-->

‘মাইন্ড পাওয়ার’ নেতিবাচক চিন্তা থেকে দূরে রাখবে!

ইফফাত শরীফ
‘মাইন্ড পাওয়ার’ নেতিবাচক
চিন্তা থেকে দূরে রাখবে!
সন্তানদের নিয়ে পছন্দের বই খুঁজছেন ব্যাংক কর্মকর্তা লায়লা আক্তার। ছবি ভোরের আকাশ

‘মানুষের ব্রেইন কাজ করে হার্টের মতো, বিরামহীনভাবে স্পন্দিত হয়ে চলে দিন-রাত, শৈশব থেকে বৃদ্ধকাল পর্যন্ত। এর মধ্যে লিপিবদ্ধ এবং সংরক্ষিত হয় বিলিয়ন বিলিয়ন স্মৃতি, অভ্যাস, যোগ্যতা, আশা এবং ভয়। ত্রিশ বছর আগে শোনা কিস কিস আওয়াজ কখনও অনুভূত হয় নাই। কিন্তু বিরতিহীনভাবে কল্পনা করা হয়েছে।

নরকের ভয় ও ঈশ্বরের ভালোবাসা এবং তারা ভরা আকাশের দৃশ্য।’ কথাগুলো ‘মাইন্ড পাওয়ার’ নামক একটি বইয়ে এভাবেই তুলে ধরা হয়েছে। অনুপ্রেরণামূলক বইটি পাঠককে নেতিবাচক চিন্তা থেকে অনেক দূরে নিয়ে যেতে পারে বলে বিশ্বাস লেখকের। আর এবারের বইমেলায় এখন পর্যন্ত এই বইটিই নাকি ঝিনুক প্রকাশনী নামের প্রকাশনা সংস্থার সর্বোচ্চ বিক্রিত বই-এমনই দাবি প্রকাশনা সংস্থার বিক্রয় প্রতিনিধি নাদিম খান নিলয়ের।

এদিকে এবারও বইমেলায় শুক্রবারের ছাপ পড়েছে। সরকারি ছুটির দিন হওয়ায় শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বস্তরের মানুষের পদচারণ পড়েছে মেলাতে। গতকাল সকাল থেকেই শিশুদের পদচারণায় জমজমাট ছিল অমর একুশে বইমেলার শিশু চত্বর। অভিভাবকদের সঙ্গে দলবেঁধে মেলায় এসেছে নানা বয়সের শিশু-কিশোররা। মেলায় এক স্টল থেকে অন্য স্টলে যাচ্ছে তারা, বই দেখছে, কিনছে। শিশুদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে কমিকস, রূপকথা, গল্প, সায়েন্স ফিকশন, অঙ্ক নিয়ে মজার খেলা ও ছড়ার বই।

বেশ কয়েকবছর ধরে মাসব্যাপী বইমেলার প্রতি শুক্রবার প্রথম প্রহরকে ‘শিশু প্রহর’ ঘোষণা করা হয়। নানান আয়োজনের পাশাপাশি এই সময়টাতে মেলায় থাকে জনপ্রিয় শিশুতোষ অনুষ্ঠান সিসিমপুরের চরিত্র ইকরি, হালুম, টুকটুকি ও শিকুদের উপস্থিতি। শিশু-কিশোররাও তাদের সঙ্গে মেতে ওঠে নানা খুনসুটিতে। তবে এবার সেসব না থাকায় কিছুটা মন খারাপ শিশুদের।

‘মাইন্ড পাওয়ার’ নামক বইটিতে আরো বলা হয়েছে, ‘তবে আমাদের সব চেয়ে নিকৃষ্ট ভুল হচ্ছে মানসিক ক্লান্তিকে শারীরিক ক্লান্তি হিসেবে বিবেচনা করি। আমরা আমাদের দেহকে বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে শারীরিক ক্লান্তি কাটিয়ে ওঠতে পারি। কিন্তু ব্যর্থতার ফলে যে মানসিক ক্লান্তি হয় তা দেহকে বিশ্রামের সুযোগ দিয়ে দূর করা যায় না। সেটা আরো জটিল করে তোলে। প্রতিবন্ধকতা যে রকমেরই হোক না কেন এটা দূর করতে হবে দ্রুত, ব্যর্থতার ক্লান্তিতে ডুবে যাওয়ার আগেই। যখন মানুষ তার মনকে বিশেষভাবে ব্যবহার করতে শেখে, তখন তার সৃজনশীলতা বৃদ্ধি পায়, স্মৃতিশক্তি উন্নত হয় এবং সে আরো ভালোভাবে বিভিন্ন সমস্যা মোকাবেলায় সক্ষমতা অর্জন করে।’

এবারের একুশে বইমেলায় এসেছে এই বইটি। সোহরাওয়ার্দি প্রাঙ্গণের স্টল ঝিনুক প্রকাশনী ‘মাইন্ড পাওয়ার’ বইটি নিয়ে এসেছে পাঠকদের জন্য। বইটি অনুবাদ করেছেন তাহমিদ আহমেদ। তার ভাষ্য, এই বইটি মূলত অনুপ্রেরণামূলক বই। আর এইসব রিমার্কেবল ফিচার ও আর্টিকেলের সাহায্যে আপনি বৃদ্ধি করতে পারেন আপনার এই মনের ব্যবহারিক দক্ষতা।

তিনি জানান, আমরা অনেক সময় নেতিবাচকি চিন্তাভাবনা করি। আর এই নেতিবাচক চিন্তা যেন না হয় সেই সম্পর্কে এই বইটি লিখা। তবে পাঠকের চাহিদা অনুযায়ী ছোটরা সাইন্সফিকশনে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে। একই সাথে বড়দের পছন্দের তালিকায় বেশি হচ্ছে উপন্যাস। তারা সে দিকেই বেশি ঝুকছে।

তবে যারা কলেজে পড়ুয়া বা অল্পবয়সী তরুণ অথবা বিশ্ববিদ্যালয় গণ্ডি পার হচ্ছে অর্থাৎ বয়সটা যাদের আঠার থেকে ত্রিশের নিচে তাদের মূলত পছন্দ বেশি প্রেমের উপন্যাস। ঢাকা কলেজের চতুর্থ বর্ষের ছাত্র মো. তারেক আজিজ উৎপলের মূলত প্রেমের উপন্যাস বেশি পছন্দ। বই মেলায় এসেছেন প্রিয় জনের জন্য উপহার হিসেবে বই কিনতে।

প্রেমের উপন্যাস কেন পছন্দের শীর্ষে এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি ভোরের আকাশকে জানান, প্রেমের উপন্যাস পছন্দ করার দুটি কারণ। মানুষের জীবনে যে বসন্তটা থাকে সেটা হচ্ছে এ বয়সটায়। এই বয়সটায় প্রেমের উপন্যাস সাধারণত সকলের পছন্দের শীর্ষে থাকে। আরেকটা হচ্ছে এই বয়সে অনেকের প্রিয়জন থাকে। তারা সে সময়টায় প্রিয়জনকে প্রেমের উপন্যাস দিয়ে থাকে।

বইমেলার চতুর্থ দিন লায়লা আক্তার নামের একজন ব্যাংক কর্মকর্তা তার স্বামী এবং সন্তানকে নিয়ে এসেছেন মেলায়। সন্তান এবং নিজের জন্য বেশ কিছু বই কিনেছেন। ফেরদৌস আলমের লেখা ‘জানার আছে অনেক কিছু’ বইটি কিনেছেন ছেলের জন্য। নিজের জন্য কিনেছেন, মাহবুবুর রহমান রিপনের সম্পাদনায় ‘বঙ্গবন্ধুর রাজ্জাক’ বইটি, ড, যশোদা জীবন দেবনাথ এর অনুবাদিত ‘পূর্ব পাকিস্তানে ভারতের গোপন নৌযুদ্ধের অপ্রকাশিত গল্প ১৯৭১ অপারেশন’ বইটি এবং সৈয়দ ওয়ালীউল্লাহ লেখা ‘কদর্য এশীয়’ বইটি।

লায়লা আক্তার ভোরের আকাশকে বলেন, বই এখন টুকটাক পড়া হয়। অবশ্য এখন শুধু বই কিনে জমিয়ে রাখছি। যখন সময় পাব বা অবসর জীবনে যাব তখন বইগুলো পড়ব। একসময় অনেক বই পড়তাম। এখন ব্যস্ততা, পারিবারিক নানান কারণে বই পড়া হয়া ওঠে না। তবে বইয়ের প্রতি যে ভালবাসাটা তা এখনো শেষ হয় নাই।

টঙ্গী দারুল উলুম মাদ্রাসা থেকে দুই বন্ধু নাজমুল হাসান এবং ওয়াক্কাস উদ্দিন জিসান বইমেলায় এসেছে তাদের পছন্দের কিছু বই কিনতে। ইসলামিক রাইটারদের বই তাদের বেশি পছন্দ। সঙ্গে আরিফ আজাদ, সালাউদ্দিন জাহাঙ্গীর, মাহিন মাহমুদ আতিকুল্লাহর বইও তাদের পছন্দ। মেলায় মুগনিউর রহমান তাবরীজ এর লেখ ‘অ্যা লেটার টু অ্যাথিস্ট’ বই ও প্রিন্স মাহমুদ সজলের লেখা ‘সানজাক-ই উসমান’ বইটি কিনেছেন।

এদিকে বাংলা একাডেমির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, অমর একুশে বইমেলার চতুর্থ দিন গতকাল ১৭৭টি নতুন বই এসেছে। এর মধ্যে ৩৩টি বই হচ্ছে বঙ্গবন্ধুর জীবনের ওপর। যার মধ্যে একটি বই বঙ্গবন্ধুর নিজের লেখা ‘কারাগারের রোজনামচা’।

মন্তব্য

Beta version