-->

শিশুদের উচ্ছাসে মুখর বইমেলা

মুস্তাফিজুর রহমার নাহিদ
শিশুদের উচ্ছাসে মুখর বইমেলা

মুস্তাফিজুর রহমার নাহিদ: অমর একুশে বইমেলার ভাটিবেলা চলছে। দুদিন পরই ভাঙবে লেখক-পাঠকের মিলনমেলা। যে কারণে শেষদিকে এসে মেলায় সব বয়সের মানুষের উপচেপড়া ভিড়। তবে সবচেয়ে বেশি দেখা যাচ্ছে শিশুদের। শেষদিকে বাবা-মা, অভিভাবকদের হাত ধরে মেলায় আসছে তারা। শনিবার ছিল মেলার শেষ শিশুপ্রহর। শেষদিন হওয়ার কারণে এদিনই সবচেয়ে বেশি শিশুর উপস্থিতি দেখা গেছে। সারা দিন মেলায় আনন্দ-উচ্ছ¡াসে কাটিয়েছে তারা।

 

শিশুপ্রহরের শেষদিন গেট খোলার সঙ্গে সঙ্গে মেলায় ভিড় জমতে থাকে। বেলা গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে তা জনস্রোতে রূপ নেয়। মুখরিত হয়ে ওঠে মিশু কর্নার। মেলায় সিসিমপুরের কাছে ভিড় ছিল বেশি। অল্প বয়সি শিশুদের আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দিুতে ছিল সিসিমপুর। অন্যদিনের তুলনায় গতকাল শিশুরা বইও কিনেছে বেশি। বরাবরের মতো এদিনও ভ‚তের বই কিনেছে তারা। পাশাপাশি অঙ্কন, ডাইনোসর ও ছড়ার বই কিনতে দেখা গেছে।

 

এছাড়া ছবির বই শোভা পাচ্ছিল ছোট শিশুদের হাতে। জানতে চাইলে, অনন্ত নামে এক শিশু বলে, ‘আমি অনেক বই কিনেছি। ভূতের বই, ডাইনোসরের বই আর ক্রিকেটের বই। আমার বাসায় অনেক বই আছে। এবার মেলায় দুদিন এসেও অনেকগুলো বই কিনেছি। একই প্রসঙ্গে শিল্পী আক্তার নামে এক অভিভাবক বলেন, ‘আসব আসব করে মেলায় আর আসা হয়নি।

 

শেষ সময়ে এসে বাচ্চাদের নিয়ে মেলায় এসেছি। খুব ভালো লাগছে। বাচ্চাদের কিছু বই কিনে দিয়েছি। আমি নিজেই কিছু বই কিনেছি। সব মিলিয়ে ভালো লাগছে। তবে মেলায় হামলার হতে পারে এমন গুজবের কারণে বাসা থেকে বের হব কিনা, তা নিয়ে দ্বিধায় পড়ে গিয়েছিলাম।

 

এদিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের হামলার হুমকির পর শুক্রবার থেকে অমর একুশে বইমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। বাতিল করা হয়েছে সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী এবং আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের নির্ধারিত পুস্তক উন্মোচন অনুষ্ঠানও। ২০১৫ সালে বইমেলায় বøগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পর একুশে বইমেলায় জঙ্গি হামলা অথবা হামলার হুমকির ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানান সংশ্লিষ্টরা।

 

নতুন করে জঙ্গি হামলার হুমকিতে সরকার চিন্তিত না হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানান স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। জঙ্গিগোষ্ঠী ‘মাঝেমধ্যে হুমকি দেয়’ মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা এসবে ভয় পাই না।’ ‘তারপরও আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নেইনি। বইমেলা এবং আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’

 

এদিকে জঙ্গি হামলার হুমকি সত্তেও ঢাকা বিশ্ব বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে চলমান একুশে বইমেলায় দর্শক-ক্রেতার ঘাটতি ছিল না। শুক্র ও শনিবার ছুটির দিনে হাজার হাজার মানুষ বইমেলায় গেছেন। তবে বাড়তি নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাকে খারাপ চোখে দেখছেন না।

 

একুশে বইমেলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. কেএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের একটি চিঠি পেয়েছি। ডাক মাধ্যমে পাওয়া চিঠিটির কোনো সঙ্গতি নেই। চিঠির এক জায়গায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ীর হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেউ কিছু বলছে না। এরকম কাজ চলতে থাকলে, করাচির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে।’

 

তিনি বলেন, ‘আবার এর সঙ্গে বইমেলাকে যুক্ত করে বলা হচ্ছে, বই মেলায়ও হামলা করা হবে।’ প্রসঙ্গত, এবার বইমেলার স্লোগান ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট।

 

প্রাপ্ত তথ্যমতে, এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে। এর মধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশুচত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভিলিয়ন ৩৪টি। অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভিলিয়ন আছে ১৪৭টি। সব মিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং মোট ৭০৪টি (প্যাভিলিয়ন বাদে) স্টল।

 

এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version