ঢাকাতেও শীত দাপট দেখাতে শুরু করেছে। উত্তরাঞ্চলে তাপমাত্রার পারদ নেমেছে ১৫ ডিগ্রিতে। দেশের অন্যান্য স্থানে भी বেশ শীত অনুভূত হচ্ছে। প্রতি বছরই শীতের সময় গ্যাস সংকট দেখা দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে বলে মনে হয় না। যদিও নানা কারণে গ্যাস সংকট এরই মধ্যে প্রকট আকার ধারণ করেছে। ঢাকা এবং এর আশপাশের এলাকাগুলোতে নিয়মিত গ্যাস সরবরাহ বিঘ্নিত হচ্ছে। শিল্পাঞ্চলেও গ্যাসের অভাব স্থায়ী সমস্যায় পরিণত হয়েছে। বর্তমানে দেশে প্রতিদিন গ্যাসের চাহিদা অন্তত ৪ হাজার মিলিয়ন ঘনফুট। কিন্তু দেশে উত্তোলন এবং আমদানিকৃত এলএনজি মিলিয়ে প্রতিদিন দুই হাজার ৯০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস সরবরাহ করা যাচ্ছে। অর্থাৎ দৈনিক প্রায় এক হাজার ১০০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাসের ঘাটতি থাকছে। এ অবস্থায় এলএনজি আমদানি অব্যাহত না রাখা হলে শীতে গ্যাস সংকট আরও বাড়বে। যদিও শীতে সবসময়ই গ্যাসের চাহিদা বেশি থাকে। তবে ডিসেম্বর পর্যন্ত সরকারের আরও ১১ কার্গো এলএনজি আমদানির পরিকল্পনা রয়েছে। সেটি সম্ভব হলে সংকট অনেকটা কমবে। কিন্তু চাহিদা অনুযায়ী তা পর্যাপ্ত হবে না। ইতোমধ্যে মাঝারি ও ভারী শিল্পকারখানার উৎপাদনও প্রায় এক তৃতীয়াংশ কমে গেছে। শুধু শিল্পকারখানা নয়, আবাসিক ও বাণিজ্যিক গ্রাহকরাও ভুগছেন গ্যাস সংকটে। শীত যত ঘনিয়ে আসবে, এ সংকট আরও তীব্র হবে বলে মনে করছেন সিএনজি স্টেশনের মালিকরাও। এছাড়া শিল্প মালিকরা বলছেন, একদিকে ডলার সংকট, অন্যদিকে গ্যাসের সংকট চলতে থাকলে এ সেক্টরে বড় ধরনের বিপর্যয় নেমে আসবে। এ অবস্থায় গ্যাস সংকট কাটাতে শীতের আগেই গ্যাস সংকটের সমস্যা সমাধানের পদক্ষেপ নিতে হবে। কেননা এ সংকটের কারণে ব্যয়বহুল এলএনজি আমদানি করতে বাধ্য হচ্ছে। এ জন্য প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হবে। এদিকে আবাসিকে ভয়াবহ গ্যাস সংকটে সারা বছরই গ্রাহকদের দুর্ভোগ পোহাতে হয়। ফলে বিদ্যমান গ্যাস সংকট দূর করতে গ্যাসের নতুন উৎসের সন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। দেশের বিভিন্ন স্থানে প্রচুর অনাবিষ্কৃত গ্যাসক্ষেত্র পড়ে থাকলেও অনুসন্ধান কাজে উল্লেখযোগ্য কোনো অগ্রগতি নেই। স্থলভাগের পাশাপাশি আমাদের সাগর এলাকায়ও গ্যাস অনুসন্ধানে জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। বাপেক্সকে আরও শক্তিশালী করা হলে আশা করা যায়—এ প্রতিষ্ঠান দেশবাসীকে গ্যাস খাতে বড় ধরনের সুখবর দিতে সক্ষম হবে। সর্বোপরি জ্বালানি খাতে স্মার্ট ব্যবস্থাপনা গড়ে তুলতে হবে। তা না হলে নিকট ভবিষ্যতে এ সংকট থেকে উত্তরণ সম্ভব হবে না। সরকার দ্রুত গ্যাস সংকট নিরসনে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেবে—এটাই প্রত্যাশা।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য