ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ জরুরি

নিজস্ব প্রতিবেদক
ডেঙ্গু পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে উদ্যোগ জরুরি

ডেঙ্গু সমস্যা দিনদিনই প্রকট আকার ধারণ করছে। এবার অসময়েও ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ হচ্ছে। এটা মশা নিয়ন্ত্রণ জোরালো উদ্যোগ নাথাকার কারণেই যে হচ্ছে সে কথা আর বলার অপেক্ষা রাখে না। গতকাল দৈনিক ভোরের আকাশে এইমর্মে প্রকাশিত খবরে সেই কথাই তুলে ধরা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে, এবছর দেশে ডেঙ্গু পরিস্থিতি বেশি মাত্রায় অস্বাভবিকতা লক্ষ্য করছেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা। প্রতিদিনই ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর ঘটনা ঘটছে। চলতি বছর এখন পর্যন্ত ডেঙ্গুতে মৃত্যুর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪২১ জনে। আর আক্রান্তের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮১ হাজার ৬৮ জনে। চলতি বছরের ১ জানুয়ারি থেকে ১৮ নভেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন মোট ৮১ হাজার ৬৮ জন। যাদের মধ্যে ৬৩ দশমিক ১০ শতাংশ পুরুষ এবং ৩৬ দশমিক ৯০ শতাংশ নারী। এছাড়া এখন পর্যন্ত মৃত ৪২১ জনের মধ্যে ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ নারী এবং ৪৯ দশমিক ৬০ শতাংশ পুরুষ। প্রতি বছর বর্ষাকালে ডেঙ্গুর প্রকোপ দেখা দেয়। ২০২৩ সালের জুন মাস থেকে ডেঙ্গু পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করে। গত বছর দেশে ৩ লাখ ২১ হাজার ১৭৯ জন রোগী হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেন। এর মধ্যে ঢাকায় এক লাখ ১০ হাজার ৮ জন এবং ঢাকার বাইরে চিকিৎসা নিয়েছেন দুই লাখ ১১ হাজার ১৭১ জন। এর আগে ২০১৯ সালে দেশব্যাপী ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছিলেন এক লাখ এক হাজার ৩৫৪ জন। ওই সময় চিকিৎসক-স্বাস্থ্যকর্মীসহ প্রায় ৩০০ জনের মৃত্যু হয়েছিল। ২০২০ সালে করোনা মহামারিকালে ডেঙ্গুর সংক্রমণ তেমন একটা দেখা না গেলেও ২০২১ সালে সারাদেশে ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হন ২৮ হাজার ৪২৯ জন। ওই বছর ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে ১০৫ জনের মৃত্যু হয়েছিল। এছাড়া ২০২২ সালে ডেঙ্গু নিয়ে মোট ৬২ হাজার ৩৮২ জন হাসপাতালে ভর্তি হয়েছিলেন। ওই বছর মশাবাহিত রোগটিতে আক্রান্ত হয়ে ২৮১ জন মারা যান।

ডেঙ্গু একটি ভাইরাসজনিত রোগ যা এডিস মশার মাধ্যমে ছড়ায়। এই মশা সাধারণত ভোরবেলা ও সন্ধার পূর্বে কামড়ায়। সাধারণ চিকিৎসাতেই ডেঙ্গু জ্বর সেরে যায়, তবে ডেঙ্গু শক সিনড্রোম ও হেমোরেজিক ডেঙ্গু জ্বর মারাত্মক হতে পারে। বর্ষার সময় সাধারণত এ রোগের প্রকোপ বাড়ে। এডিস মশার বংশ বৃদ্ধি রোধের মাধ্যমে ডেঙ্গুজ্বর প্রতিরোধ করা যায়।

এ বছরের ডেঙ্গু অধিক শক্তিশালী। চিকিৎসকদের মতে, এ ডেঙ্গুতে তীব্রজ্বর, মাথাব্যথা, গায়ে র‌্যাশ ও বমির লক্ষণ দেখা যাবে না। এখন ডেঙ্গু হলে সামান্য জ্বরেই হার্ট, কিডনি ও বেইন আক্রান্ত হচ্ছে। সঙ্গে রোগী দ্রুত শকে যাওয়ার আশঙ্কাও বেড়েছে। বর্তমান বিশ্বের জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই ডেঙ্গুর ঝুঁকিতে আছেন।

মশাবাহিত এই ডেঙ্গু রোগের অসময়ে ভয়াবহ পরিস্থিতি কোনোভাবেই মেনে নেওয়া যায় না। সিটি করপোরেশনের পক্ষ থেকে মশা নিধনে জোরালো উদ্যোগ নেওয়ার কথা বলা হলেও বাস্তবতার সঙ্গে মিল খুঁজে পাওয়া যেন দুষ্কর বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। মশা নিধনে দায়িত্বহীনতা ও উদাসীনতার কারণেই যে প্রতিমৌসুমেই এই রোগটি ভয়াবহ আকারে দেখা দিয়ে থাকে সে কথা হলফ করেই বলা যায়। অথচ মশা নিধনের নাম করে সরকারের কোটি কোটি টাকা অপচয় হয়ে যাচ্ছে বলেও অভিযোগ কম নয়। আমরা এই অবস্থা আর দেখতে চাই না। যারা মশা নিধনের নামে সরকারি টাকা লুটপাট করছেন তাদের চিহ্নিত করে শাস্তিমূলক ব্যবস্থাগ্রহণ করতে হবে। সরকার সেই লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিয়ে দৃষ্টান্ত স্থাপন করবে বলে আমরা আশাবাদী। পাশপাশি ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে সমন্বিত উদ্যোগ নেওয়া জরুরি হয়ে পড়েছে। বিষয়টি গুরুত্বসহকারে দেখতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। মশা নিধনে জোরালো উদ্যোগ নিতে হবে। আর সেই দায়িত্ব সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকেই নিতে হবে। ডেঙ্গু প্রতিরোধে মশা নিধনে সরকার পরিকল্পিত উদ্যোগ নিবে সেটাই আমাদের প্রত্যাশা ও দাবি।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য