ঢাকা: আকাশ সংস্কৃতির বদৌলতে অনুপ্রবেশ করা ভিনদেশি অপ্রয়োজনীয়, বিজাতীয় ও অপসংস্কৃতির সবকিছু বর্জন করার আহ্বান জানিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ। বৃহস্পতিবার (২২ সেপ্টেম্বর) শিল্পকলা পদক ২০১৯ ও ২০২০’প্রদান অনুষ্ঠানে বঙ্গভবন থেকে ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে রাষ্ট্রপ্রধান এ আহ্বান জানান।
এদিন শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার মূল মিলনায়তনে আনুষ্ঠানিকভাবে এই পদক প্রদান করা হয়।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, অসাম্প্রদায়িক ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনাসমৃদ্ধ সংস্কৃতির বিকাশে তৃণমূল পর্যায়েই উদ্যোগ নিতে হবে। তাই তাদেরকে সুস্থ ও মানবিক মূল্যবোধসম্পন্ন নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে হলে ব্যক্তি, পারিবারিক, সামাজিক ও জাতীয় পর্যায়ে সুস্থ সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে।
রাষ্ট্রপতি হামিদ সংস্কৃতির চর্চা তৃণমূল, বিশেষ করে পরিবার থেকেই, শুরু করারও তাগিদ দেন।
রাষ্ট্রপতি দেশীয় সংস্কৃতি বিকাশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের অবদানের কথা উল্লেখ করে বলেন, বঙ্গবন্ধু ১৯৭৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ‘বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি’ প্রতিষ্ঠা করেন এবং এর কার্যক্রম এখন ৬৪ জেলার ৪৯২টি উপজেলায় সম্প্রসারিত হয়েছে।
আবদুল হামিদ বলেন, ‘মুজিব শতবর্ষ’ উদযাপনের অংশ হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি আয়োজিত বিভিন্ন কার্যক্রম দেশে-বিদেশে বিশেষ করে তৃণমূল র্পযায়ে বঙ্গবন্ধুর জীবন ও র্কম এবং তাঁর শিল্প ও সাংস্কৃতিক ভাবনা মানুষের মাঝে ছড়িয়ে দিতে প্রশংসনীয় ভূমিকা পালন করেছে। আমাদের তৃণমূল পর্যায়ে ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সকলকে আবহমান কালের সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য সর্ম্পকে সচেতন করতে হবে।
সংস্কৃতিকে জীবনের দর্পণ উল্লেখ করে রাষ্ট্রপতি বলেন, আমাদের সংস্কৃতির বিকাশ ও ঐতিহ্য জানিয়ে দেয় যে, জাতি হিসেবে আমরা কতটা উন্নত ও আধুনিক। তিনি বলেন, দেশের যুবসমাজকে আধুনিক, দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করতে হলে তাদের সাংস্কৃতিক কর্মকান্ডে সম্পৃক্ত করতে হবে। জঙ্গিবাদ ও সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলায় আমাদের সংস্কৃতি প্রধান অস্ত্রের ভূমিকা রাখতে পারে বলেও মনে করেন রাষ্ট্রপতি।
আশংকা প্রকাশ করে রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ বলেন, ছোটো ছোটো ছেলেমেয়ে আর যুব সম্প্রদায় ফেসবুক, ইউটিউব, টিকটক, গেমসসহ বিভিন্ন অ্যাপসের পেছনে ছুটতে ছুটতে ক্লান্ত। তাদের কাছে মোবাইল আর ল্যাপটপই বিনোদন আর খেলাধুলার প্রধান সামগ্রী। এভাবে চলতে থাকলে, তারা নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকেই একদিন ভুলে যাবে। তিনি আরো বলেন, সামাজিক অবক্ষয়রোধে সংস্কৃতি হচ্ছে রক্ষাকবচ। সমাজ থেকে জঙ্গিবাদ, মৌলবাদ, হিংসা-বিদ্বেষ দূর করতে সংস্কৃতির বিকাশ খুবই জরুরি। তিনি বলেন, গ্রাম থেকে শহর, নিম্নবিত্ত থেকে উচ্চবিত্ত প্রতিটি স্তরে সংস্কৃতির র্চচা যত বেশি হবে, সমাজও ততবেশি আলোকিত হবে। আর আলোকিত সমাজই পারে মানবিক সমাজ গড়তে এবং একটি দেশ ও জাতির কাংক্ষিত সমৃদ্ধি ও কল্যাণ নিশ্চিত করতে।
অনুষ্ঠানে ২টি প্রতিষ্ঠান ও ১৮জন গুণী শিল্পীকে প্রদান করা হয় "শিল্পকলা পদক"।
শিল্প ও সংস্কৃতিতে বিশেষ অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে শিল্পকলা একাডেমি প্রবর্তিত শিল্পকলা পদক’ ২০১৯ ও ২০২০ প্রাপ্ত গুণীজনরা হলেন- নাট্যকলায় মাসুদ আলী খান ও মলয় ভৌমিক, কণ্ঠসঙ্গীতে হাসিনা মমতাজ ও মাহমুদুর রহমান বেণু, চারুকলায় আবদুল মান্নান ও শহিদ কবীর, চলচ্চিত্রে অনুপম হায়াৎ ও শামীম আখতার, নৃত্যকলায় লুবনা মারিয়াম ও শিবলী মোহাম্মদ, লোকসংস্কৃতিতে শম্ভু আচার্য্য ও শাহ আলম সরকার , যন্ত্রসঙ্গীতে মো. মনিরুজ্জামান ও মো. সামসুর রহমান,ফটোগ্রাফিতে এম এ তাহের ও আ ন ম শফিকুল ইসলাম স্বপন আবৃত্তিতে হাসান আরিফ (মরণোত্তর) ও ডালিয়া আহমেদ, সৃজনশীল সাংস্কৃতিক সংগঠন ছায়ানট ও দিনাজপুর নাট্য সমিতি।
পদকপ্রাপ্ত প্রত্যেককে প্রদান করা হয় একটি করে স্বর্ণপদক, সনদপত্র এবং ১ লক্ষ টাকার চেক। এতে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, ও সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর।
সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে.এম খালিদের সভাপতিত্বে এতে স্বাগত ববক্তৃতা করেন শিল্পকলা একাডেমির একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। পদক প্রদান শেষে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানে অংশ নেয় বরেণ্য ও প্রতিশ্রুতিশীল শিল্পীরা।
ভোরের আকাশ/এসএইচ/জেএস/
মন্তব্য