জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অসহায়!

নিজস্ব প্রতিবেদক
জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন অসহায়!

গণঅভ্যুত্থানের পর যখন অন্যান্য কমিশনের সঙ্গে ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’ গঠিত হলো তখন আমরা আশা করেছিলাম এই কমিশন স্বাধীনভাবে কাজ করতে সক্ষম হবে। প্রয়োজনীয় এবং উল্লেখযোগ্যসংখ্যক সংস্কার করে আমলাতন্ত্রের বিষদাঁত কিছুটা ভাঙতে পারবে। কিন্তু উপসচিব পদে পদোন্নতিতে প্রশাসনের ৫০ শতাংশ কোটার প্রস্তাবকে অযৌক্তিক দাবি করে, জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের চেয়ারম্যান আব্দুল মুয়ীদ চৌধুরীর পদত্যাগের আহ্বান জানিয়ে প্রশাসন ক্যাডারের কর্মকর্তারা যখন গত ২৫ ডিসেম্বর প্রতিবাদ সভার আয়োজন করেন তখন আমাদের আস্থায় কিছুটা ফাটল ধরে যায়। আমাদের মধ্যে সংশয় দেখা দেয়, প্রশ্ন দেখা দেয়, সত্যিই এই আমলাতন্ত্রের চাপে সংস্কার কমিশন কতটা স্বাধীনভাবে কাজ করতে পারবে!

গত বুধবার (১৫ জানুয়ারি) সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা গেল, সেই আশঙ্কাই সত্য হলো। আমলাদের চাপে পিছু হটছে কমিশন। প্রাপ্ত তথ্যে জানা যায়, আমলাদের চাহিদাকে বেশি প্রাধান্য দিচ্ছে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন। উপসচিব ও যুগ্ম সচিব পদে পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি এবং অন্য ক্যাডারের জন্য ৫০ শতাংশ কোটা রাখার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েই নিয়েছিল কমিশন। তবে এখন কমিশনের চূড়ান্ত প্রতিবেদনে থাকছে না সেই প্রস্তাব। আমলাদের চাপে এই সিদ্ধান্ত থেকে পিছু হটছে কমিশন। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশনের দুই সদস্য সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, খসড়া প্রতিবেদন তৈরির শুরুতে তারা বাংলাদেশ ছাড়া অন্য কোনো দেশের প্রশাসনের বিষয়টি বিবেচনায় নেননি। বাংলাদেশের প্রেক্ষাপট বিবেচনা করে সুপারিশ প্রস্তুত করা হয়েছিল। এখন উন্নত রাষ্ট্রের প্রশাসন কার্যক্রম পর্যালোচনা করা হয়েছে। এতে দেখা গেছে, বিশ্বে দুই মডেলে প্রশাসন কার্যক্রম পরিচালিত হয়। যেমন- ভারত, পাকিস্তান, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, দক্ষিণ কোরিয়া ও যুক্তরাজ্যের প্রশাসনে পদোন্নতি হয় এসিআর বা কর্মদক্ষতা অনুযায়ী। আর যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা ও অস্ট্রেলিয়া প্রশাসনে উন্মুক্ত বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রতিটি পদের জন্য আবেদন আহ্বান করা হয়। ডিসি-এসপিসহ সব পদে নিয়োগের জন্য প্রকাশ করা হয় বিজ্ঞপ্তি। সে অনুযায়ী যাদের যোগ্যতা আছে, তারা আবেদন করেন। এরপর স্বাধীন নিয়োগ কমিটি পরীক্ষার মাধ্যমে নিয়োগ দেয়।

পরীক্ষার মাধ্যমে পদোন্নতি ও অন্যান্য ক্যাডার থেকে ৫০ শতাংশ কোটা রাখা হলে নিশ্চিতভাবেই রাজনৈতিক দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি অনেকখানি কমতো। আমাদের দেশের প্রেক্ষিতে উপরোল্লিখিত দ্বিতীয় পদ্ধতিটিই ভালো। কিন্তু আমলারা কেন এই প্রস্তাবে রাজি হলেন না? তার মানে এখানে তাদের সুবিধা খর্ব হয়। কিন্তু আমলাতন্ত্রের চাপ কমানোর জন্যই তো সংস্কার কমিশন গঠিত হয়েছিল। এখন সেই সংস্কার কমিশনকেই যদি আমলাতন্ত্রের চাপে সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসতে হয় তাহলে সেই আমলাতন্ত্র পরবর্তীতে কীভাবে কী করবে তা তো বোঝাই যায়। যদি আমলাদের চাপে কমিশন কোনো গৃহীত সিদ্ধান্ত থেকে সরে আসে তাহলে তা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রব্যবস্থার জন্যও এটা শুভ লক্ষণ নয়। সত্যই কি এরকম কোনো ঘটনা ঘটেছে কি না তা নিয়ে তদন্ত হোক। আমরা চাই ‘জনপ্রশাসন সংস্কার কমিশন’কে স্বাধীনভাবে কাজ করার সুযোগ দেয়া হোক। এখন সুযোগ এসেছে বৈষম্য কমানোর। এই কমিশন সেই উদ্যোগ নিয়েও ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তারা ব্যর্থ হতে চলে বলে মনে হয়। কিন্তু কোনভাবেই তাদের ব্যর্থ হতে দেওয়া যাবে না। মনে রাখতে হবে সুযোগ সব সময় আসে না। এখন যেহেতু নির্দলীয় সরকার ক্ষমতায় রয়েছে; তাদের পক্ষে কিছু কাজ করা সম্ভব। দলীয় সরকারের ভোট সংক্রান্ত অনেক হিসেব-নিকেশ থাকে; যা এই সরকারের নেই। সুতরাং তারা অনেক কঠোর সিদ্ধান্ত নিতে পারবে।

 

ভোরের আকাশ/রন

মন্তব্য