মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ১৯৭১ সালের উত্তাল মার্চের প্রতিটি দিনই ইতিহাসে গুরুত্ব বহন করে। প্রতিদিনই জন্ম হয় নতুন নতুন অধ্যায়ের। মাসটির শুরু থেকেই সারা দেশ সভা-সমাবেশ ও মিছিলে মিছিলে উত্তাল ছিল। ৬ মার্চ দুপুরে পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান এক বেতার ভাষণে ২৫ মার্চ জাতীয় পরিষদের অধিবেশন আহব্বান করেন। সেই ভাষণে পূর্ব বাংলার আন্দোলনরত জনগণকে তিনি ‘দুষ্কৃতকারী’ আখ্যা দেন।
এদিকে ইয়াহিয়ার বেতারে ভাষণের পর বঙ্গবন্ধুর বাসভবনে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় ও প্রাদেশিক শাখার ওয়ার্কিং কমিটির জরুরি সভা হয়। কয়েক ঘণ্টার সেই রুদ্ধদ্বার বৈঠকে প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণের আলোকে দেশের সর্বশেষ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
এদিন ১১টার দিকে কেন্দ্রীয় কারাগারের গেট ভেঙে ৩৪১ কয়েদি পালিয়ে যান। পালানোর সময় পুলিশের গুলিতে ৭ জন নিহত এবং ৩০ জন আহত হন। রাজশাহীতে মিছিলকারীদের ওপর গুলি চলে, সেখানে অন্তত ১ জন নিহত হন। খুলনায় সংঘর্ষ আর গুলিতে ১৮ জন নিহত, ৮৬ জন আহত হন।
এদিকে ইয়াহিয়া খানের বেতার ভাষণের পরপরই ঢাকা ও নারায়ণগঞ্জে কয়েকটি প্রতিবাদ মিছিল বের হয়। রাওয়ালপিন্ডিতে পিপলস পার্টির চেয়ারম্যান জুলফিকার আলী ভুট্টো প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়ার ভাষণকে স্বাগত জানান। হরতাল পালনে ষষ্ঠ দিনের মতো সর্বস্তরের জনতা নেমে আসে ঢাকার রাস্তায়।
শান্তিপূর্ণ হরতাল পালন শেষে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নির্দেশে বেলা আড়াইটা থেকে বিকেল সাড়ে ৪টা পর্যন্ত বিভিন্ন ব্যাংক এবং যেসব বেসরকারি অফিসে আগে বেতন দেয়া হয়নি, সেসব অফিস খোলা রাখা হয়।
অন্যদিকে লাহোরে কাউন্সিল মুসলিম লীগ নেতা এয়ার মার্শাল নূর খান এক সাক্ষাৎকারে বলেন, শেখ মুজিবুর রহমানের দেশ-শাসনের বৈধ অধিকার রয়েছে। ক্ষমতা হস্তান্তারের সব বাধা অবিলম্বে দূর করতে হবে। প্রেসিডেন্টের বেতার ভাষণে পরিস্থিতি অবনতির জন্য শেখ মুজিবকে দোষারোপ করায় নূর খান দুঃখ প্রকাশ করেন।
প্রেসিডেন্ট ও প্রধান সামরিক আইন প্রশাসক জেনারেল ইয়াহিয়া খান লেফটেন্যান্ট জেনারেল টিক্কা খানকে পূর্ব পাকিস্তানের গভর্নর নিযুক্ত করেন।
এদিকে ছাত্রলীগ ও ডাকসু নেতারা এক বিবৃতিতে ৭ মার্চ তৎকালীন রেসকোর্স ময়দান থেকে সরাসরি বঙ্গবন্ধুর ভাষণ বাংলাদেশের সব বেতার কেন্দ্র থেকে রিলে করার দাবি জানান। এদিকে ভারতের প্রতিরক্ষামন্ত্রী জগজীবন রাম জানান, ভারতের ওপর দিয়ে পাকিস্তানের বিমান চলাচলে নিষেধাজ্ঞা অব্যাহত থাকবে।
আর ৭ মার্চ রেসকোর্স ময়দানে বঙ্গবন্ধু কী ঘোষণা দেবেন, তা জানতে বাংলার মুক্তিকামী জনতা তখন অধীর অপেক্ষায়। এর পরের দিন ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু ঐতিহাসিক ভাষণ দেন।
ভোরের আকাশ/নি
মন্তব্য