-->

আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন জরুরি

দেশে যে আইনশৃঙ্খলার অবনতি ঘটেছে তা রাজধানী ঢাকার আজিমপুওে মেডিকেল স্টাফ কোয়াটারে একটি বাসায় দুর্ধর্ষ ডাকাতির ঘটনায় দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছে। ডাকাত দল শুধু লুটপাট করেই ক্ষান্ত হয়নি, একটি শিশুকেও নিয়ে গেছে। গত শুক্রবার সকালে এই দুঃখজনক ঘটনাটি ঘটেছে। এমনিভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থানে ছিনতাই, অপহরণ, খুনসহ নানা অপরাধমূলক ঘটনা বেড়েই চলেছে। আইন ও শালিস কেন্দ্রের হিসেবে গত তিন মাসে দেশে গণপিটুনিতে খুন হয়েছেন অন্তত ৬৮জন। এসময় ধর্ষণের ঘটনা ৭৮টি। একই সময়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সংখ্যালঘুরাও হামলার শিকার হয়েছেন। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এই মর্মে প্রকাশিত খবরে দেশের আইনশৃঙ্খলার ভয়াবহ চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, বাংলাদেশে গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়ার প্রথম ১০০ দিনে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে সবচেয়ে বেশি চ্যালেঞ্জের মুখে পড়েছে অন্তর্বর্তী সরকার। গত ৫ আগস্ট পরবর্তী সময়ে পুলিশের অনুপস্থিতি এবং পরিবর্তিত পরিস্থিতির সুযোগ নিয়ে দেশের বিভিন্ন এলাকায় অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধি পায়। ছিনতাই, ডাকাতি ও হত্যাকাণ্ড জনমনে আতঙ্কের পরিবেশ সৃষ্টি করে। ভুক্তভোগী শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর বিভিন্ন জায়গায় মব সৃষ্টি করে গণপিটুনি দিয়ে বিচার বহির্ভূত হত্যার ঘটনায় উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। গত ১০ নভেম্বর রোববার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের সানাড়পাড় বাসস্ট্যান্ডে এক পুলিশ সদস্যকে ‘ভুয়া পুলিশ’ আখ্যা দিয়ে গণপিটুনি দেওয়া হয়েছে। সিদ্ধিরগঞ্জ থানার পুলিশ জানায় আক্রান্ত ব্যক্তি ভুয়া পুলিশ নন, তিনি বাংলাদেশ পুলিশের একজন সদস্য। পকেটমার ভুয়া পুলিশ গুজব রটিয়ে তাকে গণপিটুনি দেওয়ার ব্যবস্থা করে। এবং সাধারণ মানুষ সবাই বলছেন অপরাধ দমনে সরকারকে ‘আরও কঠোর’ হতে হবে।

রাজধানী ঢাকার মধ্যে মোহাম্মদপুর এলাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির বিষয়টি সবচেয়ে বেশি আলোচিত হয়েছে। সেখানে বিহারি ক্যাম্পে খুনোখুনি, প্রকাশ্যে ছিনতাই, ডাকাতি, সশস্ত্র মহড়ার ঘটনা ঘটেছে। পরিস্থিতি উন্নতির জন্য মোহাম্মদপুরে বিশেষ অভিযান হয়েছে। জেনেভা ক্যাম্পসহ বিভিন্ন স্থান থেকে শতাধিক সন্দেহভাজন আসামি গ্রেপ্তার হয়েছে। কিন্তু এখনো মানুষের আতঙ্ক কাটেনি বলেই জানান এলাকার একজন বাসিন্দা জেসমিন। তার ভাষায়, এখন একটু পরিস্থিতি ভয়াবহ। কেমন যেন একটা আতঙ্কে আছি আমরা। আগে রাতে বারোটা একটায় মানুষ যাইতে পারছে বাইরে। এখন তো মানুষ ভয়ের চোটে বাইরায় না। স্কুলে সন্তানকে নিয়মিত আনা নেওয়া করা একজন অভিভাবক বলেন, চলন্ত রিকশা থেকে বয়স্ক একজনের কানের দুলটা ছিঁড়ে নিয়ে গেছে। রক্ত ঝরছে। এটা দেখার পর থেকে আমার বাচ্চাকে আমি বাসা থেকে হিজাব পরায় নিয়ে আসি, স্কুলের কাছে এসে হিজাবটা খুলি। আমি ২০১০ সালের পর থেকে ঢাকাতে আছি। আমাদের এলাকার মধ্যে কখনো আমার এমন ঘটনা ঘটেনি।

দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে বুধবার সেনা সদর এক ব্রিফিং করে জানিয়েছে সেনাবাহিনী দেশের সাত শতাধিক বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করেছে। লুট হয়ে যাওয়া ছয় হাজার অস্ত্র, দুই লক্ষাধিক গুলি উদ্ধার করেছে। এতে সম্পৃক্ত আড়াই হাজার ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করেছে। ব্রিফিংয়ে সেনা সদরের কর্নেল ইন্তেখাব হায়দার খান বলেন, পরিস্থিতি আরো উন্নতির জন্য সমন্বিতভাবে কাজ করছে সেনাবাহিনী।

আমরা চাই দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি ও প্রতিটি মানুষের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত হোক। আইন শৃঙ্খলার উন্নয়ন করা এখন জরুরি হয়ে পড়েছে। মনে রাখতে হবে, মানুষকে নিরাপত্তাহীন রেখে উন্নয়নের কথা ভাবা যায় না। তাই আইনশৃঙ্খলার উন্নয়নে নিতে হবে জোরালো উদ্যোগ। দেশের আইনশৃঙ্খলার উন্নয়ন ছাড়া সার্বিক উন্নতির আশা করা যায় না। বিষয়টিকে সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব দিতে হবে সরকারকে। সেই লক্ষ্যে বর্তমান অন্তর্বর্তীকালীন সরকার জোরালো উদ্যোগ নিবে বলে আমরা আশাবাদী।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য

Beta version