-->

লিমনের ন্যায় বিচার দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই

নিজস্ব প্রতিবেদক
লিমনের ন্যায় বিচার দাবির বাস্তবায়ন দেখতে চাই

বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) নির্মমতার শিকার হয়ে পা হারানো ঝালকাঠির সেই লিমন হোসেন বিচারপ্রার্থী হওয়ার সুযোগ পেয়েছেন। গত মঙ্গলবার আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের চিফ প্রসিকিউটর কার্যালয়ে তিনি হাজির হয়ে তার ওপর নির্যাতন ও নির্মমতার বিচার চেয়ে অভিযোগ দেন। সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নিরাপত্তা উপদেষ্টা তারেক আহমেদ সিদ্দিকী, সাবেক র‌্যাব কর্মকর্তা জিয়াউল আহসান ও মেজর রাশেদসহ ৯ জনের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে তিনি এই অভিযোগ দায়ের করেছেন। আবেদনে লিমন বলেন, ন্যায় বিচার চাই। আমার দায়ের করা মামলার সকল আসামির বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করা হোক। হাসিনার শাসন আমলে আমরা চাইলেও দোষী সকল আসামিকে বের করতে পারিনি। উল্টো তার বিরুদ্ধে অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে দুটি মামলা দিয়ে হয়রানি করেছিল র‌্যাব। এক পা নিয়ে লিমনকে ঘুরতে হয় আদালতের দ্বারে দ্বারে। অবশেষে লিমনের বিরুদ্ধে কোনো দোষ না পাওয়ায় ২০১৩ সালে আদালত মামলা দুটি খারিজ করে দেয়। ওই সময় দেশের বিভিন্ন মানবাধিকার সংগঠন এবং নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরা লিমনের পাশে দাঁড়ান। বিচারের দাবি উঠতে থাকে সারা দেশে। ঢাকা, ঝালকাঠিসহ বিভিন্ন স্থানে লিমনের মুক্তি ও বিচারের দাবিতে মানববন্ধনসহ বিভিন্ন কর্মসূচি পালিত হয়। জানা গেছে, ২০১১ সালের ২৩ মার্চ ঝালকাঠির রাজাপুরের জমাদ্দারহাটে র‌্যাবের অভিযানের সময় লিমনের পায়ে অস্ত্র ঠেকিয়ে গুলি করা হয়। ২০১১ সালে উচ্চ মাধ্যমিক (এইচএসসি) পরীক্ষার মাত্র ১২ দিন আগে এ ঘটনা ঘটে। তখন লিমনের বয়স ছিল ১৬ বছর। পরে ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে (নিটোর) চিকিৎসা চলাকালে লিমনের বাঁ পা হাঁটু থেকে কেটে ফেলতে হয়। সেই বছর আর পরীক্ষা দেওয়া হয়নি তার। তবে দমে যাননি লিমন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল অ্যান্ড কলেজ থেকে এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে জিপিএ-৪ পান তিনি। এরপর সাভারের গণবিশ্ববিদ্যালয়ে আইন বিভাগে ভর্তি হন। সেখান থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে আবার একই বিভাগে শিক্ষক হিসেবে যোগ দেন তিনি। হাসিনা সরকারের সময়ে সবচেয়ে বেশি নির্যাতিত হয়েও নিজ চেষ্টা ও সাহসী পদক্ষেপে নিজের পায়ে দাঁড়াতে শিখেছেন লিমন।

আমরা মনে করি, বিগত সরকারের আমলে নিরপরাধ লিমনকে নির্মমভাবে গুলি করে পঙ্গু করা হয়েছে, যা অপূরণীয় ক্ষতি। এই ধরনের নির্মমতার ঘটনা কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। আমরাও এই ঘটনার সুষ্ঠু বিচার চাই। আমরা আশা করি, বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে লিমন শুধু একাই এমন নির্মমতার শিকার হয়েছে তা আমরা মনে করি না। খোঁজ নিলে এমন আরো বহু ঘটনা বের হয়ে আসবে। অথচ সেসব ঘটনা ধামাচাপা দেওয়া হয়েছে। লিমনের মতো যারা এমন নির্মমতার শিকার হয়েছেন, তাদের খুঁজে বের করে সেসব ঘটনার দোষীদের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করতে হবে। দোষীদের বিচারের আওতায় আনতে হবে। একই সঙ্গে নির্মমতার শিকার লিমনের দাবি গুরুত্ব সহকারে ভেবে দেখবে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার, এটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি। এই ঘটনার সঙ্গে জড়িত প্রত্যেককে বিচারের আওতায় আনতে হবে। লিমনকে বিনা দোষে যারা গুলি করে পঙ্গু করেছে তাদের কঠোর শাস্তি দিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করতে হবে। শুধু তাই নয়, এজন্য ক্ষতিপূরণ দিতে হবে। সরকার এই লক্ষ্যে সব ধরনের ব্যবস্থা করে ন্যায় বিচার প্রতিষ্ঠা করবে, সেই প্রত্যাশাই আমাদের।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version