এক জোড়া পাখির দাম ৪ লাখ টাকা! শুনে অনেকেই হয়তো অবাক হবেন। এমনই এক জোড়া পাখির সন্ধ্যান পাওয়া গেছে রাজধানীর কাঁটাবনে। নীল রঙের ডানা ও লেজ, ঘন নীল চিবুক, নিচের দিকে সোনালি রং এবং মাথার দিকে সবুজাভা রঙে সজ্জিত, বাঁকানো কালো ঠোঁট ও নজরকাড়া চোখের এ পাখির সৌন্দর্য সবার দৃষ্টি আকর্ষণ করাই স্বাভাবিক। দৃষ্টিনন্দন এ পাখিকে অনেকে ‘স্বপ্নের পাখি’ বা ‘ড্রিম বার্ড’ও বলে থাকে। নজরকাড়া দামি এ পাখি হলো পৃথিবীর বিরল প্রজাতির ‘ব্লু গোল্ড ম্যাকাও’। যার আবাসস্থল বিশ্বের বৃহত্তম চিরহরিৎ বন অ্যামাজনে। কিন্তু ঢাকার কাঁটাবন মার্কেটে অবস্থিত ‘বার্ডস যু’ পাখিবিতানে গেলেই দেখা মিলবে পাখি দুটির।
প্রশ্ন ওঠা স্বাভাবিক- এত দাম কেন এ পাখির? জানতে চাইলে দোকান মালিক শিমুল বলেন, পোষ্য পাখিদের মধ্যে ম্যাকাও হলো সবচেয়ে বড় আর জনপ্রিয় পাখি। বিরল প্রজাতির এ পাখি পৃথিবীর মধ্যে শুধু অ্যামাজন বনেই পাওয়া যায়। বিরল প্রজাতির পাখি বলে খুব কমসংখ্যক পাখিই বাজারে পাওয়া যায়। আর বাংলাদেশে তো নেই বললেই চলে। বাইরে থেকে আমদানি করতেও অনেক খরচ হয়, তাই দামও বেশি বলে জানান তিনি। পাখির চরিত্র সম্পর্কে তিনি বলেন, ম্যাকাও খুবই বুদ্ধিমান পাখি। এরা সহজেই কথা বলতে পারে। এদের চরিত্রের মূল আকর্ষণই হলো এদের কথা বলতে পারার ক্ষমতা। আর যেহেতু বুদ্ধিমান, তাই বিভিন্ন আদব-কায়দাও সহজেই রপ্ত করে ফেলে।
ঠিকভাবে প্রশিক্ষণ দেওয়া সম্ভব হলে এরা নাচ, ডিগবাজি খাওয়া এগুলো সহজেই শিখে ফেলে। শিশুদের মতো এদের বুদ্ধি। আর একটা মজার বিষয় হলো, ম্যাকাও ভালোভাবে মানুষের কণ্ঠ নকল করতে পারে। এছাড়া এ পাখি বাঁচেও দীর্ঘদিন। প্রাপ্তবয়স্ক একটি স্ত্রী পাখি সাধারণত দুই থেকে তিনটি ডিম পাড়ে। প্রায় ২৮ দিন স্ত্রী পাখিটি ডিমে তা দিয়ে বাচ্চা তৈরি করে। পাখির খাদ্যের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, সূর্যমুখীর বীজ, বিভিন্ন ধরনের ফল, সবজির মধ্যে টমেটো ও গাজর এরা বেশি খায়। এছাড়া বাজারে বিভিন্ন প্যাকেটজাত খাবার পাওয়া যায়।
পাখিটির ক্রেতা কারাÑ জানতে চাইলে শিমুল জানান, পাখিটির দাম বেশি হওয়ায় সহজে এটি কেউ কিনতে পারে না। শৌখিন মানুষ মূলত এসব পাখির ক্রেতা। শুধু ধনী ব্যক্তিরাই এ পাখি কিনে থাকেন। এছাড়া পাখিটি পালন করতেও অনেক খরচ হয়। বছরে সর্বোচ্চ এক থেকে দুই জোড়া পাখি বিক্রি করেন তিনি। বন্ধুসুলভ এ পাখি খেলতেও ভালোবাসে। খেলার জন্য এদের নানা ধরনের খেলনা দিতে পারেন। বিশেষ করে কাঠের খেলনা দিতে হয়। প্লাস্টিকের খেলনা এরা চিবিয়ে নষ্ট করে ফেলে। কারণ এ পাখি চিবাতে খুব পছন্দ করে।
বাড়িতে প্রথম আনার পর থেকেই ম্যাকাওকে সঠিকভাবে ট্রেনিং দেওয়া প্রয়োজন। ঠিকঠাক ট্রেনিং পেলে ম্যাকাও খুব ভালো বন্ধু হয়ে ওঠে। পাখিটি অনেকেই খাঁচায় পোষেন, এজন্য প্রয়োজন বড় খাঁচা। তবে পায়ে চেইন দিয়েও ঘরে রাখা যায় পাখিটিকে। এ প্রজাতির পাখি সাধারণত ৩০-৪০ বছর বাঁচে। এদের প্রাপ্তবয়স্ক হতে সময় লাগে ৬-৭ বছর। এদের দৈর্ঘ্যে ৭৬ থেকে ৮৬ সেন্টিমিটার, অর্থাৎ ৩০ থেকে ৩৪ ইঞ্চি হয়ে থাকে। গড় ওজন ৯০০-১৫০০ গ্রাম।
মন্তব্য