চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচনে ১৯টি পদের মধ্যে মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ প্যানেল থেকে সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ ১০ জন বিজয়ী হয়েছেন।
বৃহস্পতিবারের (১০ ফেব্রুয়ারি) এই নির্বাচনে সভাপতি হয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী আবু মোহাম্মদ হাশেম। সাধারণ সম্পাদক পদে এবারসহ টানা তিনবার জয়লাভ করে হ্যাটট্রিক করেছেন এএইচএম জিয়াউদ্দিন।
নির্বাচনে বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদের প্যানেল থেকে সিনিয়র সহ-সভাপতি ও সহ-সাধারণ সম্পাদকসহ নয়জন জয় পেয়েছেন। সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে মো. শফিক উল্লাহ এবং সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে এরশাদুর রহমান রিটু জয় লাভ করেছেন।
গত বছর সমিতির নির্বাচনে সভাপতিসহ ছয়টি পদ পেয়েছিল বিএনপি সমর্থিত আইনজীবী ঐক্য পরিষদ। আর সাধারণ সম্পাদক পদসহ ১৩টি পদ পেয়েছিল আওয়ামী লীগ সমর্থিত সম্মিলিত আইনজীবী সমন্বয় পরিষদ।
গতবার সভাপতি হয়েছিলেন বিএনপিপন্থী আইনজীবী এনামুল হক এবং সাধারণ সম্পাদক হয়েছিলেন আওয়ামী লীগপন্থী আইনজীবী জিয়াউদ্দিন।
উৎসবমুখর পরিবেশে বৃহস্পতিবার সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হয়। নির্বাচনে ১৯টি পদের বিপরীতে আওয়ামী লীগপন্থী ও বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে ৩৯ জন অংশ নেন।
নির্বাচনে সাড়ে পাঁচ হাজার ভোটারের মধ্যে ভোট দেন চার হাজার ১৯৩ জন। ভোটগ্রহণ শেষে গভীর রাত পর্যন্ত গণনা চলে। পরে ফল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার রেজাউল করিম চৌধুরী।
ঘোষিত ফল অনুযায়ী আগামী এক বছরের জন্য চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী আবু মোহাম্মদ হাশেম। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৯৩ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপি সমর্থিত প্যানেলের প্রার্থী নাজিম উদ্দিন চৌধুরী পেয়েছেন দুই হাজার ৫৮ ভোট।
সাধারণ সম্পাদক পদে জয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের প্রার্থী এএইচএম জিয়াউদ্দিন। তিনি এবারসহ টানা তিনবার সাধারণ সম্পাদক পদে বিজয়ী হলেন। তিনি পেয়েছেন এক হাজার ৯৫৭ ভোট। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী প্যানেলের আবদুস সাত্তার সরওয়ার পেয়েছেন এক হাজার ৬২৬ ভোট ও স্বতন্ত্র প্রার্থী কিশোর কুমার দাস পেয়েছেন ৫৬২ ভোট।
সিনিয়র সহ-সভাপতি পদে বিএনপিপন্থী প্যানেলের প্রার্থী মো. শফিক উল্লাহ দুই হাজার ২৫৮ ভোট পেয়ে নির্বাচিত হয়েছেন। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের মো. সেকান্দার চৌধুরী পেয়েছেন এক হাজার ৮৭৯ ভোট।
সহ-সভাপতি পদে দুই হাজার ২৬১ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের মো. আজিজুদ্দিন হায়দার। নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী প্যানেলের মো. কামরুল হাসান নাজিম পেয়েছেন এক হাজার ৮৪৬ ভোট।
সহ-সাধারণ সম্পাদক পদে দুই হাজার ৫৪৭ ভোট পেয়ে জয়ী হয়েছেন বিএনপিপন্থী প্যানেলের এরশাদুর রহমান রিটু। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের মো. ওমর ফারুক শিবলী পেয়েছেন এক হাজার ৬৫২ ভোট।
অর্থ সম্পাদক পদে জয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের সালাউদ্দিন মনসুর রিমু। তিনি পেয়েছেন দুই হাজার ৬৭৪ ভোট। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী প্যানেলের আশরাফুল হক আনসারি পেয়েছেন এক হাজার ৪৬০ ভোট।
পাঠাগার সম্পাদক পদে দুই হাজার ৪০৪ ভোট পেয়ে জয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের মো. জাহিদুল ইসলাম চৌধুরী। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী প্যানেলের আহমেদ কবির পেয়েছেন এক হাজার ৭২৩ ভোট।
সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া সম্পাদক পদে জয়ী হয়েছেন বিএনপিপন্থী প্যানেলের লাইলা নুর। তিনি ভোট পেয়েছেন দুই হাজার ১৫৬টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের তানজিলা মান্নান যুথি পেয়েছেন এক হাজার ৯৫৩ ভোট।
তথ্য ও প্রযুক্তি সম্পাদক পদে জয় লাভ করেছেন আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেলের মো. মেজবাহ উদ্দিন দুয়েল। তিনি ভোট পেয়েছেন দুই হাজার ৩৭১টি। তার নিকটতম প্রতিদ্বন্দ্বী বিএনপিপন্থী প্যানেলের অলি আহমেদ পেয়েছেন এক হাজার ৭৬৭ ভোট।
সদস্য পদে আওয়ামী লীগপন্থী প্যানেল থেকে যারা জয়ী হয়েছেন তারা হলেন- এএনএম রুকনুজ্জামান মুন্না, শ্যামল চৌধুরী, সেলিনা আকতার ও মো. খোরশেদ কামাল।
সদস্য পদে বিএনপিপন্থী প্যানেল থেকে জয় পেয়েছেন মো. আব্দুল্লাহ আল মামুন, আইনুল কামাল, বিলকিছ আরা মিতু, মিনহাজ উদ্দিন, মো. তোহিদুল বারি চৌধুরী ও তৌহিদুল ইসলাম।
প্রতি বছর ১০ ফেব্রুয়ারি চট্টগ্রাম জেলা আইনজীবী সমিতির নির্বাচন হওয়ার রেওয়াজ দীর্ঘদিনের। অনেকদিন ধরেই এই ধারাবাহিকতা বজায় রাখতে সক্ষম হয়েছে চট্টগ্রামের আইনজীবীদের ঐতিহ্যবাহী সংগঠনটি। এবারও এর ব্যতিক্রম হয়নি।
মন্তব্য