-->

পতাকা ওড়ার দিন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ
পতাকা ওড়ার দিন

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ১৯৭১ সালের মার্চের প্রতিটি দিন ছিল ঐতিহাসিক। প্রতিটি দিন ছিল ভয়-ভীতি আর প্রত্যাশায় ভরপুর। একদিকে বাঙালি জাতির নতুন দেশের হাতছানি, অন্যদিকে সব হারোনোর ভয়। বিভিন্ন কারণে আজকের দিনটি ইতিহাসে স্থান করে নিয়েছে। আজকের দিনেই প্রথম উত্তোলন করা হয় বাংলাদেশের জাতীয় পতাকা।

 

সিরাজুল আলম খান তার স্মৃতিচারণায় বলেছেন, “ছোট পরিসরে ‘নিউক্লিয়াস’-এর বৈঠক থেকে সিদ্ধান্ত নিলাম, পরের দিন অর্থাৎ ২ মার্চের সভায় বাংলাদেশের নতুন জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হবে। আ স ম আবদুর রবকে ডেকে এ সিদ্ধান্ত জানানো হলো। কথাটা শোনার পর তাকে খুবই উত্তেজিত দেখলাম। সে উত্তেজনা কেবল নতুন একটি পতাকা উত্তোলনের আবেগ থেকে নয়, তার চেয়েও বড় কিছু করার প্রত্যয় যেন তার চোখে-মুখে ফুটে ওঠে।

 

যথারীতি ২ মার্চ কলা ভবনের গাড়ি বারান্দার ছাদ থেকে পতাকা উত্তোলন করা হয়। এই পতাকা উত্তোলনের মধ্য দিয়ে লক্ষাধিক ছাত্র-জনতার সমাবেশে স্বাধীনতা সংগ্রামকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃঢ় মনোভাব প্রকাশ পায়।”

 

তৎকালীন প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক হাসানুল হক ইনু বলেন, এ পতাকা তৈরি হয়েছিল ১৯৭০ সালের ৬ জুন। ছাত্রলীগের ‘নিউক্লিয়াস’-এর সিদ্ধান্ত অনুসারে গঠিত হয়েছিল ‘জয় বাংলা বাহিনী’। এই বাহিনীর দায়িত্বে ছিলেন ইনু। ‘জয় বাংলা বাহিনী’র পক্ষ থেকে ওই বছরের ছয় দফা দিবস উপলক্ষে ৭ জুন ঢাকার পল্টন ময়দানে একটি সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠান করে বঙ্গবন্ধুকে অভিবাদন জানানোর আয়োজন করা হয়। এই বাহিনীর একটি পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

 

৬ জুন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইকবাল হলের (সার্জেন্ট জহুরুল হক হল) ১১৭-১১৮ নম্বর কক্ষে (তৎকালীন ১১৬) ছাত্রলীগ নেতা আ স ম আবদুর রব, শাজাহান সিরাজ, কাজী আরেফ আহমেদ ও উত্তরবঙ্গের ছাত্রলীগ নেতা মার্শাল মনিরুল ইসলাম পতাকা তৈরির পরিকল্পনা নিয়ে বৈঠকে বসেন।

 

ওই বৈঠকেই তারা সবুজ জমিন, লাল বৃত্ত আর হলুদ মানচিত্র দিয়ে পতাকা তৈরির সিদ্ধান্ত নেন। তাদের সিদ্ধান্ত অনুসারে মানচিত্রটি কাগজে আঁকেন ছাত্রনেতা শিব নারায়ণ দাস। সেই নকশা নিয়ে বুয়েটের হলে ফিরে ইনু সঠিক মাপ নির্ধারণ করে রাতে ছাত্রলীগ অফিসের পাশের এক দর্জির দোকানে কাপড়ের পতাকা তৈরি করেন।

 

তিনি আরো জানান, পতাকাটি তার কাছেই রক্ষিত ছিল। ২ মার্চ এ পতাকা লম্বা বাঁশের মাথায় উড়িয়ে শেখ জাহিদ হোসেন ও তরুণ আওয়ামী লীগ নেতা ইদু বিশাল মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সমাবেশে যোগ দেন। মঞ্চে তখন বক্তব্য দিচ্ছিলেন আ স ম আবদুর রব। তাৎক্ষণিকভাবে রব পতাকাটি নিয়ে ওড়ানো শুরু করেন।

 

‘ওই স্বাধীন বাংলার পতাকা’ বলে মানুষজন উচ্ছাস মুখর হয়ে উঠল। পতাকা নিয়ে মিছিল শুরু হয়ে গেল। স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালে পটুয়া কামরুল হাসানের একটি প্রতিবেদনের ভিত্তিতে মানচিত্রটি বাদ দিয়ে বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার ডিজাইন চ‚ড়ান্ত করা হয়। সেই থেকে ২ মার্চ পতাকা উত্তোলন দিবস হিসেবে পালন করা হয়।

 

এদিকে ২ মার্চ, ১৯৭১। জাতীয় পরিষদের অধিবেশন বাতিলের প্রতিবাদে আওয়ামী লীগের আহব্বান ঢাকায় পালিত হয় হরতাল কর্মসূচি। ২ মার্চই বঙ্গবন্ধু প্রকাশ্যে স্বাধীনতা শব্দটি উচ্চারণ করেন।

 

বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘বাংলার স্বতঃস্ফ‚র্ত গণজাগরণ সারাবিশ্বের সামনে প্রমাণ করবে, বাঙালিরা আর উৎপীড়িত হতে চায় না, তারা স্বাধীন দেশের স্বাধীন নাগরিক হিসেবে বাঁচতে চায়, বাংলা আর কারো উপনিবেশ বা বাজার হয়ে থাকবে না।’ শৃঙ্খলার সঙ্গে হরতাল পালনের জন্য বঙ্গবন্ধু স্পষ্ট নির্দেশনা দেন।

 

জাতীয় পরিষদের নির্বাচিত সদস্যরা যে বিমানে করে ঢাকায় আসার কথা ছিল, সেই বিমানে সামরিক সৈন্যদের আনা হচ্ছে বলেও জানান বঙ্গবন্ধু।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version