-->
শিরোনাম

বহুতল ভবন নির্মাণে আইন উপেক্ষা, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

রুদ্র মিজান
বহুতল ভবন নির্মাণে আইন উপেক্ষা, বাড়ছে অগ্নিঝুঁকি

রাজধানীতে অর্ধেকেরও বেশি বহুতল ভবন ঝুঁকিপূর্ণ। আগুন নেভানোর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেই এসব ভবনে। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলে নিয়ন্ত্রণ করতে বেগ পেতে হয় ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের। অনেক ক্ষেত্রেই ঘটে প্রাণহানি। ভস্মীভূত হয় বিপুল সম্পদ। অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ উপেক্ষা করেই গড়ে উঠেছে এসব ভবন।

ঝুঁকিপূর্ণ ভবনগুলোর মালিকদের বছরের পর বছর নোটিশ দিয়ে যাচ্ছে ফায়ার সার্ভিস। কোনো কোনো ভবনে ‘ঝুঁকিপূর্ণ’ লেখা নোটিশও টানিয়ে দেওয়া হয়। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছে না। এসব বহুতল ভবনে হাজার হাজার মানুষ প্রতিদিন কাজ করছেন। আবাসিক ভবনগুলোয় বিভিন্ন পরিবার বসবাস করছে।

২০১৯ সালে চকবাজারের ওয়াহিদ ম্যানশনে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন প্রায় ৭৮ জন। তার আগে ২০১০ সালের ৩ জুন পুরান ঢাকার নিমতলীর কেমিক্যালের গুদামে অগ্নিকাণ্ডে নিহত হন ১২৪ জন। এভাবে প্রায়ই অগ্নিকাণ্ডে প্রাণ হারাচ্ছেন মানুষ। এছাড়া প্রায়ই ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটছে।

বনানীর এফআর টাওয়ার থেকে সম্প্রতি বাংলামোটরের রাহাত টাওয়ার, গ্রীন রোডের আরএস সেন্টার, কাপ্তানবাজার ও শ্যামপুরের আলম গার্মেন্টের আগুন অন্যতম।

রাজউক সূত্র মতে, রাজধানীতে প্রায় ৩০ হাজার বহুতল ভবন রয়েছে। ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা গেছে, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের তালিকায় সবেচেয়ে বেশি রয়েছে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান। বিভিন্ন আবাসিক বাণিজ্যিক এলাকায় যত্রতত্রভাবে গড়ে উঠেছে স্কুল-কলেজ ও প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়। এসব ভবনের ৮৯.২৮ শতাংশই ঝুঁকিপূর্ণ।

তারপরই ঝুঁকিপূর্ণ তালিকায় রয়েছে আবাসিক হোটেলগুলো। রাজধানীর ৭৬.৩১ শতাংশ হোটেল, ৬৮.৫০ শতাংশ ব্যাংক, ৫৭.৫১ শতাংশ হাসপাতাল এবং ৫৩.৮৮ শতাংশ শপিংমল ঝুঁকিপূর্ণ। ফায়ার সার্ভিস বলছে, নিয়মনীতির তোয়াক্কা না করেই গড়ে উঠেছে এসব ভবন।

 

মতিঝিল, খিলগাঁও, পল্টন, সেগুনবাগিচা ও মোহাম্মদপুরের বিভিন্ন ভবন ঘুরে দেখা গেছে, বেশিরভাগ ভবনের বেজমেন্টে নেই পর্যাপ্ত ভেন্টিলেশন। মোহাম্মদপুর ও মতিঝিল এলাকায় দেখা গেছে, অনেক ভবনের বেজমেন্ট ব্যবহৃত হচ্ছে গোডাউন হিসেবে। বেশিরভাগ বেজমেন্টে ব্যবহার করা হচ্ছে জেনারেটর।

বেজমেন্টে প্রতি ১০০ বর্গফুটের জন্য স্বয়ংক্রিয় স্প্রিকলার বা পানি ছিটানোর স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা থাকার নিয়ম থাকলেও তা নেই প্রায় ৯০ শতাংশ ভবনেই। গ্রাউন্ডে ফ্লোর থেকে সিঁড়ি শুরু হয়ে শেষ হবে ছাদে। পুরো সিঁড়ি থাকবে উন্মুক্ত।

বহুতল ভবনে অন্তত দুটি প্রশস্ত সিঁড়ি থাকবে। গ্রাউন্ডে ফ্লোরে বিদ্যুৎ সাবস্টেশন, ফায়ার কন্ট্রোলরুম ও ফায়ার রেটেড থাকার কথা আইনে উল্লেখ করা থাকলেও তা মানছেন না বেশিরভাগ ভবন মালিক।

ফায়ার সার্ভিস সূত্র জানায়, ভবনের প্রতিটি ফ্লোরে একটি, আয়তন ১০০০ বর্গফুটের বেশি হলে দুটি অগ্নিনির্বাপণ যন্ত্র বা এক্সটিংগুইশার রাখতে হবে। প্রতি ফ্লোরে স্মোকহিট মাল্টিডিটেক্টর থাকতে হবে। তাছাড়া সেফটি লবি ও এতে ফায়ার রেটেড ডোর রাখার কথা বলা হয়েছে।

বহুতল বাণিজ্যিক ভবনে ওভারহেড ওয়াটার রিজার্ভারের আয়তন ও ক্যাপাসিটি উল্লেখ থাকতে হবে। ভবনের সামনে কমপক্ষে ৯ মিটার রাস্তা এবং চারপাশে ৪.৫ মিটার রাস্তা বা ফাঁকা জায়গা থাকতে হবে।

ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স অধিদপ্তরের উপপরিচালক দিনমনি শর্মা বলেন, অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন মেনে ভবন নির্মাণ করা হলে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা কমে যেত। অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটলেও তুলনামূলত কম সময়ে তা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব হতো।

কিন্তু রাজধানীর অর্ধেকেরও বেশি ভবন মালিক এসব নিয়ম নীতি মানছেন না। যে কারণে প্রায়াই অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। ফায়ার সার্ভিস কর্মীদের আগুন নিয়ন্ত্রণ করতে তখন বেগ পোহাতে হয়।

এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ঝুঁকিপূর্ণ ভবনের ক্ষেত্রে ফায়ার সার্ভিস নোটিশ দিয়ে সতর্ক করছে। প্রতি বছর শত শত নোটিশ দেওয়া হয়। কিন্তু নোটিশে সমাধান হচ্ছে না। ফায়ার সার্ভিস এ বিষয়ে এখনো মামলা-মোকদ্দমায় যায়নি বলে জানান তিনি।

অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন-২০০৩ অনুসারে ছয়তলার ওপরে সাততলা থেকে বহুতল ভবন বলা হয়। অন্যদিকে রাজউকের ইমারত নির্মাণ বিধিমালা অনুসারে, ১০ তলা বা ৩৩ মিটারের বেশি ভবনকে বহুতল বলা হয়।

এ অসঙ্গতির সুযোগ নিয়ে অগ্নিপ্রতিরোধ ও নির্বাপণ আইন উপেক্ষা করেই অগ্নিনিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়াই গড়ে উঠছে ৭, ৮ ও ৯ তলা ভবন। এসব ভবনের মালিকরা ফায়ার সার্ভিসে দ্বারস্থ না হয়েই রাজউকের অনুমতি নিয়ে অগ্নিনিরাপত্তাহীন ভবন নির্মাণ করছেন।

এ বিষয়ে দিনমনি শর্মা বলেন, ‘আমরা ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে বিষয়টি অবহিত করেছি।’

মন্তব্য

Beta version