অনেক দিন ধরেই প্রতিবেশী মিয়ানমারের রাখাইনে জান্তা বাহিনীর সঙ্গে বিদ্রোহীদের সংঘর্ষ চলছে। এরই মধ্যে জান্তার সেনা সদর দপ্তর দখল করে নিয়েছে বিদ্রোহীরা। চলমান এই সংঘর্ষে বিপন্ন হয়ে পড়েছে সেখানকার মানুষের জীবন। তারা যে যেখানে পারছে, নিরাপদ আশ্রয়ে ছুটে চলেছে। আর মুসলিম সম্প্রদায়ের লোকজন ছুটে আসছে বাংলাদেশ সীমান্তে। সেখান থেকে সুবিধা মতো সময়ে তারা পাহাড় ডিঙিয়ে ও নদী পার হয়ে ঢুকে পড়ছে বাংলাদেশ। সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদন বলছে, প্রতিদিনই রোহিঙ্গারা বাংলাদেশে ঢুকছে। আর তাদের টাকার বিনিময়ে সাহায্য করছেন দালালরা। কিন্তু প্রশাসন রহস্যজনক কারণে নীরব ভূমিকা পালন করছে। অভিযোগ রয়েছে তারা আর্থিক সুবিধা নিয়ে চুপ রয়েছেন। বিষয়টি উঠে এসেছে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তোহিদ হোসেনের কথায়। তিনি বলেছেন, বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তে দুর্নীতির কারণে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ঘটছে। এই দুর্নীতির কারণে স্থল, জলসীমাসহ সীমান্তের নানা রুট দিয়ে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ আটকানো খুব কঠিন হচ্ছে। গত দুই মাসে রাখাইন থেকে বাংলাদেশে নতুন করে ৬০ হাজার রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ করছে - এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘আমাদের নীতিগতভাবে অবস্থান ছিল আর কোনো রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দেব না। তবে পরিস্থিতি কখনো কখনো এমন দাঁড়ায় যে আমাদের কিছু আর করার থাকে না। সে রকম পরিস্থিতিতে আমরা ৬০ হাজার রোহিঙ্গাকে ঢুকতে দিয়েছি। আনুষ্ঠানিকভাবে যে তাদের ঢুকতে দিয়েছি, তা-ও নয়, তারা বিভিন্ন পথে ঢুকেছেন।’
মান্তে দুর্নীতির প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, আর একটি কথা আমাদের মনে রাখতে হবে, প্রচুর দুর্নীতি আছে সীমান্তে। এটা সত্যি। এটা অস্বীকার করার কোনো অর্থ নেই। দুর্নীতির মাধ্যমে প্রচুর ঢুকে যাচ্ছে (রোহিঙ্গারা)। নৌকা নিয়ে ঢুকছে। তবে একটা সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে বিষয়টা এমন নয়। বিভিন্ন সীমান্ত দিয়ে যে ঢুকছে এটা আটকানো খুব কঠিন হচ্ছে। তবে আমি মনে করি না আর একটি ঢল আসবে। যদিও অনেকে আশঙ্কা করছেন। এই আশঙ্কা আমাদেরও আছে। তবে সেই ঢলকে আটকানোর ব্যবস্থা করতে হবে, আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সঙ্গে নিয়েই। রোহিঙ্গা পরিস্থিতি পুরো অঞ্চলে কীভাবে অশনিসংকেত সৃষ্টি করছে, তা জানতে চাইলে তৌহিদ হোসেন বলেন, এখন বয়স্ক যেসব রোহিঙ্গা আছেন, তারা হয়তো পরিস্থিতি মেনে নেবেন। তবে আগামী ৫ বছর পর যেসব তরুণ রোহিঙ্গার বয়স ২০ বছর হবে, তারা বেপরোয়া হয়ে উঠবেন। তখন আমাদের সমস্যা বেশি হবে ঠিকই, তবে সেই সমস্যা প্রত্যেকেরই হবে। এর মধ্যেই নৌকায় রোহিঙ্গারা অস্ট্রেলিয়া পর্যন্ত পৌঁছে গেছেন।
মিয়ানমারের পররাষ্ট্রমন্ত্রী থান সোয়ের সঙ্গে বৈঠকের প্রসঙ্গ টেনে তৌহিদ হোসেন বলেন, ‘তাকে (থান সোয়ে) বলেছি মিয়ানমার সীমান্তে তো তোমাদের নিয়ন্ত্রণে নেই। সীমান্ত তো রাষ্ট্রবহির্ভূত শক্তির (নন-স্টেট অ্যাক্টর) নিয়ন্ত্রণে চলে গেছে। রাষ্ট্র হিসেবে তো আমরা নন-স্টেট অ্যাক্টরের সঙ্গে যুক্ত হতে পারি না। কাজেই তাদের দেখতে হবে কোন পদ্ধতিতে সীমান্ত ও রোহিঙ্গা সমস্যার সমাধান করতে হবে। মিয়ানমার সীমান্তবর্তী স্ক্যাম সেন্টারের অনেকটি চীন নষ্ট করে দিয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্র উপদেষ্টা। এখন স্ক্যাম সেন্টারগুলো মূলত থাইল্যান্ড ও লাওসের সীমান্তে আছে বলেও জানান তিনি। বলেন, এসব সেন্টারে অনেক বাঙালি আটকে পড়েছেন। সবাই যে পাচারের মাধ্যমে গেছেন, তা কিন্তু নয়। অনেকেই লোভে পড়ে সেখানে গেছেন।
বাংলাদেশে ১২ লাখের বেশি রোহিঙ্গা অবস্থান করছে। ২০১৭ সালে সেনাবাহিনীর নিপীড়নের শিকার হয়ে ৭ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে ঢুকেছে। এর আগে থেকেই ছিল আরও ৫ লাখ রোহিঙ্গা। তারা মূলত কক্সবাজার, রাঙ্গামাটি এবং নোয়াখালীর ভাসানচরে ক্যাম্পে বসবাস করছে। কক্সবাজারের রোহিঙ্গারা নানা ধরনের অপকর্মে জড়িয়ে পড়েছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি - এমন কোনো অপরাধ নেই যা তারা করছে না। তাদের একটা বড় অংশ মাদক পাচার ও বিক্রিতে জড়িত। ফলে নতুন করে আসা ৬০ হাজার রোহিঙ্গা সংকট আরও বাড়াবে। সুতরাং তাদের দেশে ঢুকতে যারা সহায়তা করছে; তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য