সীমান্তে শান্তি বজায় রাখুন

নিজস্ব প্রতিবেদক
সীমান্তে শান্তি বজায় রাখুন

বাংলাদেশিদের বিরুদ্ধে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) আগ্রাসী আচরণ নতুন কিছু নয়। তারা যেন এদেশের নাগরিকদের দিকে বন্দুক তাক করেই রাখে। আর সুযোগ পেলেই পাখির মতো মানুষ হত্যা করে। আওয়ামী লীগের টানা সাড়ে ১৫ বছরের শাসনামলে সীমান্তে তাণ্ডব চালিয়েছে বিএসএফ। ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতন হলেও তারা সেখান থেকে এখনও সরে আসেনি। এরই ধারাবাহিকতায় তারা এখনও গুলি ছুঁড়ছে। আবার বাংলাদেশিদের ধরেও নিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু বাংলাদেশিরা এখন আর নতজানু নয়। তারাও জবাব দিতে শুরু করেছে। এরই মধ্যে চাপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার চৌকা সীমান্তে বিএসএফের কাঁটাতারের বেড়া নির্মাণে বাধা দিয়েছে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি)। বিষয়টি আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। ‘ইটটি মারলে পারকেলটি খেতে হয়’ প্রবাদের প্রমাণও করেছে বাংলাদেশিরা।

সংবাদ মাধ্যমের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দিনাজপুরের বিরল উপজেলায় মাঠে কাজ করার সময় বাংলাদেশি এক কিশোরকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনী (বিএসএফ) মারধর করে তুলে নিয়ে গেছে। এর প্রতিবাদে ভারতীয় এক কৃষককে ধরে এনে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যদের হাতে তুলে দিয়েছেন বাংলাদেশি কয়েকজন নাগরিক। গত শুক্রবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে উপজেলার ধর্মপুর ইউনিয়নের এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্পের দ্বীপনগর গ্রামের ৩২৩ মেইন পিলারসংলগ্ন এলাকায় এ ঘটনা ঘটে। এ নিয়ে উভয় দেশের সীমান্ত রক্ষাকারী বাহিনীর (বিজিবি ও বিএসএফ) সদস্যদের পতাকা বৈঠকে বসেছে। বিকেল নাগাদ দুজনকেই ফেরত দেওয়া হয়।

বিএসএফ সদস্য কর্তৃক ধরে নিয়ে যাওয়া বাংলাদেশি কিশোরের নাম মো. আলামিন। সে ধর্মপুর ইউনিয়নের কৈকুড়ি গ্রামের বর্গাচাষি রিয়াজউদ্দিনের ছেলে। অন্যদিকে বিজিবির হেফাজতে থাকা ভারতীয় নাগরিক হলেন পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার কুসুমন্ডি থানার পূর্ব মোল্লাপাড়া গ্রামের নারায়ণ চন্দ্র রায় (৪৫)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আবু সুফিয়ানসহ কয়েকজন জানান, গত শুক্রবার সকালে আলামিন ৩২৩ নম্বর পিলার থেকে ৩৫০ গজ বাংলাদেশ সীমান্তের অভ্যন্তরে নিজ জমিতে কৃষিকাজ করছিল। এ সময় ছয়জন বিএসএফ সদস্য তাকে মারধর করার পর টেনেহিঁচড়ে তুলে নিয়ে যান। বিষয়টি জানতে পেরে দ্বীপনগর গ্রামের কয়েকজন বাসিন্দা ভারতীয় এক কৃষককে তার জমি থেকে তুলে এনে এনায়েতপুর বিওপি ক্যাম্প সদস্যদের হাতে তুলে দেন।

এই ঘটনায় বিকেল চারটার দিকে বিজিবি-বিএসএফ পতাকা বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠক শেষে দিনাজপুর ৪২ বিজিবির অধিনায়ক লে. কর্নেল আহসানুল ইসলাম বলেন, পাঁচজন বাংলাদেশি কোনো প্রকার বৈধ কাগজপত্র ছাড়াই ভারত থেকে বাংলাদেশে প্রবেশ করেন। বিএসএফ ধারণা করেছিল, সীমান্তের আশপাশে থাকা কেউ তাদের সহযোগিতা করেছেন। সে সময় আলামিন নামের এক বাংলাদেশি যুবক সীমান্তের খুব কাছাকাছি ছিল। তারা আলামিনকে সহযোগী ভেবে ধরে নিয়ে যায়। বিষয়টি ভুল বোঝাবুঝি ছিল। আমাদের পতাকা বৈঠকে বিষয়টির মীমাংসা হয়েছে। বিকেল সোয়া চারটায় আলামিনকে তারা ফেরত দিয়েছেন। ভারতীয় নাগরিকের বিষয়ে তিনি বলেন, তাকেও বিএসএফের কাছে ফেরত দেওয়া হয়েছে।

কিছুদিন আগে কুমিল্লা সীমান্তের ওপারে ভারতীয়রা বিক্ষোভ করেছেন। তারা বাংলাদেশে ‘আক্রমণ’ করারও হুমকি দিয়েছেন। এর আগে ত্রিপুরা ও কলকাতাসহ কয়েকটি স্থানে বাংলাদেশের উপ-হাইকমিশনে হামলা, ভাঙচুর ও পতাকা অবমাননা করে ভারতীয়রা। এদেশে এসকনের সাবেক নেতা চিন্ময় কৃষ্ণ দাসকে গ্রেপ্তারের প্রতিবাদে তারা ওই তাণ্ডব চালায়। এবার তাদের রুখে দিতে শুরু করেছে বাংলাদেশিরা। তবে উভয় দেশের জনগণকে শান্ত করা দেশটির নীতি-নির্ধারকদের দায়িত্ব। কেননা, বাংলাদেশ ও ভারত প্রতিবেশী ও ঘনিষ্ঠ বন্ধু দেশ। দেশ দুইটির জনগণের মধ্যেও সম্প্রীতি বজায় রাখা জরুরি।

মন্তব্য