মুস্তাফিজুর রহমার নাহিদ: দেখতে দেখতে ফুরিয়ে গেল বইমেলার দিন। মাসব্যাপী অমর একুশে বইমেলার পর্দা নামবে আগামীকাল। যে কারণে শেষ সময়ে স্টলগুলোতে বেচাকেনার ধুম লেগেছে। এখন যারা মেলায় আসছেন তার সিংহভাগই ক্রেতা। মেলায় এসে পছন্দের বই কিনে নিয়ে ফিরছেন এসব পাঠক। রোববারও মেলায় এমন চিত্র দেখা যায়। রোববার মেলার ছাব্বিশতম দিন। অন্য দিনের মতো এদিনও যথা সময়ে (বিকেল ৩টা) মেলার গেট খোলা হয়।
এর পরই মেলায় ঢুকে পড়েন পাঠক-দর্শনার্থীরা। সময় গড়ানোর সঙ্গে সঙ্গে ভিড় আরো বাড়তে থাকে। সন্ধ্যার পরই মেলা পুরোদমে জমে ওঠে। উদ্যান এবং একাডেমি উভয় স্থানেই ছিল উপছে পড়া ভিড়।
বিষয়টি নিয়ে কথা বললে মো. সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘সময়ের অভাবে মেলায় আসা হয়নি। আজ স্ত্রী ও বাচ্চাকে নিয়ে এসেছি। এবার মেলার পরিসর আগের চেয়ে বেড়েছে, এটা ভালো দিক। বিশেষ করে বাচ্চাদের জন্য ভালো। জায়গা বেশি থাকায় তারা একটু ছোটাছুটি করতে পারে। এবার শিশু কর্নারটিও খুব সুন্দর হয়েছে। তিনি বলেন, মেলায় এসে কিছু পছন্দের বই কিনেছি। পাশাপাশি মেলায় এসে কিছু পরিচিতজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে। সবমিলে বলব মেলা পরিপূর্ণ হয়েছে।
এদিকে বিষয়টি নিয়ে কথা বললে জয় প্রকাশনীর প্রকাশক আব্দুল মোমিন মন্ডল বলেন, সার্বিক বিবেচনায় বলতে গেলে এবারের মেলা ভালোই বলা যায়। মাঝমাঝি দিনগুলোতে মেলা বেশি জমেছে। এখন শেষ দিকে এসে বেচাকেনা আরো বেড়েছে। এটা ভালো দিক। তিনি বলেন, এবার মেলায় তরুণ লেখকরা দারুণ সাড়া পেয়েছে। তাদের বই ভালো বিক্রি হয়েছে। পাশাপাশি বাচ্চাদের বই অনেক বেশি বিক্রি হয়েছে। আশা করছি বাকি দুইদিনে মেলা আরো জমে যাবে। এদিকে জঙ্গি সংগঠন আনসার আল ইসলামের হামলার হুমকির পর শুক্রবার থেকে অমর একুশে বইমেলায় নিরাপত্তা জোরদার করেছে পুলিশ। গতকালও এ ধারা অব্যাত ছিল।
২০১৫ সালে বইমেলায় ব্লগার অভিজিৎ রায়ের হত্যাকান্ডের পর একুশে বইমেলায় জঙ্গি হামলা অথবা হামলার হুমকির ঘটনা এটাই প্রথম বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা। নতুন করে জঙ্গি হামলার হুমকিতে সরকার চিন্তিত না হলেও নিরাপত্তা জোরদার করা হয়েছে বলে বেনারকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান। জঙ্গিগোষ্ঠী ‘মাঝেমধ্যে হুমকি দেয়’, মন্তব্য করে তিনি বলেন, ‘আমরা এসবে ভয় পাই না।’
‘তারপরও আমরা বিষয়টিকে হালকাভাবে নেইনি। বইমেলা এবং আশপাশের এলাকায় নিরাপত্তা ব্যবস্থা এবং গোয়েন্দা তৎপরতা বৃদ্ধি করা হয়েছে।’ এদিকে জঙ্গি হামলার হুমকি সত্তেও গতকালও চলমান একুশে বইমেলায় দর্শক-ক্রেতার ঘাটতি ছিল না বাড়তি নিরাপত্তা তল্লাশির কারণে কিছুটা বিরক্ত ছিলেন সাধারণ মানুষ। তবে বেশিরভাগ মানুষ পুলিশের বাড়তি নিরাপত্তাকে খারাপ চোখে দেখছেন না।
একুশে বইমেলা সংক্রান্ত কমিটির সদস্য সচিব ডা. কেএম মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, ‘আমরা জঙ্গিগোষ্ঠী আনসার আল ইসলামের একটি চিঠি পেয়েছি। ডাক মাধ্যমে পাওয়া চিঠিটির কোনো সঙ্গতি নেই। চিঠির এক জায়গায় বলা হয়েছে, যাত্রাবাড়ীর হোটেলে অসামাজিক কার্যকলাপ চলছে। কিন্তু পুলিশের পক্ষ থেকে কিছু ব্যবস্থা নেয়া হচ্ছে না। কেউ কিছু বলছে না। এ রকম কাজ চলতে থাকলে, করাচির মতো ভয়াবহ ঘটনা ঘটবে।’
তিনি বলেন, ‘আবার এর সঙ্গে বইমেলাকে যুক্ত করে বলা হয়েছে, বই মেলাতেও হামলা করা হবে।’
প্রসঙ্গত, এবার বইমেলার স্লোগান- ‘পড় বই গড় দেশ, বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ’। মেলার আঙ্গিকে এবার কিছু পরিবর্তন এসেছে। বইয়ের সব প্যাভিলিয়ন-স্টল একাডেমি ও সোহরাওয়ার্দী উদ্যানের মূল অংশে রয়েছে। আর ইঞ্জিনিয়ারিং ইনস্টিটিউশনের অংশে রয়েছে খাবারের দোকান, নামাজের স্থান ও টয়লেট। প্রাপ্ত তথ্য মতে, এবারের বইমেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে মোট ৪৭০টি প্রতিষ্ঠানের স্টল রয়েছে।
এরমধ্যে ৩৬৭টি সাধারণ প্রতিষ্ঠান। শিশু চত্বরে রয়েছে ৬৯টি প্রতিষ্ঠান এবং প্যাভিলিয়ন ৩৪টি।
অন্যদিকে বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে সাধারণ প্রতিষ্ঠান ১০৩টি ও প্যাভিলিয়ন আছে ১৪৭টি। সবমিলিয়ে ৫৭৩টি প্রতিষ্ঠান এবং মোট ৭০৪টি (প্যাভিলিয়ন বাদে) স্টল।
এছাড়া ফুডকোর্ট, নামাজের জায়গা, ওয়াশরুম পর্যাপ্ত পরিমাণে রাখা হয়েছে এবার। নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে বইমেলার চারপাশে সিসিটিভি ক্যামেরা স্থাপন করা হয়েছে। নিয়োজিত রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সর্বস্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য