কারাগারই হোক সন্ত্রাসীর জায়গা

নিজস্ব প্রতিবেদক
কারাগারই হোক সন্ত্রাসীর জায়গা

গণঅভ্যুত্থানের পর সমাজে অপরাধ বেড়েছে। খুন, ধর্ষণ, অপহরণ, চুরি, ডাকাতি, ছিনতাই, চাঁদাবাজি বেড়েছে। দাগি অপরাধী হিসেবে যারা চিহ্নিত, তারা কেবল প্রকাশ্যে ঘুরছে না, তারা খুনাখুনিতেও জড়াচ্ছে। তাদের নামে অসংখ্য মামলা থাকা সত্ত্বেও পুলিশ তাদের কিছু বলছে না এবং অনেক আসামি জেলখানা থেকে ছাড়া পেয়ে নতুন নতুন অপরাধে জড়াচ্ছে।

গত শনিবার সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত খবরে জানা যায়, গেল সোমবার দিন-দুপুরে ১০-১২ জন দুর্বৃত্ত মঞ্জুরুল ইসলাম বাবু নামে এক যুবককে চাপাতি ও ছুরি দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে রাজধানীর পল্লবীর টেকেরবাড়িতে। বাবুর স্বজন ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, এই হত্যায় কলকাঠি নাড়েন দাগি সন্ত্রাসী মুসা শিকদার ওরফে সুমন শিকদার। এ ঘটনায় মুসাকে প্রধান আসামি করে পল্লবী থানায় মামলাও করেন বাবুর স্ত্রী। তার বিরুদ্ধে রাজধানীর বিভিন্ন থানায় হত্যা, অস্ত্রসহ ১১টি মামলা রয়েছে।

২০২২ সালে আন্তর্জাতিক পুলিশ সংস্থা ইন্টারপোলের মাধ্যমে মুসাকে দেশে ফিরিয়ে আনা হয়। দীর্ঘদিন কারাগারে থাকার পর সম্প্রতি জামিনে বেরিয়ে আসেন মুসা। এর পর সাঙ্গপাঙ্গো নিয়ে ফের দাপিয়ে বেড়াচ্ছেন অপরাধ জগতে। মুসার মতো অনেক চিহ্নিত সন্ত্রাসী প্রকাশ্যে এসেই ফের জড়াচ্ছেন অপরাধে। এতে বাড়ছে খুনাখুনি। চাঁদা ও ভাগবাটোয়ারা নিয়ে নিজেদের মধ্যে সংঘাত ছাড়াও এক পক্ষ অন্য পক্ষের ওপর হামলা করছে। স্থানীয়রা বলছেন, অন্তর্কোন্দলের ঘটনায় বাবুকে পরিকল্পিতভাবে হত্যা করা হয়েছে। বাবুর বিরুদ্ধেও দখল ও চাঁদাবাজির অভিযোগ আছে।

আগে দাগি অপরাধীরা চাঁদাবাজি, খুনাখুনি করতে পারত রাজনৈতিক ছত্রছায়ায়। এখন তো দেশে রাজনৈতিক কোনো সরকার ক্ষমতায় নেই। তাহলে এসব অপরাধী কীভাবে অপরাধের জাল বিস্তার করতে পারছে? কে তাদের ছায়া দিচ্ছে? তার মানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী যথাযথ ভূমিকা পালন করতে পারছে না। যার ফলে দাগি অপরাধীর অপতৎপরতার পাশাপাশি একের পর এক ছিনতাই, ডাকাতি, চাঁদাবাজিতে জনমনে আতঙ্ক ছড়াচ্ছে।

সর্বশেষ গত বৃহস্পতিবার হাজারীবাগের বেড়িবাঁধ এলাকায় দুর্বৃত্তের গুলিতে স্বর্ণ ব্যবসায়ী সজল রাজবংশী আহত হয়েছেন। তার কাছ থেকে ৭০ ভরি স্বর্ণ ও ৪ লাখ টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়। এর আগে মঙ্গলবার গুলশানে ব্যবসায়ী দুই ভাইকে কুপিয়ে জখম করেছে দুর্বৃত্তরা। এ সময় তাদের কাছ থেকে ১ কোটি টাকা ছিনিয়ে নেওয়া হয়েছে। এরকম অসংখ্য ঘটনাই চারদিকে ঘটছে। তার কিছু সংবাদমাধ্যমে আসে, কিছু খবর রয়ে যায় অজানা; কিন্তু দেশের নানা স্থানে যে চাঁদাবাজি, ছিনতাই বেড়েছে তা অস্বীকার করার উপায় নেই।

আরও ভয়ের বিষয় হচ্ছে, ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর পুলিশের থানা, ফাঁড়িসহ আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা চালিয়ে আগ্নেয়াস্ত্র-গুলি লুটের ঘটনা ঘটে। সব মিলিয়ে লুট হওয়া অস্ত্রের সংখ্যা ৫ হাজার ৭৫০টি। গুলি লুট হয় ৬ লাখ ১৩ হাজার ৯৯ রাউন্ড। অনেকের আশঙ্কা, এসব অস্ত্র-গুলি হাতবদল হয়ে সন্ত্রাসী ও কিশোর গ্যাংয়ের হাতে চলে যেতে পারে। এ পর্যন্ত ৪ হাজার ৩৫৮টি অস্ত্র উদ্ধার করা গেছে। এখনো ১ হাজার ৩৯২টি অস্ত্র বেহাত। আশঙ্কা করা হচ্ছে, এসব বেহাত অস্ত্রের কারণেও অনেক অপরাধ বেড়েছে। ঢাকা মহানগর পুলিশের ডিসি (গণমাধ্যম) মুহাম্মদ তালেবুর রহমান সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘পুলিশের টহল কার্যক্রম জোরদার করা হয়েছে। বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা নজরদারি। যেসব ঘটনা ঘটেছে, সেগুলোর নিবিড় তদন্ত চলছে।’ আমরা চাই থানা থেকে লুট হওয়া অস্ত্রগুলো দ্রুত উদ্ধার করা হোক। পুলিশের টহল আরও বাড়ানো হোক। চিহ্নিত অপরাধীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করা হোক। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতা না বাড়লে সমাজে-রাষ্ট্রে এ ধরনের অপরাধ আরও বাড়বে। সন্ত্রাসীদের অবশ্যই গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠাতে হবে।

মন্তব্য