আমাদের দেশে সড়কে বিশৃঙ্খলা ঠিক কবে শুরু হয়েছে, তা নিশ্চিত করে বলা মুশকিল। এই বিশৃঙ্খলার পেছনে আমাদের মানসিকতাই প্রধান দায়ী। আইন না মানার প্রবণতা মনের অজান্তেই আমাদের মস্তিষ্কে গড়ে উঠছে। যেকোনো মূল্যে আমরা আগে যেতে চাই। ফলে সড়কে বিশৃঙ্খলা তৈরি হয়। সৃষ্টি হয় যানজট। ঘটে দুর্ঘটনা। এছাড়া আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর গাফিলতি, ফিটনেসবিহীন গাড়ি তো আছেই। এছাড়া অদক্ষ চালকও দুর্ঘটনার জন্য দায়ী।
দেশে প্রতিদিন সম্ভাবনাময় ও স্বপ্নের অনেক জীবন কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানে রক্তাক্ত হয়ে, লাশ হয়ে যাচ্ছে চোখের সামনে। চলতি বছরের অক্টোবরে ৪৬৯ জন নিহত ও ৮৩৭ জন আহত হয়েছেন। তাদের মধ্যে ৪১ দশমিক ৭৯ শতাংশ মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার শিকার হয়েছেন। দেখা যাচ্ছে, প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছেন ১৫ দশমিক ১২ জন। নিহতদের মধ্যে রয়েছেন ৭৪ নারী ও ৬৬ শিশু। নভেম্বরের চিত্রও খারাপ। বেপরোয়া গতিতে যানবাহন চালানো, বিপজ্জনক ওভারটেক, ফিটনেসবিহীন যানবাহন, ট্র্যাফিক আইন লঙ্ঘন, অদক্ষ ও মাদকাসক্ত চালক কর্তৃক গাড়ি চালানো, রাস্তাঘাট নির্মাণে ত্রুটি, পথচারী-সেতু ব্যবহার না করা, ঝুঁকিপূর্ণভাবে রাস্তা পারাপার এবং আইনের যথাযথ প্রয়োগের অভাব সড়ক দুর্ঘটনার প্রধান কারণ। দুর্ঘটনার এসব কারণ জানা থাকা সত্ত্বেও কেন শৃঙ্খলা ফিরছে না সড়কে? কবে নাগাদ নিরাপদ হবে আমাদের সড়কপথ? কত পরিবার যে সড়ক দুর্ঘটনার কারণে নিঃস্ব হয়ে গেছে, তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। দেশের সড়ক-মহাসড়কে এমন অনেক দুর্ঘটনা ঘটে, যেগুলোকে দুর্ঘটনা না বলে হত্যাকাণ্ডও বলা যায়। অনেক দুর্ঘটনাই চালকের ভুলে ঘটে থাকে, যার ফলে রাস্তায় মৃত্যুর মিছিল লেগেই থাকে। ‘নিরাপদ সড়ক চাই’-এর তথ্যমতে, দেশে সড়কে প্রতিদিন গড়ে ১৮ জনের প্রাণহানি হচ্ছে। সড়ক দুর্ঘটনায় প্রাণহানির ফলে মানবিক ও অর্থনৈতিক যে ক্ষয়ক্ষতি হয়, তা নির্ণয় করা দুরূহ। এক হিসাবে দেখা গেছে, সড়ক দুর্ঘটনায় যারা মৃত্যুবরণ করে, তাদের উল্লেখযোগ্য একটা অংশ পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। এই পরিবারগুলো রীতিমতো পথে বসে যায়। আহতদেরও অনেকে কর্মক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। ফলে তাদের পরিবারও বিপন্ন হয়ে পড়ে। অর্থনৈতিক হিসাবে সড়ক দুর্ঘটনার ক্ষতির পরিমাণ ধরা হলে, তা মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) পাঁচ শতাংশ। দেশে সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতি হয়েছে। এ প্রেক্ষাপটে মানুষ আশা করেছিল সড়ক দুর্ঘটনা কমবে। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনার মাত্রা বেড়েই চলেছে। নানা পদক্ষেপ নেওয়া সত্ত্বেও কেন সড়ক দুর্ঘটনার সংখ্যা বাড়ছে, তা ভালোভাবে খতিয়ে দেখা দরকার। দেশে সড়ক দুর্ঘটনা এখন এতটাই ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে যে, একজন যাত্রী নিরাপদে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবেন কিনা, তা নিয়ে প্রতিমুহূর্তে স্বজনদের উৎকণ্ঠায় থাকতে হয়। এ অবস্থায় সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে কর্তৃপক্ষকে কঠোর হতে হবে। দুর্ঘটনা রোধে কর্তৃপক্ষকে সমন্বিত উদ্যোগ নিতে হবে। যানবাহন-সংশ্লিষ্টদের দায়িত্বশীলতাও কাম্য। অনাকাক্সিক্ষত সড়ক দুর্ঘটনা রোধে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যথাযথ পদক্ষেপ এবং জনগণের সচেতনতা ও আন্তরিক প্রচেষ্টায় সড়কে শৃঙ্খলা ফিরতে পারে।
ফিটনেসবিহীন গাড়ির বিরুদ্ধে অভিযান চালাতে হবে। দক্ষ চালক তৈরিতে প্রশিক্ষণ কেন্দ্র বাড়াতে হবে। চালকদের লাইসেন্স প্রদানে কড়াকড়ি করতে হবে। যথাযথ নিয়ম মেনে পরীক্ষা নিয়েই চালকদের লাইসেন্স দিতে হবে। চালকদের মানসিক স্বাস্থ্যের অবস্থা পরীক্ষা করা দরকার। অসুস্থ প্রতিযোগিতায় তারা যেন লিপ্ত না হয়; সেটি নিশ্চিত করতে হবে। এছাড়া মাদক সেবন করে— এমন চালককে গাড়ি চালানো থেকে বিরত রাখতে হবে। সড়কে শৃঙ্খলা ফেরাতে এ কাজগুলো অবশ্যই করতে হবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য