দেশে অপরাধ প্রবণতা দিনদিনই বাড়ছে বই কমছে না। ফলে জনমনে আতঙ্ক বিরাজ করছে। খুন, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজিসহ নানা অপরাধের ঘটনা প্রতিদিনই ঘটছে। বলার অপেক্ষা রাখে না যে এসব অপরাধ নির্মূলে বরাবরই ব্যর্থতার পরিচয় দিচ্ছে পুলিশ প্রশাসন। আর এর মূলে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের দিন থানা লুটপাটের ঘটনাকে দায়ী করা হচ্ছে। ওইদিন অনেক থানায় অগ্নি সংযোগের ঘটনাও ঘটেছে। লুটে নেয়া হয়েছে বিপুল সংখ্যক অস্ত্র ও গোলাবারুদ। অনেক দিন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর অনুপস্থিতিও লক্ষ্য করা গেছে। পুলিশের অনুপস্থিতিতে ছাত্ররাই ট্রাফিক পুলিশের দায়িত্ব পালন করেছে। আর এই সুযোগেই অপরাধীরা মাথা চাড়া দিয়ে উঠেছে। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এই মর্মে একটি খবরে সে কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এতে উল্লেখ করা হয়েছে, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা বলছেন, গত ৫ আগস্ট তাদের ৫৭ হাজার আগ্নেয়াস্ত্র ও সাড়ে ৬ লাখ গোলাবারুদ লুটপাট করা হয়েছে। লুটে নেয়া অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান অব্যাহত রাখা হলেও ঘটনার তিন মাস পরও প্রায় দেড় হাজার অস্ত্র উদ্ধার করা সম্ভব হয়নি। তবে গত তিন মাসে বিভিন্ন ধরনের ৩ হাজার ৭৬৩টি আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধার হয়েছে। পুলিশের দাবি ৭৫ শতাংশ অস্ত্র উদ্ধার হয়েছে এবং ৬০ শতাংশ গোলাবারুদ উদ্ধার করা গেছে। তাই আইনশৃঙ্খলা অবনতির পেছনে এই অস্ত্র লুটপাটের ঘটনাকে দায়ী করা হচ্ছে। কারণ এসব লুট হয়ে যাওয়া অস্ত্র অপরাধীদের হাতে চলে গেছে। অন্যদিকে পুলিশ পাচ্ছে না আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় প্রয়োজনীয় অস্ত্র। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও মর্মান্তিক বলে আমরা মনে করি। লুটে নেয়া অস্ত্র উদ্ধারে পুলিশের ব্যর্থতা কারো কাম্য হতে পারে না। এই ঘটনার সুরাহা হওয়া উচিত বলে আমরা মনে করি।
পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, সারা দেশে থানা আছে ৬৬৪টি। শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর ৫ আগস্ট বিকেল থেকে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন থানা, ফাঁড়ি, পুলিশ বক্সসহ পুলিশের বিভিন্ন ইউনিট ও স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটে। পুড়িয়ে দেওয়া হয় থানা-পুলিশের কাজে ব্যবহৃত গাড়ি। এসব জায়গা থেকে আগ্নেয়াস্ত্রসহ বিভিন্ন সরঞ্জাম ও নথি লুট হয়। কার্যত ৫ আগস্ট দুপুরের পর সারা দেশে পুলিশি কার্যক্রম বন্ধ হয়ে যায়। পুলিশ সদস্যরা থানায় আসতে সাহস পাননি। একপর্যায়ে পুলিশের বিভিন্ন স্থাপনা পাহারা দেওয়ার জন্য আনসার সদস্য মোতায়েন করা হয়। গত ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকার গঠনের পর ১৩ আগস্ট ঢাকাসহ সারা দেশে থানার কার্যক্রম আবার শুরু হয়। জনমনে ফিরে আসে স্বস্তির নিঃশ্বাস।
এদিকে রাতে রাজধানীর অলিগলিতে ছিনতাইয়ের ঘটনা বেড়েছে, যেখানে অপরাধীরা অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে সাধারণ মানুষ থেকে মূল্যবান জিনিসপত্র ছিনিয়ে নিচ্ছে। শুধু ছিনতাই নয়, বাধা দেওয়ার কারণে বেশ কয়েকটি ঘটনায় নিহতও হয়েছেন পথচারী। গত তিন মাসে ছিনতাইকারীদের হাতে প্রাণ হারিয়েছেন চারজন। লুট হওয়া এসব অস্ত্রের পাশাপাশি লাইসেন্স স্থগিতের পর যেসব অস্ত্র থানায় জমা পড়েনি সেগুলো উদ্ধারেও অভিযানে রয়েছে যৌথ বাহিনী। তবে এ অভিযানে সেগুলোর কতটি উদ্ধার করা হয়েছে সে তথ্য এখনও মেলেনি।
স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী, ২০০৯ সালের ৬ জানুয়ারি থেকে ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট পর্যন্ত বেসামরিক জনগণকে দেওয়া আগ্নেয়াস্ত্রের লাইসেন্স স্থগিত করা হয়েছে। ওই সময় পর্যন্ত যাদের লাইসেন্স দেওয়া হয়েছে, তাদের ৩ সেপ্টেম্বরের মধ্যে গোলাবারুদসহ আগ্নেয়াস্ত্র সংশ্লিষ্ট থানায় জমা দেওয়ার সময় বেঁধে দেওয়া হয়। এই সময়ের মধ্যে যারা অস্ত্র জমা দেননি, তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়। কিন্তু দুঃখজনক হলেও সত্র যে সেই ক্ষেত্রেও সুফল আসেনি।
আমরা চাই, গত ৫ আগস্ট থানা থেকে লুটপাট হয়ে যাওয়া অস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর জোরালো অভিযান। এটা করা সম্ভব হলেই অস্ত্র উদ্ধারে সফলতা আসবে বলে আমাদের বিশ্বাস। তা না হলে এই লুটে নেয়া আগ্নেয়াস্ত্রের মাধ্যমে যেকোনো সময় বড় ধরনের অপরাধ ঘটে যাওয়ার আশঙ্কাকে কোনোভাবেই এড়িয়ে যাওয়া যায় না। বিষয়টি আমলে নিয়ে সরকার অস্ত্র উদ্ধারে জোরালো ভূমিকা নিয়ে সফলতা বয়ে আনবে সেই দাবি রাখছি।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য