আমার দেবী, আমি ভূমণ্ডলে তোমার মহানুভবতা ও মহিমা ঘোষণা করছি, চিরকাল তোমার মহানুভবতার গুণগান করে যাব-এনহেদুয়ানা। উপরের বাণীটি আজ থেকে ৪ হাজার ২৭৪ বছর আগের অর্থাৎ যিশুর জন্মের ২২৫৮ বছর আগের। এই প্রার্থনা সভার নেতৃত্ব দিয়েছিলেন যে নারী, তার নাম এনহেদুয়ানা। সেসময় তিনি ছিলেন ২৭ বছরের পূর্ণ একজন যুবতী।
এনহেদুয়ানা শব্দের অর্থ অন্তরীক্ষ দেবী। এনহেদুয়ানা ছিলেন মানব ইতিহাসের প্রথম নারী কবি। তিনি শুধু প্রথম নারী কবিই না তিনি পৃথিবীর সর্বপ্রথম কবি। পাশাপাশি প্রথম সাম্রাজ্যের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা আক্কাদের রাজা সরগনের কন্যা। তার বাবা তাকে সুমেরীয় শহরের কেন্দ্রিয় মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হিসেবে নিযুক্ত করেছিলেন।
এনহেদুয়ানা তার সময়ের রাজনীতি, ধর্ম এবং সাহিত্যের অসাধারণ পরিবর্তনকে প্রভাবিত করেছিলেন এবং এই পরিবর্তনকে ইতিহাসে পরিণত করেছিলেন। ইতিহাসের প্রথম কবি ও লেখক হিসেবে এনহেদুয়ানাকে গণ্য করা হয়। তিনি নিজের লেখায় নিজেকে চিহ্নিত করেছেন যা ইতিহাসের প্রথম কবি হিসেবে তাকে স্বীকৃতি দিতে বাধ্য করেছে।
প্রার্থনা সংগীতেরও প্রথম লেখক এনহেদুয়ানা। মূলত তার কবিতাগুলোই প্রার্থনাসভা ও সংগীতের ভিত্তি নির্মাণ করে। সেদিক থেকে এনহেদুয়ানা ধর্মাবতারের কাজ করেছেন। তার সময়ের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ ধর্মীয় ব্যক্তিত্ব হিসেবে সম্মানিত ছিলেন। এমনকি মৃত্যুর পরেও একজন প্রায় ঐশ্বরিক ব্যক্তিত্ব হিসেবে মান্য হতেন। এনহেদুয়ানার লেখা স্তবগুলো বিশ্বস্ততার সাথে অনুলিপি করা হয়েছিল এবং পরবর্তী প্রায় পাঁচশ বছর আচার-অনুষ্ঠানে ব্যবহার করা হয়। অতঃপর তিনি প্রায় তিন সহস্রাব্দের জন্য ইতিহাসের ধূলিকণায় ডুবে গেলেন।
ধারণা করা হয়, এনহেদুয়ানা চার হাজার তিনশত বছরেরও বেশি আগে খ্রিস্টপূর্ব ২২৮৫ থেকে ২২৫০ অব্দে, সুমেরীয় নগর-রাজ্যের উরে বাস করতেন। এছাড়া সেখানের একটি মন্দিরের প্রধান পুরোহিত হয়েছিলেন। সেই সময় এনহেদুয়ানার আগে কোনো নারী প্রধান পুরোহিত ছিল না।
এবারের অমর একুশের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের বাউন্ডুলে প্রকাশনীর ৬১৩ নং স্টলে ইতিহাসের প্রথম কবির ওপর একটি গবেষণাধর্মী বই এসেছে। গবেষণাধর্মী এই বইটি লিখেছেন সালেক আল মাহমুদ।
বাউন্ডুলে প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি শোভা ভোরের আকাশকে বলেন, আমাদের স্টলে গবেষণাধর্মী বইগুলোর মধ্যে ‘এনহেদুয়ানা’ বইটি অনেক বেশি চলছে। এই বইটি বিশ্বের প্রথম নারী কবির ওপর লেখা একটি গবেষণাধর্মী বই।
এই বইটি লেখার পিছনের কাহিনী জানতে চাওয়া হয় বইটির লেখক সালেক আল মাহমুদের কাছে। তিনি ভোরের আকাশকে বলেন, এই বইটি মূলত ধর্ম তাত্ত্বিক বই। ইতিহাসের প্রথক কবি এনহেদুয়ানার ওপর বাংলাদেশে এখনো কোনো বই লেখা হয়নি। সেই যায়গা থেকেই লেখা আমার এই গবেষণাধর্মী বইটি। উনি বিশ্বের প্রথম কবি হলেও উনি একজন ধর্মগ্রন্থ রচয়িতা। চার হাজার বছর আগে তিনি একটি জটিল সমাজে বাস করতেন। সে সময় তিনি সমাজের অনেক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন।
তিনি বলেন, এই বইটি হচ্ছে ধর্মের ভিত্তিতে প্রাচীন ইতিহাস। ধর্মের যে বিবর্তনগুলো সেই সময়টায় হয়েছে। সে সময়ে ধর্মগুলো কেমন ছিল। ধর্মীয় রাজনীতিগুলো কেমন ছিল। সমাজে নারীদের ভূমিকা কেমন ছিল এই সকল কিছুই এই বইটিতে উল্লেখ আছে। যারা ধর্ম নিয়ে জানতে ইচ্ছুক, ধর্মের বিবর্তনগুলো জানতে চায় তাদের জন্য মূলত বইটি। আর এনহেদুয়ানাকে নিয়ে বাংলাদেশে কোনো কাজ হয়নি। কবিতার পাশাপাশি উনি যে এতগুলো সেক্টরে অবদান রেখেছে এটা পাঠকরা বইটি থেকে জানতে পারবে।
এদিকে করোনা মহামারির মধ্যে অন্যবারের চেয়ে এবার বইমেলায় উপস্থিতি সন্তোষজনক। তাই নবম দিনেও জমজমাট দেখা গেছে মেলা। স্টলগুলোতে বেচা-বিক্রি বেশি হওয়াতে সন্তুষ্টি প্রকাশ করেছেন প্রকাশকরাও। গতকাল বুধবার বইমেলা ঘুরে দেখা যায়, বইমেলায় উপন্যাস বিক্রি হচ্ছে বেশি। তবে বৈজ্ঞানিক, কল্পকাহিনীর বইও তুলনামূলক বেশি বিক্রয় হচ্ছে। এছাড়া বাচ্চাদের বই এবং ইসলামিক বই বিক্রির সংখ্যা চোখে পড়ার মতো।
মন্তব্য