মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: দেখতে দেখতে অমর একুশে বইমেলার ১১ দিন পেরিয়ে গেছে। এর মধ্যে চারটি ছিল শিশুপ্রহর। প্রতিদিনই মেলায় শিশুদের উপচেপড়া ভিড় ছিল। সর্বশেষ শনিবারও অভিভাবকদের সঙ্গে মেলায় এসেছিল কচিকাঁচারা। মেলায় সারা দিন আনন্দ-উল্লাসে কাটিয়েছে তারা। পাশাপাশি বইও কিনেছে। তবে শিশুদের জন্য বই কিনতে গিয়ে দ্বন্দ্বে পড়ে যান অনেক অভিভাবক।
বিশেষ করে যেসব অভিভাবকের শিশুদের পাঠযোগ্য বই বা খ্যাতিমান লেখকদের বই সম্পর্কে ধারণা নেই, তারা। বাধ্য হয়ে এসব অভিভাবক স্টলে থাকা বিক্রয় প্রতিনিধিদের দ্বারস্থ হন। কিন্তু অধিকাংশ বিক্রয় প্রতিনিধিরাই তাদের সঠিক নির্দেশনা দিতে ব্যর্থ। তাদের শিশুদের হাতে ধরিয়ে দেন নিজেদের পছন্দের লেখক বা শিশুদের উপযোগী নয় এমন সব বই। ফলে শিশুরা মিসগাইড হচ্ছে।
মেলায় আশা ছোট্ট রাতুলের হাতে শোভা পাচ্ছিল একটি কিশোর উপন্যাস। তার বয়স সাত। এখনো উপন্যাস পড়ার মতো বয়স তার হয়নি। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মো. আজগর আলী নামে একজন অভিভাবক ভোরের আকাশকে বলেন, ‘সত্যি বলতে আমি নিজে তেমন বই পড়িনি। শিশুদের বই সম্পর্কেও ধারণা কম। যে কারণে বাচ্চার জন্য বই কিনতে স্টলে থাকা কর্মীর সাহয্য নিই। তিনি আমার ছেলের হাতে এ বই ধরিয়ে দিয়েছেন।
একই ধরনের অভিযোগ করেন আরো অনেক অভিভাবক। বিষয়টি নিয়ে কথা বললে লেখক ও গীতিকার আহমেদ রব্বানী বলেন, ছোট্ট শিশুরা সাধারণত গল্প পড়তে ভালোবাসে। একইভাবে ছবির বই কার্টন তাদের পছন্দ। আমার মনে হয়, যারা শিশুদের বইকেনার সাজেশন দেন, তাদের শিশুদের বয়স বিবেচনা করা উচিত। খুব ছোট্ট বাচ্চারা উপন্যাস বোঝে না। তাদের সেই ধরনের বই দেয়া উচিত, যারা সেই বইটি বোঝে।
এদিকে শনিবার মেলার ১১তম দিনে দেখা গেছে, বেলা ১১টায় মেলার দ্বার উন্মুক্ত করে দেয়া হয়। বরাবরের মতো অভিভাবকদের হাত ধরে মেলায় প্রবেশ করে। সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশের শিশু কর্নারে তারা ভিড় জমায়। শিশুপ্রহর চলে দুপুর ১টা পর্যন্ত।সাপ্তাহিক ছুটির দিন পাশাপাশি শিশুপ্রহর উপলক্ষে সকাল থেকেই মেলায় দর্শনার্থীর প্রচুর ভিড় লক্ষ করা যায়। বিক্রয়ও যথেষ্ট ভালো হচ্ছে বলে জানাচ্ছেন সংশ্লিষ্টরা।
নিজের মতো নিজের সন্তানদেরও বইপ্রেমী হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্যে বইপ্রেমীরা পরিবারসহ ছুটে আসছেন নানা প্রান্ত থেকে। বই পছন্দ করতে ছোট বাচ্চাদের নিয়ে এ স্টল থেকে অন্য স্টলে যাচ্ছেন অভিভাবকরা। সন্তানের বায়না অনুযায়ী কিনছেন বই। শিশুর পড়া প্রকাশনীর বিক্রয় কর্মী নুসরাত জাহান বলেন, বিক্রি যথেষ্ট ভালো। আজকে অনেক বেশি ভিড়। হয়তো সবাই বই কিনছে না তারপরও বই কেনার হার বেড়েছে।
বেশিরভাগ অভিভাবক চাকরিজীবী হওয়ায় তারা সাধারণত একবারের বেশি বইমেলায় আসতে পারেন না। তাই তারা প্রথমবারেই তাদের বাচ্চাদের পছন্দের বইগুলো কিনে নিয়ে যাচ্ছেন। এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশুচত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভিলিয়ন ৩৪টি।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভিলিয়ন আছে ১৪৭টি। সব মিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং মোট ৭০৪টি (প্যাভিলিয়ন বাদে) স্টল থাকছে। এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
এদিকে মূল গেট থেকে ঢুকেই রয়েছে শিশুচত্বর। সেখানে সিসিমপুরসহ শিশুদের আনন্দ ও বিনোদনের জন্য প্রতিদিন নানা আয়োজন থাকছে। এ বছর উদ্বোধনের দিন প্রধানমন্ত্রী বাংলা একাডেমি ঘোষিত সাহিত্য পুরস্কার প্রদান করেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কেএম খালিদ। শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন সংস্কৃতি সচিব মো. আবুল মনসুর। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন একাডেমির সভাপতি কথাসাহিত্যিক সেলিনা হোসেন।
মন্তব্য