-->
শিরোনাম

কবিতা পাঠে সাহিত্যের আগ্রহ বাড়ে

ইফ্ফাত শরীফ
কবিতা পাঠে সাহিত্যের আগ্রহ বাড়ে
এবার গ্রন্থমেলায় ২৪তম দিনে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৭। ছবি- ভোরের আকাশ

পাঠক যখন কোনো কবিতা পড়েন, তখন অল্পসময়ের মধ্যে ছন্দে ছন্দে আনন্দের সঙ্গে অনেক গভীর কিছু জানতে পারেন। কবিতা অল্প কথায় পাঠককে অনেক কিছু বোঝায়। সাহিত্যিক ও কবিদের মতে কবিতা পাঠের মাধ্যমে কোনো ব্যক্তির সাহিত্যের প্রতি ভালোবাসা এবং আগ্রহ বাড়ে। এছাড়া কবিতা পাঠককে সঠিক জায়গায় সঠিক শব্দ প্রয়োগ শেখায়। পাঠকের ভেতর এক ধরনের সাহিত্যিক মনোভাব তৈরি করে। এ কারণে একজন চমৎকার মানুষ হতে হলে কবিতার প্রতি গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলছেন কবি মিজান মজুমদার ও তামান্না তাসকীন।

‘খালি করে দাও শহরের সকল রাস্তা/ফুটপাতগুলো জনশূন্য করে দাও/বাড়ির ছাদে যেন আজ আর কেউ না ওঠে/জানালা খুলে কেউ যেন না ফেলে চোখের পলক/এই শহরে আমি আর আমার প্রিয়তমা। এরপরও যদি কেউ হেঁটে বেড়াও/রাস্তায় ফুটপাতে উদ্যানে কিংবা নদীর কিনারে নিশ্চিত জেন/তোমার জন্য অপেক্ষা করছে মৃত্যু।’ লালসায় তেতে ওঠা পৃথিবীর মানুষের বিকৃতি আর মুখোশ দেখে ক্ষুব্ধ মিজান মজুমদার তার লেখা ‘বিভ্রম’ কবিতার বইটিতে এভাবেই উন্মোচন করেন সমাজের মুখ ও মুখোশ। তার অন্তর্গত বেদনা ছড়িয়ে দিয়ে দ্রোহের বার্তা দিয়ে যান। দুর্ভেদ্যতার দেয়াল ভেঙে শব্দের সরল এক মেঠোপথে নিয়ে যান পাঠককে। ‘বিভ্রম’ সচেতন পাঠককে তৃপ্ত করবে বলেই প্রত্যাশা এ লেখকের।

বইটি সম্পর্কে লেখক মিজান মজুমদারের সঙ্গে কথা হয় ভোরের আকাশের। তিনি বলেন, বর্তমান সময়ের সামাজিক অবস্থা, রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে; এমনকি ব্যক্তি পর্যায়ের কথা এ কবিতার বইয়ে তুলে ধরার চেষ্টা করেছি। সমাজের বিভ্রান্ত সময়ের কথাই এই ‘বিভ্রম’ কাব্যগ্রন্থে তুলে ধরা হয়েছে। আমি বিশ্বাস করি, আমার পাঠকরা এ বই পড়ার পর নতুন আস্বাদন পাবেন। নতুন লেখকদের প্রতি আমার একটাই প্রত্যাশ- তারা যেন তাদের লেখায় দেশাত্ববোধ এবং দেশপ্রেমকে তুলে আনেন।

‘আমি একটি কবিতা লিখতে চাই/যে কবিতায় থাকবে না কোনো বেদনা/থাকবে না কোনো অশ্রু/হত্যা আর বঞ্চনার কথা/থাকবে না কোনো হতাশা/দ্বন্দ্ব আর ব্যর্থতার গ্লানি। আমি একটি কবিতা লিখতে চাই/যে কবিতা পড়ে রুদ্ধ হবে না কণ্ঠ/প্রেমিক হবে না প্রেমিকার বিচ্ছেদে অবগুণ্ঠ।’ জীবনে চলার পথে সবাইকেই কমবেশি চড়াই-উতরাই পার হয়ে এগিয়ে যেতে হয়। চলার পথে যে যত বাধার মধ্যে পড়ে, তার ভেতর সেই বাধাকে জয় করার স্পৃহা তত যেন বাড়ানো যায়। এমন ইতিবাচক প্রত্যাশা থেকে কবি তামান্না তাসকীন তার ‘কবিতার শহরে’ বইটি লিখেছেন। যেখানে ভালোবাসার মতো অবারিত আবেগের পাশাপাশি দেশপ্রেম, মানবতা, প্রকৃতি, জীবনযুদ্ধ, বন্ধুত্ব, স্বপ্ন আর হারিয়ে যাওয়া কষ্টকে অনুভব করা হয়েছে হৃদয় দিয়ে। এ বইয়ের কবিতাগুলো অত্যন্ত জীবন-ঘনিষ্ঠ, যা ব্যক্তিকে আত্মমূল্যায়নের পাশাপাশি আত্মতৃপ্তির অনুভবকে উৎসাহিত করবে এবং বেঁচে থাকার আনন্দকে আরো একবার স্পর্শ করার আগ্রহ তৈরি করবে। নিজের বই সম্পর্কে এভাবে বলেন লেখক তামান্না তাসকীন।

ভোরের আকাশের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, ‘কবিতার শহর’ বইটি আমার ছাপা হওয়া প্রথম কবিতার বই। বইটি এ বছর একুশে গ্রন্থমেলায় এসেছে। ‘কবিতার শহরে’ লেখা সব কবিতাই আমার জীবনের বিভিন্ন সময়ে লেখা। আমার এ কবিতার বইয়ে বন্ধুত্ব, প্রকৃতি নিয়ে কবিতা আছে। পাশাপাশি বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে আমাদের প্রজন্ম কী ভাবছে, সেই ভাবনার ওপর কবিতা আছে। এমনকি দেশপ্রেম নিয়েও কিছু কবিতা আছে। এ বইয়ের বেশকিছু কবিতা, যা ভাবাবেগ ও বাস্তবতার মিশেল দিয়ে তৈরি হয়েছে। কর্মব্যস্ত জীবনে একটুখানি অবসর সময়ে নিজের ভাবনাকে যতটুকু পেরেছি নিজের মতো করে লিখে রাখার চেষ্টা করেছি। আমার লেখা কবিতাগুলো যদি কারো ভালো লাগে, তাহলে আমার লেখাগুলো সার্থক হয়েছে বলে মনে করব। বইটি ১৫১-১৫৩নং স্টল ‘উৎস’ প্রকাশনী থেকে ১১২ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।

এবার গ্রন্থমেলায় ২৪তম দিনে এখন পর্যন্ত প্রকাশিত বইয়ের সংখ্যা ২ হাজার ৪৬৭। এর মধ্যে ৭৮৬টি নতুন কবিতার বই প্রকাশিত হয়েছে। মেলায় সর্বাধিক প্রকাশ হয়েছে কবিতার বই। কবিতার বই প্রকাশ বেশি হলেও এবার মেলায় কবিতার পাঠক একদমই কমছিল বলে জানিয়েছেন প্রকাশক এবং মেলায় স্টলগুলোর বিক্রয় প্রতিনিধিরা।

গতকাল বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টা পর্যন্ত উদ্যান প্রান্তের মেলা ছিল নিয়মিত পাঠক, লেখক ও প্রকাশকের আনাগোনা। লোকসমাগম তেমন একটা দেখা যায়নি। অন্যপ্রকাশ ও জনপ্রিয় প্রকাশনার সামনে পাঠকের জটলা থাকলেও সেটাকে ভিড় বলা যায় না। বেশিরভাগ স্টল মালিক, বিক্রয় প্রতিনিধিদের বসে বা দাঁড়িয়ে খোশগল্প করতে দেখা গেছে।

এমন অবস্থাকে অবশ্য স্বস্তিদায়ক বলছেন পাঠকারা। বাংলা প্রকাশের সঙ্গে কথা হয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ঝর্ণা আক্তারের। তিনি বলেন, মেলায় অতিরিক্ত ভিড় নেই। এমনটাই ভালো, দেখে-শুনে বই কেনা যাচ্ছে। সময় নিয়ে দেখে তালিকার বাইরে থাকা বইও পছন্দ করে কেনা যায়। আমার তো ভালোই লাগছে।

মন্তব্য

Beta version