রাজশাহীর সাঁওতাল কৃষক অভিনাথ ও রবি মার্ডীর আত্মহত্যায় প্ররোচনার অভিযোগ তুলে ঘটনায় জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শান্তিসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে প্রতিবাদ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছে ঢাকাস্থ উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, আদিবাসী সাঁওতাল সমবায় ফেলোশিপ সমিতি।
আজ শুক্রবার (৮ এপ্রিল) জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধনে উপস্থিত ছিলেন আদিবাসী সাঁওতাল সমবায় ফেলোশিপের সভাপতি যতীন মারাতী, উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরামের সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট প্রভাত টুকু, জন উদ্যোগের সদস্য সচিব তারিক হোসাইন, সিপিবির কেন্দ্রীয় সদস্য লুনা রুনা, শেফালী বিশ্বাস, আদিবাসী নেতা মেষ্টী সেদেক হাঁসদা, প্রশ্ন টু থিওফিল হাঁসদা, সামুয়েল হাঁসদা, রমেশ প্রমুখ।
ধানের জমিতে সেচের পানি না পাওয়ায় রাজশাহীর গোদাগাড়ী উপজেলার নিমঘটু গ্রামের ওই দুই সাঁওতাল কৃষকের আত্মহত্যার প্ররোচনা মামলার একমাত্র আসামি সাখাওয়াত হোসেনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঘটনার ১১ দিন পর গত ২ এপ্রিল পুলিশ তাকে গ্রেপ্তার করে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, ধান ক্ষেতে সেচের পানি না পেয়ে ২৩ মার্চ বিকেলে কৃষক অভিনাথ মার্ডি ও তার চাচাতো ভাই রবি মার্ডি বিষপান করেন। ওইদিন রাত ৯টার দিকে অভিনাথ মার্ডি বাড়িতেই মারা যান। রাতেই রবি মার্ডিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় ২৫ মার্চ রাত ৮টার দিকে মারা যান তিনি। এ ঘটনায় অভিনাথের স্ত্রী রোজিনা হেমরন বাদী হয়ে আত্মহত্যার প্ররোচনার মামলা করেন। মামলায় গভীর নলকূপের অপারেটর সাখাওয়াত হোসেনকে প্রধান আসামি করা হয়।
আলোচিত এ ঘটনায় জড়িত সবার দৃষ্টান্তমূলক শাস্তিসহ পাঁচ দফা দাবি আদায়ে শুক্রবার রাজধানীর জাতীয় প্রেসক্লাবে মানববন্ধন করে ঢাকাস্থ উত্তরবঙ্গ আদিবাসী ফোরাম, আদিবাসী সাঁওতাল সমবায় ফেলোশিপ সমিতি।
তাদের অন্য দাবিগুলোর মধ্যে আছে- অভিনাথ ও রবি মার্ডীর প্রত্যেক পরিবারকে ৫০ লক্ষ টাকা করে ক্ষতিপূরণ, আদিবাসী কৃষকদের অন্য কৃষকদের মতো সমঅধিকার এবং আদিবাসীদের ভূমি, জলমহল ও জীবনের নিরাপত্তা দেওয়া। সমতল অঞ্চলের আদিবাসীদের জন্য পৃথক ভূমি কমিশন গঠনের দাবিও জানিয়েছেন তারা।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, বাংলাদেশ একসময় খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ ছিল না। কৃষকের ঘামে, চেষ্টায় বাংলাদেশ আজকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়েছে। কৃষকেরা দেশের জন্য কী পরিমাণ অবদান রাখে, সেটা করোনার দুই বছরে তারা দেখিয়েছেন। তবে কৃষকদের দিনের পর দিন অবহেলা করা হচ্ছে। আর এই অবহেলা ও নিপীড়নের ক্ষেত্রে আদিবাসী কৃষকেরাই সবচেয়ে এগিয়ে।
গোদাগাড়ীতে দুই কৃষক কম দুঃখ-কষ্ট পেয়ে আত্মহুতি দেননি। বরেন্দ্র বহুমুখী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (বিএমডিএ)'র অব্যবস্থাপনাও তাদের হত্যার দিকে ঠেলে দিয়েছে। কৃষকেরা নির্দিষ্ট পরিমাণ সেচ খরচ দিয়েই জমিতে পানি দিতে পারে। তারপরও তাদের অবহেলা রয়েই গেছে। দুই কৃষকের মৃত্যুতে তদন্ত কমিটি হয়েছে। সেই কমিটিও দায়সারা তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটিতে কোনো আদিবাসী সদস্যকে রাখা হয়নি। এটাও আদিবাসীদের প্রতি এক ধরনের অবহেলা। আদিবাসী জাতিগোষ্ঠীর কোনো সদস্যকে কমিটিতে রাখা হলে ভুক্তভোগীরা নির্ভয়ে তাদের মনের কষ্টের কথা জানাতে পারত।
বক্তারা বলেন, বর্তমান ক্ষমতাসীন সরকারকে স্মরণ করাতে চাই, আদিবাসী, উপজাতি, ক্ষুদ্রজাতি সত্ত্বার মানুষদের দেওয়া নির্বাচনি ইশতেহারের যে প্রতিশ্রুতি নিয়ে আদিবাসীদের ভোট নিয়েছেন তার বাস্তবায়ন চাই।
মন্তব্য