দেশে একটি সুষ্ঠু অবাধ ও নিরাপেক্ষ নির্বাচনের দাবি দীর্ঘদিনের। এটা এখন দেশবাসীর প্রত্যাশা ও দাবি। জনগণের সেই দাবির বাস্তবায়ন করতেই সরকার নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে অবসরপ্রাপ্ত সচিব এএম এম নাসির উদ্দীনের নেতৃত্বে পাঁচ সদস্যের নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করেছে সরকার। রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন তার সাংবিধানিক ক্ষমতা বলে তাকে এই পদে নিয়োগ দিয়েছেন। অবসরপ্রাপ্ত সচিব এ এম এম নাসির উদ্দীনকে প্রধান করে গঠিত কমিশনের অন্য সদস্যরা হলেনÑ সাবেক অতিরিক্ত সচিব মো. আনোয়ারুল ইসলাম সরকার, সাবেক জেলা ও দায়রা জজ আবদুর রহমান মাসুদ, সাবেক যুগ্ম-সচিব বেগম তহমিদা আহমদ ও ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) আবুল ফজল মো. সানাউল্লাহ। পাঁচজনের নির্বাচন কমিশনে সিইসি নাসির উদ্দীনসহ তিনজনই সাবেক সচিব। একজন সাবেক বিচারক ও সেনাবাহিনীর সাবেক কর্মকর্তা একজন রয়েছেন। গত বৃহস্পতিবার তাদের নিয়োগের ব্যাপারে প্রজ্ঞাপন জারি করেছে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ। এই নির্বাচন কমিশন নিয়োগের মাধ্যমে দেশ নির্বাচনের পথে যাত্রা শুরু করলো। এখন শুধু অপেক্ষার পালা। প্রয়োজনীয় সংস্কার শেষেই অনুষ্ঠিত হবে জনগণের সেই প্রত্যাশিত নির্বাচন। মনে রাখতে হবে গত দেড় দশকের ধারাবাহিক অপশসনের পরিপ্রেক্ষিতে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে গত ৫ আগস্ট জনমনে পুঞ্জিভূত ক্ষোভের বহিপ্রকাশ ঘটেছে সেই অভ্যত্থানের লক্ষ্য শুধু ক্ষমতার পরিবর্তন তা নয়, একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে গণতন্ত্রের বিকাশ ও পুনঃউদ্ধার করা। আর সেই কাজটি করতে হবে নতুন নির্বাচন কমিশনকে।
আওয়ামী লীগ সরকার পতনের এক মাস পর গত ৫ সেপ্টেম্বর হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বে নির্বাচন কমিশন পদত্যাগ করে। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগের শাসনের পতন হয় ৫ আগস্ট। এর এক মাস পর ৫ সেপ্টেম্বর পদত্যাগ করে কাজী হাবিবুল আউয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। দেড় মাস ধরে শূন্য থাকার পর এখন নতুন নির্বাচন কমিশন গঠন করা হলো।
নতুন নির্বাচন কমিশন শপথ নেবে আগামীকাল রোববার। এদিন বেলা দেড়টায় নতুন প্রধান নির্বাচন কমিশনার ও চার কমিশনারকে শপথ পাঠ করাবেন প্রধান বিচারপতি সৈয়দ রেফাত আহমেদ। নবগঠিত নির্বাচন কমিশনের ওপর আস্থা রাখতে চায় বিএনপিসহ বিভিন্ন দল। বিএনপির নেতারা মনে করছেন, নির্বাচন কমিশন গঠনের মাধ্যমে নির্বাচনি প্রক্রিয়ায় প্রবেশের বার্তা গেল জনগণের কাছে।
নবনিযুক্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) এএমএম নাসির উদ্দীন বলেছেন, মানুষ যাতে নিজের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দিতে পারে, সেটা নিশ্চিত করতে সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সর্বোচ্চ চেষ্টা থাকবে। সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে। তিনি বলেন, ২০১৪ সাল থেকে মানুষ ভোট দিতে পারেনি। গত জুলাই-আগস্টের আন্দোলনে অনেক মানুষ প্রাণ দিয়েছে। এই আন্দোলনের মূল বিষয়ই ছিল ভোটের অধিকার নিশ্চিত করা। এত মানুষের রক্তের সঙ্গে বেইমানি করা সম্ভব নয়। সে জন্য সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে ভোটের অধিকার নিশ্চিত করার চেষ্টা চালাব। আমরা প্রধান নির্বাচন কমিশনারের এই বক্তব্যের সঠিক বাস্তবায়ন দেখতে চাই।
আমরা মনে করি, নির্বাচন কমিশনের জন্য বহুরকম চ্যালেঞ্জ থাকবে; সামনে আরও অনেক চ্যালেঞ্জ আসবে। সেটা বিবেচনায় রেখেই নতুন নির্বাচন কমিশন কাজ করবে। সব চ্যালেঞ্জ মোকাবিলা করে সুনির্দিষ্ট লক্ষ্যে এগোতে পারব বলে আমরা বিশ্বাস করি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসতে হলে রাজনীতির গুণগত পরিবর্তন ঘটাতে হবে। রাজনীতিতে পরিবর্তন আনতে হবে। এর জন্য দরকার সংস্কার, যা রাজনীতির গুণগত মানের পরিবর্তন করবে। দেশের রাজনীতিকে ঋদ্ধ করবে। আদর্শচ্যুত রাজনীতি সমাজ বা রাষ্ট্রকে কিছু দেয় না। নেতৃত্ব অযোগ্য, অদক্ষ হলে সৃষ্টি হয় নৈরাজ্য। তাই আদর্শ ও বলিষ্ঠ নেতৃত্ব প্রয়োজন। সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি সুস্থ গণতন্ত্রের পূর্বশর্ত।
রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনায় প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস জানিয়েছেন, সরকারের আপাতত প্রধান দায়িত্ব দুটি। প্রথমত, দেশের আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি করা এবং দ্বিতীয়ত, প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে একটি ভয়ভীতিহীন পরিবেশ তৈরি করে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠান করা। রাজনৈতিক দলগুলোও মনে করে, সংস্কার করার আগে কোনো নির্বাচন কোনো অবস্থায়ই বাঞ্ছনীয় নয়। আগে সংস্কার সম্পন্ন করতে হবে। প্রয়োজনীয় সংস্কারকাজ শেষ করে একটি ভয়ভীতিহীন সুষ্ঠু নির্বাচনের পরিবেশ তৈরি করে নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।
আমরা মনে করি, সরকারের সামনে এখনো অনেক চ্যালেঞ্জ। অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে হবে। দূর করতে হবে অস্থিরতা। দুর্নীতি দূর করে সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে হবে। কারণ যদিও চ্যালেঞ্জ প্রচুর, তবু হাসিনা সরকারের বিদায়ে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার বাংলাদেশের সামনে অভূতপূর্ব এক সুযোগ নিয়ে এসেছে। সবার আন্তরিক চেষ্টায় একটি কল্যাণমুখী বাংলাদেশ রাষ্ট্র বিশ্বে নতুন করে পরিচিত হবে, এটিই আমাদের প্রত্যাশা। আমরা আশা করি, নতুন নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু, অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন উপহার দেওয়ার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা চালাবে এবং তার সুফল জনগণকে উপহার দিবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য