গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা নিয়ে গড়িমসি?

নিজস্ব প্রতিবেদক
গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের তালিকা নিয়ে গড়িমসি?

গত জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থানে অসংখ্য ছাত্র-জনতা প্রাণ দিয়েছেন অকাতরে। গুলির মুখেও তারা পিছপা হননি। তারা বুক পেতে দিয়েছেন অসীম সাহসিকতার সঙ্গে। তাদের জন্য আমাদের গর্বের শেষ নেই। আমরা গর্ব করে বলতে পারি আমাদের আবু সাঈদরা আছেন। তারা অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়াতে পারেন। তারা আমাদের দীর্ঘদিনের ফ্যাসিস্ট শাসন থেকে মুক্তি দিয়েছেন। নতুন এক রাজনৈতিক পরিবেশ গড়ার সুযোগ করে দিয়েছেন; কিন্তু জুলাই গণঅভ্যুত্থানের ৫ মাস পেরিয়ে গেলেও অনেক শহীদের নাম এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি। এটা আমাদের জন্য একদিকে যেমন দুঃখের, অন্যদিকে চরম লজ্জার। গণঅভ্যুত্থানের পর থেকেই আমরা দেখছি নির্দিষ্ট কয়েকজন শহীদকে নিয়েই বেশি আলোচনা হচ্ছে, অন্যদের কথা প্রায় ভুলে যাওয়া হচ্ছে। এ নিয়ে সেসব শহীদের পরিবারেরও আক্ষেপের শেষ নেই। গত বুধবার সংবাদমাধ্যমে প্রাপ্ত খবরে জানা যায়, শহীদদের পরিবারে কান্না থামেনি এখনো। কেউ কাঁদছে সন্তান হারিয়ে, কেউ স্বামী হারিয়ে, কেউ বাবার শোকে। স্বজন হারানোর বেদনার সঙ্গে কারও কারও মনে যুক্ত হয়েছে ‘আক্ষেপ’। এ আক্ষেপের কারণ- এতদিনেও শহীদের তালিকায় জায়গা না হওয়া এবং সরকারি সহায়তা না পাওয়া। এরই মধ্যে অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রথম ধাপের তালিকা প্রকাশ হয়েছে। তালিকায় রয়েছে ৮২৬ শহীদের নাম। এর মধ্যে ১২ জন সিলেটের; কিন্তু এই জেলার চারজনের নাম তালিকায় ওঠেনি। সহায়তা ও নাম তালিকাভুক্তির জন্য বিভিন্ন জায়গায় আবেদন করেছে তাদের পরিবার; কোনো অগ্রগতি নেই। কেউ কোনো খোঁজও নেয় না তাদের। এতে হতাশ চার পরিবার। সিলেটের এই স্বজন হারানো শহীদদের পরিবারের মতোই অবস্থা দেশের অন্যান্য অনেক শহীদ পরিবারেরও। আপনজন হারিয়ে তারা একদিকে যেমন দুঃখভারাক্রান্ত, অন্যদিকে প্রাপ্ত অধিকার আদায় করতে গিয়ে তারা পদে পদে হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলেও অভিযোগ উঠেছে। বিশেষ করে আহত অনেক আন্দোলনকারী এখনো ঠিক মতো সেবা পাচ্ছেন না, এ নিয়ে তারা আন্দোলনও করেছেন। আহত অনেকের নামও তালিকাভুক্ত হয়নি বলে অভিযোগ রয়েছে। যেখানে শহীদদের নামই তালিকাভুক্ত হয়নি এখনো সেখানে আহতদের খবরই বা কে রাখবে বলে হাহাকার তাদের। এদিকে জুলাই শহীদের কয়েকজন পাঠ্যপুস্তকেও ঠাঁই পেয়েছেন। অনেককে নিয়ে তথ্যচিত্র নির্মিত হচ্ছে। অনেক শহীদ পরিবারের অভিযোগ, এ কেমন বৈষম্য? শহীদদের মধ্যে তো বড়-ছোট নেই, সবাই সমান সম্মান পাওয়ার যোগ্য। তাহলে কাউকে কাউকে বিশেষ মর্যাদা দিয়ে অন্যদের কেন অবহেলা করা হচ্ছে? এমন প্রশ্ন আমাদেরও, পাঁচ মাস অতিবাহিত হওয়ার পরও কেন অনেক শহীদের নাম এখনো তালিকাভুক্ত হয়নি? এর মধ্যে তো রাষ্ট্রের অনেক বড় বড় কাজই হচ্ছে। অনেক বড় বড় পদে অনেককে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। জুলাই গণঅভ্যুত্থান নিয়ে প্রামাণ্যচিত্র, চলচ্চিত্র নির্মাণেরও প্রস্তুতি চলছে। তাহলে যারা শহীদ হলেন, যাদের রক্তের বিনিময়ে এমন নতুন এক রাষ্ট্রগঠনের সুযোগ আমরা পেলাম তাদের কেন অবহেলা? শহীদদের রক্তের ওপর দিয়েই অনেকে বড় বড় পদে অধিষ্ঠিত হয়েছেন, এটা যেন সমন্বয়ক ও উপদেষ্টারা ভুলে না যান। আমরা চাই দ্রুত সব শহীদের নাম তালিকাভুক্ত করা হোক। জুলাই গণঅভ্যুত্থানে শহীদ সব পরিবারের দেখাশোনার দায়িত্ব রাষ্ট্র নিক। পাশাপাশি আহতদেরও যথাযথ সেবা দেওয়া হোক। প্রয়োজন হলে কাউকে বিদেশে নিয়ে যেতে হবে। এরই মধ্যে খবর প্রকাশ হয়েছে যে আহত ৪৫ জন পুরোপুরি চোখের আলো হারিয়ে ফেলেছেন। এক চোখের আলো হারিয়েছেন অনেকে। তারা বিদেশে চিকিৎসা নিলে হয়তো দৃষ্টিশক্তি ফিরে পেতে পারেন—এমনটাই তারা বলছেন। সরকারের উচিত হবে এই লোকগুলোর সুচিকিৎসা নিশ্চিত করা। কেননা, বিপ্লবে গিয়ে তারা আহত হয়েছেন। তাদের ত্যাগের বিনিময়ে একজন ফ্যাসিস্ট শাসক পালিয়ে যেতে বাধ্য হয়েছেন। এ জন্য তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাই। একই সঙ্গে তাদের জানাই স্যালুট।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য