মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: প্রতি বছর মেলায় যত বই প্রকাশিত হয়, তার মধ্য একটি বড় অংশ থাকে তরুণ লেখকদের বই। নামিদামি সব প্রকাশনা সংস্থাসহ ছোট-বড় সব ধরনের প্রতিষ্ঠান থেকে এসব বই প্রকাশিত হয়। তবে বেশিরভাগ প্রকাশকই নতুনদের বই প্রকাশে অনাগ্র দেখান। আবার যারা বই প্রকাশ করেন, তারা নিজেরদের দায়িত্ব রাখেন খুব সীমিত।
বই প্রকাশ করেই তারা দায়িত্ব শেষ করেন। বাজারজাতকরণে তাদের তেমন ভূমিকা দেখা যায় না। প্রকাশকরা লেখকদের পুশ সেল করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। ফলে বাধ্য হয়ে অনেক লেখক পুশ সেল করার। এছাড়া তাদের কোনো উপায় থাকে না।
চলতি বছর যাদের বই প্রকাশিত হয়েছে, তাদের সঙ্গে আলাপ করে জানা যায়ম, ‘বেশিরভাগ প্রকাশক বই বাজারজাতকরণে ভ‚মিকা রাখেন না। তারা লেখকের পরিচিতজনের কাছে পুশ সেল করানোর জন্য দাগাদ দিতে থাকেন। কিন্তু বেশিরভাগ লেখই এটা করতে ব্যর্থ হয়। খুব কম লেখক আছেন, তারা বাধ্য হয়ে কাজটি করেন।
জানতে চাইলে নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন তরুণ লেখক বলেন, ‘এ বছর আমার একটি উপন্যাস বের হয়েছে। এটা আমার প্রকাশিত তৃতীয় গ্রন্থ। এবার যেখন থেকে বই বের হয়েছে তিনি বলেছিলেন বই বিক্রি বা বাজারজাতকরণের দায়িত্ব তার। কিন্তু এখন উল্টোচিত্র দেখা যাচ্ছে তিনি তার দায়িত্ব পালন করছেন না। উল্টো নিজের পরিচিতজনদের কাছে বিক্রির জন্য বলছেন। এটা সম্ভব না।
কারণ নিজের বই কাউকে কেনার কথা সবাই বলতে পারেন না। এটা সবার ব্যক্তিত্বের সঙ্গে যায় না। একই বিষয়ে জানতে চাইলে লেখক ও গীতিকার আহমেদ রব্বানী বলেন, ‘প্রকাশক সম্পর্কে সবসময় এ ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। এটা কোনোভাবেই ঠিক নয়। কারণ একজন লেখকের জন্য এটা মানহানিকর। বই বাজারজাতকরণের দায়িত্ব প্রকাশকের। যার দায়িত্ব, তাকেই পালন করতে হবে। তবে এ কথাও ঠিক যে কিছু প্রকাশক এ কাজটি করেন।
অন্যদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে জয় প্রকাশনীর প্রকাশক মো. আব্দুল মোমিন বলেন, ‘সব প্রকাশক এক নয়। অনেক প্রকাশক কাজটি করেন। তবে ব্যবসার কথা মাথায় রেখে অনেকে এমন করেন বলে শুনি। এটা আসলে যার যার ব্যক্তিগত বিষয়। আমি এমনটি করি না। এদিকে দেখতে দেখতে অমর একুশে বইমেলার অর্ধেকের বেশি দিন শেষ হয়েছে। দিন যত যাচ্ছে, ততই ভিড় আরো বাড়ছে। গতকালও মেলায় ভিড় দেখা যায়।
তবে তা আগের দুদিনের চেয়ে কম। এবার বইমেলার সেøাগানÑ ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশুচত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভিলিয়ন ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভিলিয়ন আছে ১৪৭টি। সব মিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং মোট ৭০৪টি (প্যাভিলিয়ন বাদে) স্টল।
এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। অন্যদিকে গতকাল বইমেলার ১৯তম দিনে মেলা শুরু হয় বিকেল ৩টায়, চলে রাত ৯টা পর্যন্ত।
বিকেল ৪টায় বইমেলার মূলমঞ্চে অনুষ্ঠিত হয় গোবিন্দচন্দ্র দেব এবং ভাষা-সংগ্রামী গাজীউল হক শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। এতে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গাজী আজিজুর রহমান এবং আমিনুর রহমান সুলতান। একইভাবে আলোচনায় অংশ নেন খান মাহবুব, হাসান অরিন্দম, শিহাব শাহরিয়ার, পাপড়ি রহমান, রাজীব কুমার সরকার প্রমুখ।
সভাপতিত্ব করেন আবু মো. দেলোয়ার হোসেন। এর আগের দিন বইমেলার মূলমঞ্চে শিশু-কিশোর সংগীত প্রতিযোগিতার চ‚ড়ান্ত পর্ব অনুষ্ঠিত হয়। বিকেল ৪টায় অনুষ্ঠিত হয় বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ ও জাতীয় অধ্যাপক আনিসুজ্জামান শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠান। প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন গোলাম মুস্তাফা। আলোচনায় অংশগ্রহণ করেন মোহিত কামাল ও রাজীব কুমার সরকার। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করবেন সুব্রত বড়–য়া।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য