-->
শিরোনাম

জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১২তম জন্মবার্ষিকী আজ

নড়াইল প্রতিনিধি
জনপ্রিয় ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১২তম জন্মবার্ষিকী আজ
ঔপন্যাসিক নীহার রঞ্জন গুপ্ত

‘কিরীটি রায়’ চরিত্রখ্যাত স্বনামধন্য ঔপন্যাসিক ও চিকিৎসক নীহার রঞ্জন গুপ্তের ১১২তম জন্মবার্ষিকী আজ।

 

১৯১১ সালের ৬ জুন নড়াইলের লোহাগড়া উপজেলার ইতনা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তিনি। বাবার নাম সত্যরঞ্জন গুপ্ত ও মায়ের নাম লবঙ্গলতা দেবী। নীহার রঞ্জন গুপ্ত গোয়েন্দা ও রহস্য কাহিনী লেখক হিসেবে যেমন জনপ্রিয়, তেমনি চিকিৎসক হিসেবেও স্বনামধন্য। বিখ্যাত গোয়েন্দা চরিত্র ‘কিরীটি রায়’র স্রষ্টা হিসেবে উপমহাদেশে স্মরণীয় হয়ে আছেন তিনি। তার পরিবার ছিল বিখ্যাত কবিরাজ বংশীয়। উইকিপিডিয়াসহ (মুক্ত বিশ্ব কোষ) বিভিন্ন পাঠ্যপুস্তকে নীহার রঞ্জন সম্পর্কে এসব তথ্য পাওয়া যায়। নড়াইলের ইতনা গ্রামে নীহার রঞ্জন গুপ্তের আপনজন কেউ নেই। প্রায় ২০০ বছরের ঐহিত্যবাহী দৃষ্টিনন্দন সুবিশাল বাড়িটি দীর্ঘদিন ধরে ভগ্নদশায় থাকার পর ২০১৭ সালে সংস্কার করা হয়েছে।

 

সুবিশাল নান্দনিক এ বাড়িটির নাম ‘আনন্দ অন্নদা কুটির’। প্রাচীন স্থাপত্যের অপূর্ব নিদর্শন এটি। দোতলা বাড়িটিতে নিচতলায় ৭টি এবং উপরতলায় তিনটি কক্ষ রয়েছে। আর বাসভবনের সামনেই রয়েছে মন্দির। এছাড়া একটি পুকুরসহ গাছপালা রয়েছে। জনশ্রুতি রয়েছে, ওপরতলার একটি কক্ষে নীহার রঞ্জনের জন্ম হয়। বাবা সত্যরঞ্জন গুপ্ত ও মা লবঙ্গলতা দেবীর ঘরে বেড়ে ওঠা সেই কিশোরই দেশ-বিদেশে স্মরণীয়-বরণীয় ব্যক্তিত্ব।

 

বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, চাকরিজীবী বাবা সত্যরঞ্জন গুপ্তের বিভিন্ন কর্মস্থলে অবস্থানকালে নীহার রঞ্জন গাইবান্ধা হাইস্কুলসহ বেশ কয়েকটি স্কুলে পড়ালেখা করেন। ১৯৩০ সালে ভারতের কোন্ননগর হাইস্কুল থেকে ম্যাট্রিকুলেশন (এসএসসি) পাস করেন। পরবর্তী সময়ে কৃষ্ণনগর কলেজ থেকে আইএসসি পাস করে ডাক্তারি পড়ার জন্য কারমাইকেল মেডিকেল কলেজ থেকে ডাক্তারি বিদ্যায় কৃতকার্য হন। এরপর লন্ডন থেকে চর্মরোগ বিষয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি লাভ করেন। ছাত্রাবস্থায় তার বড় বোন বিষাক্ত পোকার কামড়ে মারা যাওয়ায় এ চিকিৎসার স্বপ্ন দেখেন এবং পরবর্তী সময়ে সফলও হন।

 

সাহিত্যকর্ম: নীহাররঞ্জন গুপ্তের সাহিত্যে হাতে খড়ি শৈশব থেকেই। একসময় শান্তিনিকেতনে গিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের আশীর্বাদ গ্রহণসহ তার স্বাক্ষর বা অটোগ্রাফ সংগ্রহ করেন তিনি। ১৬ মতান্তরে ১৮ বছর বয়সে তার প্রথম উপন্যাস ‘রাজকুমার’ মতান্তরে ‘রাজকুমারী’ প্রকাশিত হয়। নীহার রঞ্জন গুপ্ত পেশায় চিকিৎসক হলেও মানব-মানবীর হৃদয়ের কথা তুলে ধরেছেন সুচার ভাবে। ‘রহস্য’ উপন্যাস লেখায় ছিলেন সিদ্ধহস্ত। লন্ডনে অবস্থানকালীন সময়ে গোয়েন্দা গল্প রচনায় আগ্রহী হয়ে ওঠেন তিনি। ভারতে এসে প্রথম গোয়েন্দা উপন্যাস ‘কালোভ্রমর’ রচনা করেন।

 

এতে গোয়েন্দা চরিত্র হিসেবে ‘কিরীটি রায়’কে সংযোজন করেন, যা বাংলা গোয়েন্দা সাহিত্যে এক অনবদ্য সৃষ্টি। পরবর্তীতে ‘কিরীটি রায়’ চরিত্রটি ব্যাপক জনপ্রিয়তা লাভ করে বাঙালি পাঠকমহলে। তিনি বাংলা সাহিত্যে রহস্য কাহিনী রচনার ক্ষেত্রে অপ্রতিদ্ব›দ্বী লেখক ছিলেন। শুধু রহস্য উপন্যাস নয়, তার সামাজিক উপন্যাসগুলোও সুখপাঠ্য, যা পাঠক হৃদয় আকৃষ্ট করে এখনো। এ পর্যন্ত অন্তত ৪৫টি উপন্যাসকে বাংলা ও হিন্দি ভাষায় চলচ্চিত্রায়ণ করা হয়েছে। এছাড়া শিশুদের উপযোগী সাহিত্য পত্রিকা ‘সবুজ সাহিত্য’র সম্পাদকের দায়িত্ব পালন করেন।

 

উপন্যাসের সংখ্যা: নীহার রঞ্জন গুপ্তের উপন্যাসের সংখ্যা দুইশতেরও বেশি। এর মধ্যে প্রকাশিত উপন্যাসগুলো ‘মঙ্গলসূত্র’, ‘উর্বশী সন্ধ্যা’, ‘উল্কা’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘অজ্ঞাতবাস’, ‘অমৃত পাত্রখানি’, ‘ইস্কাবনের টেক্কা’, ‘অশান্ত ঘূর্ণি’, ‘মধুমতি থেকে ভাগীরতী’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘অহল্যাঘুম’, ‘ঝড়’, ‘সেই মরু প্রান্তে’, ‘অপারেশন’, ‘ধূসর গোধূলী’, ‘উত্তর ফালগুনী’, ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’, কলোভ্রমর, ‘ছিন্নপত্র’, ‘কালোহাত’, ‘ঘুম নেই’, ‘পদাবলী কীর্তন’, ‘লালু ভুলু’, ‘কলঙ্ককথা’, ‘হাসপাতাল’, ‘কজললতা’, ‘অস্থি ভাগীরথী তীরে’, ‘কন্যাকুমারী’, ‘সূর্য তপস্যা’, ‘মায়ামৃগ’, ‘ময়ূর মহল’, ‘বাদশা’, ‘রত্রি নিশীথে’, ‘কনকপ্রদীপ’, ‘মেঘকালো’, ‘কাগজের ফুল’, ‘নিরালাপ্রহর’, ‘রাতের গাড়ী’, ‘কন্যাকেশবতী’, ‘নীলতারা’, ‘নূপুর’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘মধুমিতা’, ‘মুখোশ’, ‘রাতের রজনী গন্ধা’ ও ‘কিশোর সাহিত্য সমগ্র’ উল্লেখযোগ্য। চিকিৎসক হিসেবে অতি কর্মচঞ্চল জীবনযাপনের মধ্যেও নীহার রঞ্জন রেখে গেছেন অসংখ্য সাহিত্য সৃষ্টি, যা আপন সত্তার ভাস্কর। নীহার রঞ্জনের অন্তত ৪৫টি উপন্যাস চলচ্চিত্রায়িত হয়েছে। এগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য ‘উল্কা’, ‘বহ্নিশিখা’, ‘লালুভুলু’, ‘হাসপাতাল’, ‘মেঘ কালো’, ‘রাতের রজনীগন্ধা’, ‘নিশিপদ্ম’, ‘নূপুর’, ‘ছিন্নপত্র’, ‘বাদশা’, ‘কোমল গান্ধার’, ‘মায়ামৃগ’, ‘কাজললতা’, ‘কন্যাকুমারী’, ‘কলঙ্কিনী কঙ্কাবতী’ প্রভৃতি।

 

এ চলচ্চিত্রায়িত উপন্যাসগুলো আমাদের চলচ্চিত্র জগৎকে সমৃদ্ধ করেছে। তার কালজয়ী উপন্যাস ‘লালুভুলু’ পাঁচটি ভাষায় চিত্রায়িত হয়েছে। ১৯৮৩ সালে উপন্যাসটি বাংলাদেশেও চিত্রায়িত হয় এবং দর্শকদের কাছে প্রশংসা অর্জন করে।

 

ভোরের আকাশ/নি 

মন্তব্য

Beta version