-->

ফুটপাত তুমি কার!

পথচারী না কি হকারের

প্রণব কর্মকার
ফুটপাত তুমি কার!
রাজধানীর এক ফুটপাতে ক্রেতা-বিক্রেতা। ছবি- ভোরের আকাশ

ঢাকার সিংহভাগ হাইওয়ে সড়কের দুই ধারের ফুটপাত হকারদের দখলে। ভ্রাম্যমাণ ও অস্থায়ী হকারদের দখলে পুরো ফুটপাত। এই অবস্থা দীর্ঘদিনের। ফুটপাতগুলোতে পথচারীদের হাঁটার জায়গা নেই বললেই চলে। দেখে বোঝার উপায় নেই রাজধানী ঢাকার ফুটপাত আসলে কার? পথচারীর না কি হকারদের?

রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এলাকা ফার্মগেট, গুলিস্তান, মতিঝিল, মিরপুর, নীলক্ষেত, নিউমার্কেটসহ বিভিন্ন স্থানের ফুটপাত দিয়ে পায়ে হাঁটা যেন এক যুদ্ধ। পথচারীদের নির্বিঘ্নে হাঁটাচলা করা বড্ড মুশকির। ফলে ফুটপাত হয়ে উঠেছে ভোগান্তির অপর নাম।

নগরীর ব্যস্ততম এলাকা পল্টন থেকে মতিঝিল যাওয়ার পথে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররম মার্কেটের সামনে একটি ফুটওভার ব্রিজ থাকলেও তা দিয়ে রাস্তা পার হওয়া প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়েছে। কারণ ফুটপাতগুলোর মতো ব্রিজগুলোও চলে গেছে হকার এবং ভাসমান মানুষের দখলে। দিনে হকারদের ভিড়ে ব্রিজের ওপর দিয়ে হাঁটাচলা মুশকিল। একইভাবে রাতে ভাসমান মানুষেরা এখানে অবস্থান করে। থাকে ছিনতাইকারীদের আনাগোনা। ফলে সাধারণ মানুষ ভয়ে ব্রিজগুলো ব্যবহার করেন না।

এদিকে উচ্ছেদ অভিযান অব্যাহত থাকলেও রাস্তার দু-ধারের ফুটপাতে দেখা মেলে মনোহারি দোকান, বাহারি রকমের ফল, কার্পেট, কম্বল, বই, স্টেশনারি, পোশাকসহ বিভিন্ন জিনিসের অস্থায়ী দোকান। বলতে গেলে রঙের এই শহরে এমন কিছু নেই ফুটপাতে যার দেখা মেলে না। এসব দোকানের সামনের ক্রেতাদের ভিড় ঠেলে গন্তব্যে যেতে কয়েক শ মিটার পাড়ি দেওয়া কয়েক কিলোমিটারের সমান মনে হয়। হাউস বিল্ডিং ফাইন্যান্স করপোরেশন, মুক্তি ভবনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের সামনের অংশের ফুটপাতে হকার ও ব্যবসায়ীদের উৎপাত কিছুটা কম। কারণ এসব প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকেই নজরদারি রাখা হয়।

অন্যদিকে গুলিস্তান, মতিঝিল, মগবাজার, ফার্মগেট, নিউমার্কেট, নীলক্ষেতÑ সব এলাকার ফুটপাতের প্রায় পুরোটাই ভিন্ন। এসব এলাকার ফুটপাতে সারাক্ষণ ভিড় লেগেই থাকে। পাশাপাশি এসব এলাকায় দোকানের সঙ্গে ভ্রাম্যমাণ ভিক্ষুক ও টোকাইদের উপদ্রবেও অতিষ্ঠ পথচারীরা। একইভাবে রাজধানীর ব্যস্ততম প্রায় সব এলাকার ফুটপাতে হকারদের এখন রমরমা ব্যবসা।

ভুক্তভোগী পথচারী পলাশের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, ঢাকা শহরের বেশির ভাগ এলাকার ফুটপাত ব্যবসায়ীদের দখলে। হকার ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ফুটপাতেই ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছেন। এতে করে বেশি ভোগান্তির শিকার হন পথচারীরা। বছরের পর বছর এই ভোগান্তি চললেও সিটি করপোরেশনের স্থায়ী কোনো উদ্যোগ দেখি না।

একই প্রসঙ্গে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কর্মরত এক পথচারী রিয়াদুল ইসলাম বলেন, ফুটপাত দিয়ে চলাচলই খুব কঠিন হয়ে পড়েছে। যেখানে সড়কে দুর্ঘটনার শিকার হতে হয়, সেখানে ফুটপাতেরও যদি এ অবস্থা হয়, তাহলে সেটা কোনোভাবেই মানা যায় না। চলার পথে হকার-ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে ক্রেতাদের যে ভিড়, এর মধ্যে চলাচল করা সত্যিই কঠিন। একজন পথচারী হিসেবে চাই, অবশ্যই ফুটপাত দখলমুক্ত করা হোক। পৃথিবীর অন্য কোনো দেশে এমন দেখা যায় বলে আমার মনে হয় না। কর্তৃপক্ষের এই বিষয়টিতে গুরুত্ব দেওয়া দরকার।

বিশ্ববিদ্যালয়পড়ুয়া শীক্ষার্থী আরমান বলেন, ফুটপাত যে যার মতো করে দখল করেছে। পথচারীদের ভোগান্তি দেখার সময় কারো নেই। ঝুঁকি নিয়েই চলতে হয়। স্থায়ীভাবে কার্যকর পদক্ষেপ না নিলে ফুটপাত কখনোই পথচারীদের ব্যবহারের উপযোগী হবে না।

আরো কয়েকজন পথচারীর সঙ্গে কথা হয়। তারা বলেন, এ দুর্ভোগ যেন শেষ হওয়ার নয়। উচ্ছেদ অভিযান চললেও ফের একই চিত্র দেখা যায়। আসলে ফুটপাত দখলমুক্ত রাখতে টেকসই কোনো ব্যবস্থা নেওয়া হয় না বিধায় এ ভোগান্তি চলতেই থাকে।

ফুটপাতে ব্যবসা করে সংসার চালান আতিয়ার রহমান। ফুটপাত থেকে তুলে দিলে আবার পেটের দায়ে ফুটপাতে এসেই বসেন বলে স্বীকার করে তিনি বলেন, আমরাও তো বুঝি ফুটপাতে চলতে মানুষের কষ্ট হয়। আমরাই বা কী করব, আমরা কোথায় যাব? সরকার আমাদের কোথাও ব্যবসা করার ব্যবস্থা করে দিলে আমরা ফুটপাতে বসতাম না।

একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের নিরাপত্তাকর্মী আকবর আলী বলেন, বাড়তি আয়ের জন্য চাকরি শেষ করে ওজন মাপার মেশিন নিয়ে ফুটপাতে বসি। ফুটপাতে তো আমারও চলতে কষ্ট হয়। কিন্তু হকার ব্যবসায়ীরা নিরুপায় হয়েই ফুটপাতে ব্যবসা করেন।

মন্তব্য

Beta version