মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ

এম এ খালেক
মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ

ইন্টারন্যাশনাল মনিটারি ফান্ডের (আইএমএফ) পরামর্শ মোতাবেক বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বাজারভিত্তিক করার উদ্যোগ নিয়েছে। তবে বাংলাদেশ ব্যাংক তাৎক্ষণিকভাবে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণের বিষয়টি এখনই সম্পূর্ণরূপে বাজারের ওপর ছেড়ে দিচ্ছে না। বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে এখনো তাদের নিয়ন্ত্রণ কিছুটা হলেও বহাল রাখছে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে জারিকৃত এক প্রজ্ঞাপনের মাধ্যমে চলতি জানুয়ারি মাস থেকে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণের বিষয়টি কার্যকর করেছে। মার্কিন ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণের এই নতুন পদ্ধতিকে বর্তমানে লিত ‘ক্রলিং পেগ’ পদ্ধতির অগ্রর্তী ধাপ হিসেবে বর্ণনা করা যেতে পারে। ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে মার্কিন ডলার এবং অন্যান্য বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার নির্ধারণের ক্ষেত্রে একটি মধ্যবর্তী দর বেঁধে দিত। বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত মূল্যের সঙ্গে ১ টাকা যোগ বা বিয়োগ করে সিডিউল ব্যাংকগুলো এবং মুদ্রা বিনিময়ের সঙ্গে যুক্ত অনুমোদিত প্রতষ্ঠানগুলো বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের হার নির্ধারণ করত। যেমন, প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময়হার হয়তো ১১৭ টাকা নির্ধারণ করে দেওয়া হলো।

সিডিউল ব্যাংক ও বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানগুলো তার সঙ্গে আরও এক টাকা যোগ করে প্রতি মার্কিন ডলার ১১৮ টাকা অথবা এক টাকা বিয়োগ করে ১১৬ টাকায় বিক্রি করত। নতুন যে পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করার নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে তা অনেকটা ক্রলিং পেগ পদ্ধতির মতোই। তবে পার্থক্য হচ্ছে ক্রলিং পেগ পদ্ধতিতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার একবার নির্ধারণ করা হলে তা বেশ কিছুদিন কার্যকর থাকত। বাংলাদেশ ব্যাংক পরবর্তী নির্দেশনা না দেওয়া পর্যন্ত একই রেটে বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় করতে হতো; কিন্তু বর্তমানে যে নতুন পদ্ধতি আরোপ করা হচ্ছে তাতে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন কর্ম দিবসে দুপুরের মধ্যে বিভিন্ন সিডিউল ব্যাংক ও বৈদেশিক মুদ্রা ব্যবসাযের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে সে দিনের বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার নির্ধারণ করবে। তার ভিত্তিতে রেফারেন্স ভ্যালু নির্ধারণ করে সেই মোতাবেক লেনদেন করতে পরামর্শ দেবে। কোনো সিডিউল ব্যাংক অথবা মুদ্রাবিনিময় ব্যবসায়ের সঙ্গে যুক্ত প্রতিষ্ঠান যদি বাংলাদেশ ব্যাংকের নির্ধারিত হারের চেয়ে বেশি মূল্যে বৈদেশিক মুদ্রা ক্রয়-বিক্রয় করে, তাহলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানকে জরিমানা করা হবে। এই জরিমানার পরিমাণ ১০ লাখ টাকা থেকে মোট লেনদেনের ৫ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।

নতুন বিধান মোতাবেক, প্রতি মার্কিন ডলারের রেফারেন্স রেট বা মধ্য দর হবে ১১৯ টাকা। রেমিট্যান্স ও রপ্তানি আয়ের মাধ্যমে অর্জিত মার্কিন ডলার ক্রয়ের ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠানগুলো প্রতি মার্কিন ডলারের রেফারেন্স ভ্যালু অর্থাৎ ১১৯ টাকার সঙ্গে আরও আড়াই টাকা যোগ করে ১২১ টাকা ৫০ পয়সায় ক্রয় করতে পারবে। যে দামে মার্কিন ডলার ক্রয় করা হবে তার চেয়ে এক টাকা বেশি মূল্যে সেই মার্কিন ডলার বিক্রয় করতে পারবে। বাংলাদেশ ব্যাংক কর্তৃপক্ষ মনে করছেন, নতুন এই নিয়মে মার্কিন ডলার বিনিময় করা হলে মুদ্রা বাজারে যে অস্থিশীলতা চলছে তা অনেকটাই কমে আসবে। উল্লেখ্য, বৈদেশিক মুদ্রা বাজার, বিশেষ করে মার্কিন ডলার বিনিময়হারের ক্ষেত্রে গত আড়াই বছর ধরে অস্থিতিশীলতা বিরাজ করছে। গত আড়াই বছরে প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময়হার ৮৫ টাকা থেকে ১২০ টাকায় উন্নীত। নতুন এই ব্যবস্থার ফলে বাংলাদেশ ব্যাংক প্রতিদিন যে রেফারেন্স ভ্যালু নির্ধারণ করে দেবে তাতে বাজারের চাহিদা এবং জোগানের চিত্র প্রতিফলিত হবে। ফলে পরবর্তী দিনের জন্য যে রেফারেন্স ভ্যালু নির্ধারণ করা হবে, তা অনেকটাই বাজারভিত্তিক হবে।

এ মুহূর্তে যদি মার্কিন ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণের বিষয়টি সম্পূর্ণরূপে উন্মুক্ত করে দেয়া হয় অর্থাৎ তাৎক্ষণিকভাবে বাজারভিত্তিক করে দেওয়া হয় তাহলে মুদ্রা বাজারে চরম অস্থিরতা দেখা দিতে পারে। সে অবস্থায় পরিস্থিতি সামাল দেওয়া কঠিন হতো। তাই বাংলাদেশ ব্যাংক এ ক্ষেত্রে ‘ধীরে চলো’ নীতি গ্রহণ করেছে। উল্লেখ্য, কয়েক মাসে আগেও প্রত মার্কিন ডলারের বিনিময়হার ১১০ টাকা নির্ধারিত ছিল। সেই সময় কার্ব মার্কেটে প্রতি মার্কিন ডলার ১২২/১২৩ টাকায় বিক্রি হতো। সাধারণভাবে স্বাভাবিক অবস্থায় ব্যাংকিং চ্যানেলের সঙ্গে কার্ব মার্কেটে মার্কিন ডলারের বিনিময়হারের সঙ্গে ১ টাকা বা দুই টাকা পার্থক্য থাকে; কিন্তু কোনো ১০-১২ টাকা পার্থক্য স্বাভাবিক অবস্থার নির্দেশক ছিল না। সেই সময় কৃত্রিমভাবে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার নির্ধারণ করে রাখার ফলে অর্থনীতি নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। যখন ক্রলিং পেগ পদ্ধতি চালু করা হয় তখন মাত্র এক দিনের ব্যবধানে প্রত মার্কিন ডলারের মূল্য ১১০ টাকা থেকে ১১৭ টাকায় উন্নীত হয়েছিল। তার অর্থ হচ্ছে বাংলাদেশ ব্যাংক কৃত্রিমভাবে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকার অবমূল্যায়ন ঠেকিয়ে রেখেছিল।

প্রশ্ন হলো - বাংলাদেশ ব্যাংক মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বা মূল্য ঠেকিয়ে রেখেছিল কেনো? সাধারণভাবে মনে করা হয় স্থানীয় মুদ্রার দরপতন ঠেকিয়ে রাখা হলে আমদানি ব্যয় তুলনামূলকভাবে কম হয়; কিন্তু কোনো কারণে স্থানীয় মুদ্রার অবমূল্যায়ন করা হলে আমদানিকারকরা আগের চেয়ে বেশি পরিমাণ স্থানীয় মুদ্রা খরচ না করেই সম পরিমাণ মার্কিন ডলার ক্রয় করতে পারে। ফলে আমদানি ব্যয় তুলনামূলক সাশ্রয়ী হয়। সাধারণত উচ্চ মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের জন্যই স্থানীয় মুদ্রাকে কৃত্রিমভাবে অতি মূল্যায়িত করে রাখা হয়। যেমন, আগে হয়তো কোনো পণ্য আমদানির জন্য ১০০ মার্কিন ডলারের প্রয়োজন হতো; কিন্তু স্থানীয় ডলারের বিনিময়হার বৃদ্ধির বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা যদি অবমূল্যায়িত হয় তাহলে আগের পরিমাণ পণ্য আমদানি করতে স্থানীয় মুদ্রায় বেশি অর্থ ব্যয় করতে হবে; কিন্তু বৈদেশিক মুদ্রার বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রাকে কৃত্রিমভাবে অতি মূল্যায়িত করে রাখা হলে পণ্য রপ্তানি আয় এবং রেমিট্যান্স আয় কমে যেতে পারে।

মুক্তবাজার অর্থনীতিতে কোনো কিছুতেই কৃত্রিমতার আশ্রয় গ্রহণ সুখকর হতে পারে না। মার্কিন ডলারের বিনিময়হার বৃদ্ধি পেলেই আমদানিজনিত ব্যয় বৃদ্ধির কারণে অভ্যন্তরীণ বাজারে পণ্য মূল্য বৃদ্ধি পাবে এই ধারণা সর্বাংশে সত্যি নয়। কারণ বাংলাদেশ যে সব পণ্য ব্যবহার করে তার মাত্র ২৫ শতাংশ বাইরে থেকে আমদানি করা হয়। অবশিষ্ট ৭৫ শতাংশ পণ্য স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয়। তাহলে সব পণ্যের মূল্য বাড়ছে কেনো? ফসল তোলার মৌসুমে উৎপাদক পর্যায়ে বিভিন্ন পণ্যের মূল্য অস্বাভাবিকভাবে কমে গেলেও ভোক্তা পর্যায়ে তার খুব একটা প্রভাব প্রত্যক্ষ করা যায় না। এর কারণ হচ্ছে আমাদের বাজার ব্যবস্থাপনা মোটেও সন্তোষজনকভাবে চলছে না। কাজেই মূল্যস্ফীতির জন্য এককভাবে মার্কিন ডলারের বিনিময়হারকে দোষ দিয়ে কোনো লাভ নেই।

সরকার সম্প্রতি ৪৩টি পণ্যের ওপর শুল্কহার দ্বিগুণ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। অনেকেই বলছেন, আইএমএফের পরামর্শ মোতাবেক এটা করা হয়েছে। একদিকে সরকার মূল্যস্ফীতি কমানোর কথা বলছেন; কিন্তু অন্যদিকে ৪৩টি পণ্যের ওপর ট্যাক্স দ্বিগুণ হারে বাড়িয়েছে। আগে এসব পণ্যের ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে ভ্যালু এডেড ট্যাক্স (ভ্যাট) আরোপিত ছিল। নিশ্চয়ই পণ্যগুলোর আবশ্যকতা আছে। যে কারণে তুলনামূলক কম শুল্ক আদায় হবে জেনেও কর হার কমানো হয়েছিল। এখন এসব পণ্যের মূল্য বাড়ানো হচ্ছে। নিশ্চিতভাবেই এগুলোর মূল্য বৃদ্ধি পাবে। যদিও অর্থ উপদেষ্টা বলেছেন, এই শুল্ক বৃদ্ধির কারণে মূল্যস্ফীতির ওপর কোনো চাপ সৃষ্টি হবে না; কিন্তু তার এই বক্তব্যে আমরা কি আস্থা রাখতে পারব? বাজারে রাজনৈতিক সমর্থনপুষ্ট যে শক্তিশালী ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট তৎপর রয়েছে এদের নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে কোনোভাবেই পণ্যমূল্য নিয়ন্ত্রণ করা যাবে না।

পত্রিকায় প্রকাশিত খবর থেকে জানা গেছে, বগুড়ায় প্রতি কেজি ফুল কপি ২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। আমরা রাজধানীতে কি এত সস্তা মূল্যে ফুলকপি কিনতে পারছি? বিদ্যমান বাজার ব্যবস্থায় তৃণমূল পর্যায়ের উৎপাদক শ্রেণি উৎপাদিত ফসলের ন্যায্য মূল্যপ্রাপ্তি থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন। আর ভোক্তারাও যৌক্তিক মূল্যের চেয়ে বেশি দামে পণ্য ক্রয় করতে বাধ্য হচ্ছেন। মাঝখান থেকে মধ্যস্বত্বভোগিরা ফায়দা লুটে নিচ্ছে। ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট সব সময়ই রাজনৈতিক সরকারের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে থাকে। তারা সরকারি দলের নেতাদের তো সন্তুষ্ট রাখেনই এমনকি বিরোধীদলীয় নেতাদেরও তুষ্ট রাখেন। কাজেই বিরোধী দল যখন রাষ্ট্র ক্ষমতায় আসীন হন তখন তারাও সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করেন না।

বৈদেশিক মুদ্রা বিশেষ করে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার কৃত্রিমভাবে কমিয়ে রাখার ফলে দেশের অর্থনীতির যে ক্ষতি হচ্ছে তা আমাদের বিবেচনার বাইরে থেকে যাচ্ছে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ স্ফীত থাকা একটি দেশের অর্থনীতির জন্য অত্যন্ত জরুরি। কোনো কারণে বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে গেলে সংশ্লিষ্ট দেশটিকে নানা সমস্যায় পতিত হতে হয়। সাধারণত তিনভাবে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে, পণ্য রপ্তানি, জনশক্তি রপ্তানি এবং বৈদেশিক ঋণ ও আর্থিক সহায়তা। এর মধ্যে দায়বিহীন বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় জনশক্তি রপ্তানি খাত এবং বৈদেশিক আর্থিক সহায়তা থেকে। গৃহীত ঋণ থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তা পরবর্তীতে সুদসহ কিস্তি পরিশোধ করতে হয়। পণ্য রপ্তানি থেকে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার একটি বড় অংশই কাঁচামাল, ক্যাপিটাল মেশিনারিজ এবং মধ্যবর্তী পণ্য আমদানিতে চলে যায়।

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এখনো বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সবচেয়ে বড় খাত হচ্ছে পণ্য রপ্তানি খাত। এই খাত থেকে প্রতি বছর যে বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হয় তার অন্তত ৩৫ থেকে ৪০ শতাংশই শিল্পের বিভিন্ন উপকরণ আমদানিতে চলে যায়। ফলে এই খাত জাতীয় অর্থনীতিতে মূল্যসংযোজন করে মাত্র ৬০ থেকে ৬৫ শতাংশ। পণ্য রপ্তানিকারকরা সব সময় প্রত্যাশা করে মার্কিন ডলারের বিপরীতে স্থানীয় মুদ্রা টাকা ব্যাপক মাত্রায় অবমূল্যায়িত হোক। স্থানীয় মুদ্রা অবমূল্যায়িত হলে তারা আগের পরিমাণ রপ্তানি আয় দ্বারা স্থানীয় মুদ্রায় তুলনামূলক বেশি অর্থ পাবেন। এ জন্য তাদের কোনো বাড়তি খরচ করতে হবে না। একটি উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে। কোনো একজন পণ্য রপ্তানিকারক হয়তো একটি পণ্য রপ্তানি করে ১ (এক) মার্কিন ডলার আয় করলেন। প্রতি মার্কিন ডলারের বিনিময়হার যদি ১০০ টাকা হয়, তাহলে তিনি ১ ডলারের পণ্য রপ্তানি করে যে অর্থ উপার্জন করবেন তার বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রায় ১০০ টাকা পাবেন।

পরবর্তীতে মার্কিন ডলারের বিনিময়হার যদি ১০ শতাংশ বৃদ্ধি পায় অথবা স্থানীয় মুদ্রা টাকার বিনিময়হার ১০ শতাংশ অবমূল্যায়িত হয় তাহলে তিনি ১ মার্কিন ডলারের বিনিময়ে স্থানীয় মুদ্রায় ১১০ টাকা অর্থাৎ আগের চেয়ে ১০ টাকা বেশি পাবেন। এ জন্য রপ্তানিকারককে কোনো বাড়তি খরচ করতে হবে না। যেহেতু স্থানীয় মুদ্রার বিনিময়হার কৃত্রিমভাবে ধরে রাখা হয় অর্থাৎ চাহিদার সঙ্গে সঙ্গে বাড়তে বা কমতে দেওয়া হয় না তাই পণ্য রপ্তানিকারকগণ তাদের অর্জিত রপ্তানি আয়ের পুরোটা দেশে না এনে আন্ডার ইনভয়েসিংয়ের মাধ্যমে কিছু রপ্তানি আয় দেশে না এনে বিদেশেই লেনদেন করেন। এতে ট্যাক্স প্রদানের ঝামেলা থেকেও রেহাই পাওয়া যায়। যেমন কোনো রপ্তানিকারক হয়তো ১৫০ মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করলেন; কিন্তু আমদানিকারকের সঙ্গে মৌখিক চুক্তি হলো এই পণ্য রপ্তানি দেখানো হবে ১০০ মার্কিন ডলার। বৈধ পথে ১০০ মার্কিন ডলার দেশে আসবে আর অবশিষ্ট ৫০ ডলার বিদেশেই রপ্তানিকারকের কাছে হস্তান্তর করা হবে। বিদেশে হস্তান্তরিত ৫০ ডলার তিনি হুন্ডির মাধ্যমে দেশে আনবেন অথবা বিদেশেই কোনো কাজে ব্যবহার করবেন। অন্যদিকে জনশক্তি রপ্তানি খাতে যারা বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন তারা বৈধ পথে অর্থ দেশে পাঠালে যে স্থানীয় মুদ্রা পাবেন তার চেয়ে অনেক বেশি পাচ্ছেন হুন্ডির মাধ্যমে অর্থ দেশে প্রেরণ করলে। প্রতি মার্কিন ডলারে যদি স্থানীয় মুদ্রায় ৬-৭ টাকা বেশি পাওয়া যায় তাহলে কেউ কি তাদের উপার্জিত অর্থ বৈধপথে দেশে পাঠাতে চাইবেন? কথায় বলে, অভুক্ত ব্যক্তির কাছে দীর্ঘদিন নৈতিকতা প্রত্যাশা করা যায় না। বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার যদি বাজারভিত্তিক করা হয় এবং বিদেশে প্রবাসী কর্মীদের কাছ থেকে অর্থ সংগ্রহ কাজ সহজীকরণ করা যায়, তাহলে রেমিট্যান্স প্রবাহ অনেকটাই বৃদ্ধি পাবে। কাজেই আমদানি ব্যয় বৃদ্ধির অজুহাতে বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময়হার নির্ধারণ করে রাখার কোনো যুক্তি থাকতে পারে না।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য