-->
শিরোনাম
বইমেলা প্রতিদিন

বিক্রির শীর্ষে উপন্যাস

ইফ্ফাত শরীফ
বিক্রির শীর্ষে উপন্যাস
প্রাণের বাইমেলার স্টলে পছন্দের বই খুঁজছেন বইপ্রেমীরা। ছবিটি বৃহস্পতিবার সোহরাওয়ার্দী উদ্যান থেকে তোলা। ভোরের আকাশ

‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখো/দিও তোমার মালাখানি/বাউলের এই মনটারে... ভিতরে-বাহিরে আন্তরে অন্তরে আছো তুমি হৃদয়জুড়ে...’। রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর বিখ্যাত এ কবিতা সিনেমার গানে হিসেবেই চেনেন সবাই। তবে মুক্তিযুদ্ধ-পরবর্তী বাংলাদেশের উত্তাল কালপর্বে কবি রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর আত্মপ্রকাশ।

মাত্র ৩৫ বছরের স্বল্পায়ু জীবনের তুলনায় রুদ্রের সৃষ্টিশীলতা পরিমাণে সুপ্রচুর। ঈর্ষণীয়সংখ্যক কবিতা ছাড়াও তিনি রচনা করেছেন অসংখ্য গান, গল্প, গদ্য : একটি কাব্যনাট্য ও চিত্রনাট্য।

এবারের একুশে গ্রন্থমেলায়ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের প্যাভিলিয়নে নং-৯ ‘অক্ষর প্রকাশনী’তে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লাহর ‘কবিতাসমগ্র’ বইটি পাঠকদের মধ্যে ব্যাপক সাড়া ফেলছে। বইটিতে কবির সব গ্রন্থিত ও অগ্রন্থিত কবিতা পাওয়া যাবে। সুরারোপিত গানগুলোও সন্নিবেশিত হয়েছে এতে। ২৫ শতাংশ কমে বইটি বিক্রি হচ্ছে ৫৬০ টাকায়।

দ্রোহ ও সংগ্রামী চৈতন্য রুদ্রের কবিতার আত্মাস্বরূপ। তারুণ্যশাসিত এ দ্রোহ বিস্তারিত হয়েছে সব অসাম্য, শোষণ, স্বৈরাচার, সাম্প্রদায়িকতা ও নব্য ঔপনিবেশিকতার সব ষড়যন্ত্রের বিরুদ্ধে। নিজেকে ‘শব্দ-শ্রমিক’ উল্লেখ করে রুদ্র কাঁধে তুলে নিয়েছিলেন সাম্যবাদী সমাজ নির্মাণের প্রত্যয়। পাশাপাশি মাটি, মানুষ ও ঐতিহ্যের প্রতি আমৃত্যু দায়বোধ তার কবিতাকে দিয়েছে শিকড়স্পর্শী চরিত্র।

অক্ষর প্রকাশনীর বিক্রয় প্রতিনিধি শাহরিয়ার হোসেন খান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমাদের স্টলে রুদ্র মুহম্মদ শহিদুল্লার বই পাঠকের বেশি পছন্দ। এছাড়া উপন্যাসের এবং ধর্মীয় বইগুলোর পাঠক বেশি পাচ্ছি।’

এদিকে এবারের মেলায় প্রকাশের তালিকায় কাব্যগ্রন্থ এগিয়ে থাকলেও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস। গতকাল বৃহস্পতিবার মেলার দশম দিন পর্যন্ত বিক্রির তথ্য থেকে এ কথা জানা গেছে।

বিকেল ৩টায় হাবিবুল্লাহ বাহার কলেজের এইচএসসি শিক্ষার্থী দোহা খান এবং আবিদা খান (প্রীতি) বন্ধুদের সঙ্গে এ বছরে আজই প্রথম বইমেলা ঘুরতে আসে। ঘুরতে এসে বন্ধুদের সঙ্গে তিনটি বই কিনেছে। এর মধ্যে একটি বঙ্গবন্ধুর ওপর লেখা বই, একটি গল্পের বই এবং সঙ্গে ইংরেজি ভোকাবুলারির একটি বই কিনেছেন।

সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের দোয়েল প্রকাশনীর ১২১ ও ১২২নং স্টলের বিক্রয় প্রতিনিধি তানজিমুর রহমান ভোরের আকাশকে বলেন, ‘আমাদের স্টলে গবেষণা ধর্মী বইগুলোই মূলত বেশি বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি ইংরেজি শেখার জন্য যেসব বই প্রয়োজন, সেগুলো বেশি চলছে। যারা মূলত ইংরেজি শিখতে চাচ্ছে অথবা ইংরেজি ভাষায় কম পারদর্শী, তারাই এ ধরনের বইগুলোর পাঠক।’

তিনি বলেন, ‘মানুষের ব্রেইন ছন্দ মনে রাখে ৯০ গুণ বেশি। আমাদের বইগুলো হচ্ছে সৃজনশীল পদ্ধতির, যা আধুনিক ও বিজ্ঞানসম্মত।’ নানা শঙ্কা নিয়ে শুরু হয় অমর একুশে গ্রন্থমেলা। গতকাল বৃহস্পতিবার ছিল গ্রন্থমেলার দশম দিন। মেলা শুরু হয় দুপুর ২টা থেকে। লেখক, পাঠক ও প্রকাশকদের পদচারণে মুখর মেলা প্রাঙ্গণ। আগত বইপ্রেমীদের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে বই বেচা-বিক্রি।

প্রকাশের তালিকায় কাব্যগ্রন্থ এগিয়ে থাকলেও বিক্রির শীর্ষে রয়েছে উপন্যাস। তাছাড়া অনুপ্রেরণামূলক, গল্প, রাজনীতি ও অনুবাদের বইয়ের কদরও কমে যায়নি। মেলায় সময় অতিবাহিত হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে পাঠকদেরও ভিড় বাড়তে থাকে। এদিকে প্রকাশকরা বলছেন, গ্রন্থমেলায় পাঠকের থেকে দর্শনার্থী বেশি। মেলায় মেয়েরা বেশিরভার উপন্যাস কিনছেন।

একইসঙ্গে সায়েন্সফিকশন, থ্রিলার এবং গোয়েন্দা সিরিজের বইগুলো বেশি কিনছেন স্কুল কলেজের ছাত্ররা। তবে সপ্তাহের অন্যান্য দিনের থেকে ছুটির দিনগুলোয় যেমন দর্শনার্থীর ভিড় থাকে, তেমনি বইও বেশি বিক্রি হয়।

মন্তব্য

Beta version