যত দ্রুত নির্বাচন ততই মঙ্গল

আব্দুর রহিম
যত দ্রুত নির্বাচন ততই মঙ্গল

অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ সাড়ে চার মাস হতে চলল। এই সরকার কতদিন ক্ষমতায় থাকবে, কবে নির্বাচন হবে তা নিয়ে রাজনীতিতে বেশ আলোচনা চলছে। এরই মধ্যে অন্যতম বড় দল বিএনপির শীর্ষ কয়েকজন নেতা নির্বাচনের রোডম্যাপ ঘোষণার দাবি জানিয়েছেন। দলটির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান সরাসরি নির্বাচনের রোডম্যাপ চাননি। কিন্তু তার দুটি বক্তব্য নির্বাচনের রোডম্যাপ চাওয়ারই শামিল। যেমন কয়েকদিন আগে তিনি দলটির সভায় বলেছেন, নির্বাচনের রোডম্যাড চাইলে উপদেষ্টাদের কারো কারো চেহারায় অস্বস্তি দেখা যায়। এর আগে তিনি বলেছিলেন, দেশের অগ্রগতি ও উন্নয়নের জন্য নির্বাচিত সরকার দরকার। যদিও সরকার নির্বাচনের চেয়ে সংস্কারকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে। যদিও এর আগে সরকারের একজন উপদেষ্টা ২০২৬ সালে জাতীয় নির্বাচন হতে পারে বলে আভাস দিয়েছিলেন। আরেকজন বলেছিলেন আগামী বছর হয়তো নির্বাচিত সরকার পাওয়া যাবে। এই দুই ক্ষেত্রেই প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছিলেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূসের প্রেস সচিব শফিকুল আলম। সংবাদ সম্মেলনে তিনি দাবি কওে ছিলেন - নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার এখতিয়ার একমাত্র প্রধান উপদেষ্টার। তিনিই নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করবেন। ওই দুই উপদেষ্টার মতামত ব্যক্তিগত বলে তিনি দাবি করেছিলেন। পরে অবশ্য ওই দুই উপদেষ্টা নির্বাচনের তারিখের বিষয়টি তাদের ব্যক্তিগত বলে মিডিয়ার কাছে দাবি করেন। কেন তারা নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কথা বললেন; আবার কেন তা ব্যক্তিগত মত বললেন, তা নিয়ে এখানে আলোচনা করছি না। এবার সেই শফিকুল আলমই বলছেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে অনুষ্ঠিত হবে বলে মানুষ আশা করতে পারে। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আমার তো মনে হয়, রোডম্যাপ খুব স্পষ্ট দেওয়া হয়েছে। যদি কম সংস্কার হয়, সে ক্ষেত্রে ডিসেম্বরের (২০২৫ সালের) মধ্যে হতে পারে। উনি (প্রধান উপদেষ্টা) একটা আলোকপাত করেছেন। আর চূড়ান্ত তারিখ কী, এটা অনেক ক্ষেত্রে নির্ভর করবে সংস্কারের ওপর। তিনি একটা সময় দিয়ে দিয়েছেন। এর চেয়ে আর পরিষ্কার রোডম্যাপ কী হতে পারে? আপনি আশা করতে পারেন যে নির্বাচন হচ্ছে ২০২৬ সালের ৩০ জুনের মধ্যে।’ প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ মজুমদার বলেন, নির্বাচনের সুনির্দিষ্ট দিন, কবে মনোনয়নপত্র দাখিল হবে - এগুলো নির্বাচন কমিশনের কাজ। সরকারের কাজ হচ্ছে নির্বাচন কমিশনকে সহায়তা করা এবং নির্বাচনটা যাতে সুষ্ঠু হয়, এ জন্য প্রয়োজনীয় কিছু সংস্কারের জাতীয় দাবি আছে। রাজনৈতিক দল ও মানুষের পক্ষ থেকেও দাবি আছে। গত মঙ্গলবার সন্ধ্যায় রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে সংবাদ ব্রিফিংয়ে তারা সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এসব কথা বলেন। এখন কথা হলো প্রধান উপদেষ্টা তো নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করেননি। তাহলে কি আমরা ধরে নিতে পারি প্রেস সচিব শফিকুল আলমের কথাও তার ব্যক্তিগত। এটা সরকারের বক্তব্য না? কারণ তিনি খোলাসা করেননি যে এই বক্তব্য সরকার প্রধানের। কেননা, জাতীয় নির্বাচনের মতো একটা অতীব গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত সরকার প্রধানের মুখ থেকেই মানুষ আশা করে। যদিও আগের দিন বিজয় দিবসে জাতির উদ্দেশে ভাষণে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেছিলেন, ‘২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধের মধ্যে নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করা যায়।’ প্রধান উপদেষ্টার এই বক্তব্যের মধ্যেও কিন্তু নির্বাচনের তারিখ নেই। তিনি বলেছেন, সময় নির্ধারণ করা যায়। সময় নির্ধারণ আর নির্বাচনের তারিখ কিন্তু এক নয়। যেমন ২০২৫ সালের শেষ দিক থেকে ২০২৬ সালের প্রথমার্ধে সময় নির্ধারণ করা হলো যে নির্বাচন হবে ২০২৬ সালের ডিসেম্বরে।

আরেকটি বিষয় ভুলে গেলে চলবে না - এই সরকার ক্ষমতায় বসেছে ছাত্র আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে। ছাত্র-জনতার প্রবল গণআন্দোলনে ৫ আগস্ট প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভারতে আশ্রয় নেন। ৮ আগস্ট অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা হিসেবে শপথ নেন ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেছিলেন, তাদের ক্ষমতায় বসিয়েছেন ছাত্ররা। তারা (ছাত্ররা) যতদিন চাইবে তারা ততদিন থাকবেন।’ ছাত্ররা কিন্তু নির্বাচনের তারিখ নিয়ে কিছু বলেননি এখনও। তাদের পরামর্শ ছাড়া নির্বাচনের তারিখ ঘোষণা করা হলে হিতে বিপরীত হতে পারে। যদিও ছাত্রদের তিনজন প্রতিনিধি অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টা হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। তাদের একজন নাহিদ ইসলাম। তিনি তথ্য মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে আছেন। তিনি এর আগে বলেছিলেন, ‘শুধু নির্বাচনের জন্য ছাত্ররা প্রাণ দেয়নি।’ এই সরকার নির্বাচন কমিশনসহ বিভিন্ন সেক্টরে সংস্কার শুরু করেছে। এই সংস্কার শেষে তারা নির্বাচন দেওয়ার পক্ষে। সংস্কার নির্বাচিত সরকার করবে - এমন প্রশ্নে পরিবেশবিষয়ক উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেছিলেন, ‘৫৩ বছরে তারা কেন সংস্কার করেননি?’ এদিকে সংস্কার শেষে নির্বাচন চায় জামায়াতে ইসলামী এবং ইসলামী শাসনতন্ত্র আন্দোলন। তবে যে যা-ই চাক, যত দ্রুত নির্বাচন হবে ততই দেশ ও জাতির জন্য মঙ্গল।

লেখক : সাংবাদিক

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য