স্বাস্থ্যবিমা যে কারণে অতীব জরুরি বিষয়

নিজস্ব প্রতিবেদক
স্বাস্থ্যবিমা যে কারণে অতীব জরুরি বিষয়

কিডনি রোগীর সংখ্যা দিনদিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে দেশে ৩ কোটি ৮০ লাখ এই রোগী রয়েছে। ৪০ থেকে ৫০ হাজার মানুষের কিডনি বিকল। কিডনি অ্যাওয়ারনেস মনিটরিং অ্যান্ড প্রিভেনশন সোসাইটি (ক্যাম্পস) এই তথ্য জানিয়েছে। একেবারে বিকল হয়ে গেলে কিডনি প্রতিস্থাপন করতে হয়। এ ক্ষেত্রে অনেক টাকা প্রয়োজন। কিডনি প্রতিস্থাপন করতে না পারলে অনেক রোগীকে সারাজীবন ধরেই ডায়ালাইসিস চালিয়ে যেতে হয়। বেঁচে থাকার জন্য এটা একমাত্র উপায়। এটি অত্যন্ত শারীরিক কষ্টদায়ক। এর সঙ্গে যদি যোগ হয় মাত্রাতিরিক্ত খরচ; তাহলে সেই কষ্টের মাত্রা আরও বহুগুণ বেড়ে যায়। সাম্প্রতিক এক জরিপে জানা যায়, ডায়ালাইসিস করাতে গিয়ে ৯৩ শতাংশ রোগী আর্থিক সংকটে পড়েন। বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের (বিআইডিএস) এক গবেষণায় উঠে এসেছে এ চিত্র।

সংবাদমাধ্যমে খবরে বলা হয়, ডায়ালাইসিসের পেছনে দেশের একজন কিডনি রোগীকে মাসে সর্বনিম্ন ৬ হাজার ৬৯০ টাকা এবং সর্বোচ্চ ২ লাখ ১০ হাজার টাকা খরচ করতে হয়। গড় ব্যয় ৪৬ হাজার ৪২৬ টাকা। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি, অর্থাৎ ৩৫ শতাংশের মতো খরচ হয় ডায়ালাইসিস ফি বাবদ। প্রায় ২৩ শতাংশ ব্যয় হয় ওষুধ বাবদ। সব মিলিয়ে হাসপাতালে খরচ মোট ব্যয়ের প্রায় ৭৯ শতাংশ। যাতায়াত, খাবার, থাকা, অনানুষ্ঠানিক (ঘুষ, বকশিশ) খরচ ইত্যাদির পেছনেও ব্যয় রয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি যাতায়াতে ব্যয় হয় মোট ব্যয়ের প্রায় ৯ শতাংশ।

এখন একটি নিম্নআয়ের পরিবারের কথা চিন্তা করুন। যে পরিবারের মাসিক আয় ৪০ হাজার টাকা, সে পরিবার যদি শহরাঞ্চলে ভাড়া বাসায় থাকে, নিত্যদিনের খরচ মিটিয়ে, ছেলেমেয়েদের লেখাপড়ার খরচ জুগিয়ে ওই বাড়তি সাত-আট হাজার টাকা একজন ডায়ালাইসিস রোগীর পেছনে সে কীভাবে খরচ করবে? ডায়ালাইসিস চিকিৎসা সব হাসপাতালে নেইও। অনেক সময় দূর-দূরান্তরের বিশেষ হাসপাতালে যেতে হয়। এতে যে যাতায়াত খরচসহ অন্যান্য খরচ পড়ে, তাতে অনায়াসেই ব্যয় সর্বনিম্ন দশ-বারো হাজার টাকা ছাড়িয়ে যায়। ফলে আর্থিক সংকট কতটা চরমে পৌঁছায় তা সহজেই অনুমেয়।

ব্যয় বাঁচাতে অনেক গরিব পরিবার রোগীর কম ডায়ালাইসিস করার, তার মানে তাতে রোগীর কষ্ট অনেক বাড়ে। জরিপ মতে, তাদের হার শতকরা ১৯ শতাংশ। কারণ হিসেবে তারা অনেক বেশি ব্যয়ের কথা উল্লেখ করেছেন। রোগীদের সঙ্গে কথা বলে গবেষকরা জানতে পেরেছেন, মাসে মাসে বিপুল ব্যয়ের চাপ থেকে বাঁচতে অনেকে কিডনি প্রতিস্থাপনের চেষ্টা চালান। তখন তারা প্রতারকের খপ্পরেও পড়েন। এনজিওভিত্তিক হাসপাতালে ডায়ালাইসিসসেবা নেওয়া খরচ কম হলেও তা আরও বেশি সময়সাপেক্ষ এবং ভোগান্তিরও বেশি। সব জায়গায় এনজিওভিত্তিক হাসপাতাল নেইও। ফলে রোগীদের বাধ্য হয়েই সরকারি বা বেসরকারি হাসপাতালেই যেতে হয়। তাই আমরা বলতে চাই, দেশের সব সরকারি হাসপাতালে ডায়ালাইসিসসেবা আরও সহজলভ্য ও ব্যয়সাশ্রয় করা হোক। দেশে নানা কারণে কিডনি রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। পাশাপাশি কিডনি রোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করা জরুরি। জাতীয় অধ্যাপক ও ডায়াবেটিক অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের সভাপতি এ কে আজাদ খান বলেন, কিডনি রোগ, ডায়াবেটিস বা উচ্চ রক্তচাপ প্রতিরোধে করণীয় বিষয়ে বহু বছর ধরে বলা হচ্ছে, প্রচার-প্রচারণা চালানো হচ্ছে; কিন্তু মানুষ তা শুনছে না। কারণ, ঠিকভাবে মানুষের কাছে তা বলা হচ্ছে না। কীভাবে বললে মানুষ শুনবে, গ্রহণ করবে, তা নিয়ে গবেষণা হওয়া দরকার। অধ্যাপক এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, কিডনি রোগ হয়ে গেলে সমস্যা, সুতরাং এই রোগ যেন না হয়, সে বিষয়ে বিশেষ জোর দিতে হবে। অনিয়ন্ত্রিত রক্তচাপ, অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিস কিডনি রোগের কারণ।

সব চেয়ে বড় কথা কিডনি রোগীর চিকিৎসা ব্যয় নির্বাহ করা। এ ক্ষেত্রে বড় সমাধান হতে পারে বিমা ব্যবস্থা। এ জন্য প্রচারণা চালাতে হবে। বিমা দাবি পরিশোধের পর সেটারও প্রচারণা চালাতে হবে। তাহলে মানুষ এ ব্যাপারে আগ্রহী হবে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য