ত কর্মপ্রচেষ্টার ভিত্তি হিসেবে আমাদের সমর্থনের ওপরই নির্ভর করেছি। দেশ পরিচালনার ব্যাপারে অর্থনৈতিক, প্রশাসনিক ও অন্যান্য বিষয়ে ইতোমধ্যে কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে এবং আরও কতিপয় প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এখন আমার ওপর দেশের রাষ্ট্রপতির গুরুদায়িত্ব অর্পণ করা হয়েছে। ইনশাল্লাহ এবারও আমি আপনাদের সহযোগিতা ও সমর্থন নিয়ে দেশ ও জাতির সেবায় নিজেকে সম্পূর্ণ নিয়োজিত করবো।

আমরা মনে করি, ৭ নভেম্বর জাতীয় বিপ্লব ও সংহতির একটি গুরুত্বপূর্ণ ও তাৎপর্যময় দিন।এই দিনটিকে যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমে নতুন প্রজন্মের কাছে জাতীয় বিপ্লব ও সংহতি দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরতে হবে। এই দিবস সম্পর্কে নতুন প্রজন্মকে অবহিত করতে হবে। সিপাহি-জনতার এরূপ সম্মিলিত বিপ্লবের ঘটনাও ইতিহাসে খুব বেশি নেই। স্বাধীনতা, সার্বভৌমত্ব ও জাতীয় অস্তিত্ব যে অনিশ্চয়তা ও বিপন্নতার মধ্যে নিক্ষিপ্ত হয়েছিল, এই বিপ্লবের মধ্য দিয়ে তার অবসান ঘটে। তাই এ বিপ্লব থেকে প্রমাণিত হয় যে, সিপাহি-জনতার ইস্পাতদৃঢ় ঐক্য এবং ঐক্যবদ্ধ তৎপরতাই স্বাধীন অস্তিত্বকে নিরাপদ ও নিশ্চিত করতে পারে। বস্তুত, এই বিপ্লবের পথ ধরে দেশ-জাতিও এক নবঅধ্যায়ে প্রবেশ করে। দেশের মানুষের মন-মানসিকতা, আশা ও আকাক্সক্ষার বাস্তব প্রতিফন ঘটে। কাজেই এই দিবসটি যথাযথভাবে পালনের মাধ্যমেই সবেক প্রেসডেন্ট জিয়াউর রহমানের প্রতি প্রকৃত শ্রদ্ধা জানানো সম্ভব।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version