সময়ের সঙ্গে অপরাধের ধরনও বদলায়। আগে চাঁদাবাজি ব্যবসা কেন্দ্রিক। আবার কখনো ব্যক্তি পর্যায়েও চাঁদাবাজি হতো। সন্ত্রাসীরা এই অপকর্ম করতো। এবার নতুন কৌশলে মতলববাজরা চাঁদাবাজি করছে। তারা মামলা দিয়ে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে চাঁদাবাজি করছে। অবাক করা বিষয় হলো অনেক সময় বাদী বিবাদীকে ছিনছেন না। আবার তিনিই বিবাদীকে গ্রেপ্তার না করতে পুলিশকে অনুরোধ করছেন। এর নেপথ্যে রয়েছে আর্থিক লেনদেন। আবার কখনো কখনো মামলার ভয় দেখিয়েও চাঁদাবাজি করা হচ্ছে। নতুন ধরনের এই চাঁদাবাজির উৎভব হয়েছে ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর।
বিভিন্ন এলাকায় গণহারে মামলা দায়ের করছে একদল বেনামি ব্যক্তি। কখনো মামলাকারীর নাম হিসেবে প্রকাশ পাচ্ছে বিএনপি নেতার নাম, আসামি হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর নাম। পরবর্তী সময়ে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগের সঙ্গে কোনোরকম সম্পর্ক নেই এরকম ব্যক্তিদের নামও মামলার আসামি হিসেবে প্রকাশিত হচ্ছে এবং এরকম ঘটনাও প্রকাশিত হচ্ছে। এই মামলার উদ্দেশ্য কেনো বিচার-আচার দাবি না, স্রেফ চাঁদা আদায়। চাঁদা দিতে পারলে মামলা থেকে নাম কাটা যায়, চাঁদা দিতে অপারগ হলে চলে হুমকি-ধমকি। অনেক ক্ষেত্রে কারা, কেন মামলা দিচ্ছে- সেই হদিসও বের করা যাচ্ছে না। গত শনিবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে এক শিক্ষার্থী চোখে গুলিবিদ্ধ হওয়ার অভিযোগে করা মামলা নিয়ে গাজীপুরের টঙ্গীতে বিএনপির সাবেক এক নেতা বাণিজ্য শুরু করেছেন। ব্যক্তিগত দ্বন্দ্ব ও চাঁদা না পাওয়ায় আইনজীবী হিসেবে তিনি অনেকের নাম আসামির তালিকায় ঢুকিয়ে দিয়েছেন। এখন মামলা থেকে আসামিদের নাম বাদ দিতে চাঁদাবাজি করছেন বলে অভিযোগ ভুক্তভোগীদের। আসামির তালিকায় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীর বাইরে শিক্ষক, স্থানীয় ব্যবসায়ী, বাড়িওয়ালা, স্কুলছাত্র, গণমাধ্যমকর্মীসহ অনেকের নাম রয়েছে। তাদের সবার বাড়ি টঙ্গীতে। এ রকম আরও অনেক ঘটনার খবর পাওয়া গেছে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে। সরাসরি কোনোদিন আওয়ামী লীগের রাজনীতি করতেন না, হয়তো আওয়ামী লীগের কোনো নেতাকর্মীর সঙ্গে বন্ধুত্বের সম্পর্ক রয়েছে, বা আত্মীয়-স্বজনদের মধ্যে কেউ আওয়ামী লীগের নেতাকর্মী এমন ব্যক্তিদের নামেও ঢালাওভাবে মামলার অভিযোগ রয়েছে। মামলার আতঙ্কে অনেকে বাড়ি ছাড়া, এলাকা ছাড়া, অনেকের স্বাভাবিক জীবন ব্যাহত হচ্ছে। গণঅভ্যুত্থানের পর দেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি হওয়ায় পুলিশও পড়েছে বিপাকে। তারা মামলা গ্রহণ করলেও বিপদে পড়ছেন, না করলেও বিপদে পড়ছেন। অনেকে এসব মামলা দিচ্ছে প্রতিহিংসাবশত। হয়তো আওয়ামী লীগের সময় নানাভাবে নিগৃহীত হয়েছেন, এখন সুযোগ বুঝে প্রতিশোধ নিচ্ছেন; কিন্তু এমন প্রতিহিংসা, প্রতিশোধের রাজনীতি চলতে থাকলে দেশ কোনোদিনই স্থিতিশীল হবে না। প্রমাণিত অভিযোগের বিরুদ্ধে কারও নামে মামলা করা যায়, কোনো প্রমাণ ছাড়া কেন এই হয়রানি? তাও চাঁদাবাজির নামে এমন ঢালাও মামলা? এমনো অভিযোগ রয়েছে- ‘আওয়ামী লীগের দোসর’ আখ্যা দিয়ে অনেক শিক্ষক, সরকারি কর্মকর্তাদের কাছ থেকেও চাঁদা আদায় করছে একটি মহল। বিষয়টি আর রাজনীতির মধ্যে সীমাবদ্ধ নেই, একেবারেই চাঁদাবাজির মধ্যেই পর্যবসিত হয়েছে। বর্তমান সরকার যদি এই হয়রানিমূলক মামলা, মামলার নামে চাঁদাবাজি বন্ধ করতে না পারে, তাহলে একদিকে যেমন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ভেঙে পড়বে, অন্যদিকে সমাজে-রাষ্ট্রে নানারকম বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি হবে। আমরা চাই রাজনৈতিক মামলার নামে অচিরেই এই চাঁদাবাজি বন্ধ হোক।
ভোরের আকাশ/রন
মন্তব্য