দ্রুত শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হোক

দ্রুত শিক্ষার্থীদের বই দেওয়া হোক

একটা সময় পঞ্চম শ্রেণি পর্যন্ত বিনামূল্যে পাঠ্য বই দেওয়া হতো। কিন্তু সময় মতো সেই বই শিক্ষার্থীরা পেতো না। কোনো কোনো বছর ৫-৬ মাস লেগে যেতো বই পেতে। এতে অনেক শিক্ষার্থীর পাঠে মন বসতো না। শুধু বই না থাকায় অনেক শিক্ষার্থী ঝরে পড়েছে। তবে শিক্ষা খাতে গুরুত্ব দেওয়া এবং সরকারের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় সেই অবস্থার উন্নতি হয়েছিল। ঘটা করে প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে বই তুলে দেওয়া হতো। এটাকে বলা হতো বই উৎসব। শিশুরা মেতে উঠতো উৎসবে। নতুন বই নিয়ে তারা বাড়ি ফিরতো মনের আনন্দে। বইয়ের ঘ্রাণে মাতোয়ারা থাকতো তারা। এতে পড়ালেখার প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়তো। মা-বাবাও একটা স্বস্তির মধ্যে থাকতেন। বছরের শুরুতেই পড়ালেখার একটা রুটিন তারা করে ফেলতেন। বিশেষ করে কোন কোচিংয়ে বাচ্চাকে দেবেন; আবার কোন টিউটর রাখবেন- ইত্যাদি। কিন্তু এবার সেই ছন্দে পতন হয়েছে। শিক্ষার্থীরা বছরের প্রথম দিন সব বই পায়নি। বাকি বই কখন পাবে- সেই নিশ্চয়তাও মিলছে না। এনসিটিবি ও মুদ্রণ সমিতির চিঠি চালাচালি উদ্বেগ আরও বাড়িয়েছে।

বছরের প্রথম দিন বিনামূল্যে পাঠ্যবই পাওয়ার মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের নতুন শিক্ষাবর্ষ শুরু হয়। বছরের প্রথম দিনে নতুন বই হাতে পাওয়া তাদের কাছে উৎসবের মতো। নতুন বইয়ের গন্ধে শিক্ষার্থীরা কেবল নতুন বছর শুরু করে না, নতুন এক জীবনই শুরু করে। দেশে উৎসব করে বছরের প্রথম দিন শিক্ষার্থীদের হাতে পাঠ্যবই তুলে দেওয়ার রেওয়াজ শুরু হয় ২০১০ সালে; কিন্তু এবার বছরের প্রথম দিনে বই পায়নি তারা।

আজ জানুয়ারির ৫ তারিখে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দু-একটি বই পেতে পারে, আর কিছু বই পাবে জানুয়ারির ২০ তারিখের মধ্যে। তবে সব বই হাতে পেতে ফেব্রুয়ারি মাস লাগবে।জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) বলছে, রাজনৈতিক প্রেক্ষাপট পরিবর্তনের কারণে পুনরায় নতুন বই ছাপানোর কার্যক্রম, কারিকুলাম পরিবর্তন ও পাঠ্যপুস্তক পরিমার্জনের কারণে বই ছাপার কাজে দেরি হওয়ায় শিক্ষার্থীদের বই পেতে দেরি হচ্ছে। আগস্টে রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর এনসিটিবিকে অনেক কাজ নতুন করে শুরু করতে হয়েছে।

যেমন এবার নতুন শিক্ষাক্রম পরিবর্তন করে পুরোনো শিক্ষাক্রমে ৪৪১টি পাঠ্যবই পরিমার্জন করা হয়েছে, এতে কিছু সময় লেগেছে। আবার পাঠ্যবই ছাপার কাজ শুরু করতেও দেরি করেছে এনসিটিবি। আগের দরপত্র বাতিল করে নতুন দরপত্র দেওয়া, দেরি করে পরিদর্শন প্রতিষ্ঠান চ‚ড়ান্ত করা, মন্ত্রণালয় পর্যায়ে আনুষাঙ্গিক কাজের অনুমোদন পেতে দেরি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির কারণ। এখনো কিছুসংখ্যক বই ছাপানোর জন্য মুদ্রণকারীদের সঙ্গে চুক্তিপত্র সইয়ের কাজ করছে এনসিটিবি। যদিও অধিকাংশ ক্ষেত্রেই তা সম্পন্ন হয়েছে। চুক্তির কাজ দেরি হওয়ায় ছাপার কাজেও দেরি হচ্ছে।

আমরা জানি কেন বই ছাপাতে দেরি হচ্ছে; কিন্তু শিশুরা কি এটা বুঝবে? বাংলাদেশে যখন যে সরকার আসে, তাদের মতো পাঠ্যবই সাজায়। ফলে সেখানে ক্ষমতাসীনদের ইচ্ছা পূরণ ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করার প্রয়াস থাকে, যার সঙ্গে শিক্ষার্থীদের জ্ঞান অর্জনের তেমন কোনো সম্পর্ক নেই। পাঠ্যবইয়ের শেষ প্রচ্ছদে সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও উদ্ধৃতি থাকা এ রকমই একটি উদাহরণমাত্র। শিক্ষা প্রশাসনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, সাবেক প্রধানমন্ত্রীর ছবি ও উদ্ধৃতির স্থলে পাঠ্যবইয়ে জুলাই অভ্যুত্থানের গ্রাফিতি বা দেয়ালে আঁকা ছবি থাকবে। অভ্যুত্থানের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের পরিচয় করিয়ে দেওয়া অন্যায় নয়। পাঠের বিষয় অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়; কিন্তু তার চেয়েও কম গুরুত্বপূর্ণ নয় সময়মতো শিক্ষার্থীদের হাতে বই পৌঁছানো।

গণঅভ্যুত্থান সংঘটিত হয়েছে পাঁচ মাস হয়ে গেল। অন্তর্বর্তীকালীন সরকার গঠিত হয়েছে তাও প্রায় ১৫০ দিন। এর মধ্যে বই ছাপা হলো না কেন তা শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের প্রশ্ন। বিপুল কাজ নিঃসন্দেহে; কিন্তু কিছু সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হয়েছে তা বোঝা যাচ্ছে। আমরা চাই অন্তত জানুয়ারি মাসের মধ্যেই সব শিশুর হাতে সব বই তুলে দেওয়া হোক। শিক্ষার্থীদের হাতে নতুন বই পৌঁছাতে যত দেরি হবে, ততই ক্ষতি হবে, এটা যেন সরকার বিবেচনায় রাখে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য